স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সোনাগাজীর মাদরাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফিকে পুড়িয়ে হত্যার অন্যতম পরিকল্পনাকারী ও এজহারভুক্ত আসামি হাফেজ আব্দুল কাদের মানিককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ ব্যুরো ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)। বুধবার রাজধানী ঢাকার হোসনী দালান এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। এর আগে আসামি হাফেজ আব্দুল কাদের মানিক পরিবার নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালায়।
আব্দুল কাদেরকে গ্রামের লোকজন মানিক নামেই চিনত। সে আমিরাবাদ ইউনিয়নের পূর্বসফরপুর গ্রামের মনছুর খান পাঠান বাড়ির আবুল কাসেমের ছেলে। তার বাবা সাহেবের হাটের চা দোকানি। ৪ ভাই তিন বোনের মধ্যে হাফেজ আবদুল কাদের ৫ নম্বর। তার বাবা স্থানীয় আওয়ামী লীগের একনিষ্ঠ কর্মী হলেও হাফেজ আবদুল কাদের শিবিরের রাজনীতিতে সরাসরি জড়িত বলে জানা যায়।
কাদের সোনাগাজী ইসলামীয়া ফাজিল ডিগ্রি মাদরাসার হেফজ বিভাগের শিক্ষক ও ফাজিল দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র। তিনি অধ্যক্ষ সিরাজের অনুগত হিসেবে মাদ্রাসার হোস্টেলে থাকতেন।
নুসরাত হত্যাকাণ্ডে নূর উদ্দিন ও শাহাদাত হোসেন শামীম তাদের স্বীকারোক্তিতে আবদুল কাদের জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। ঘটনার দিন হাফেজ আব্দুল কাদের গেট পাহারার দায়িত্বে ছিল এবং ঘটনার আগের দিন ৫ এপ্রিল খুনের পরিকল্পনার বৈঠকে ছিল মানিক। গ্রেফতারকৃত আসামিরা তার হোস্টেলে বৈঠক হওয়ার কথা জানিয়েছেন।
গত ৭ এপ্রিল মালামাল নিয়ে হোস্টেল ত্যাগ করে হাফেজ আব্দুল কাদের। পরদিন ৮ এপ্রিল তার গ্রামের বাড়িতে ছিল। মামলাটি পিবিআইতে স্থানান্তরের খবর জানতে পেরে বাড়ি ত্যাগ করে আত্মগোপনে চলে যায় মানিক।
এরপর ১২ এপ্রিল ঘটনার রহস্য উদঘাটনের পর আব্দুল কাদেরের নাম আসায় ওই দিন বিকেলেই বসতঘরে তালা লাগিয়ে পালিয়ে যান কাদেরের বাবা-মা ও পরিবারের সব সদস্যরা। তার এক ভাই দিনমজুর, একভাই মালদ্বীপ ও এক ভাই ঢাকায় একটি কারখানায় চাকরি করেন। তিন বোন বিবাহিত। কাদের অবিবাহিত। পিবিআই এজাহারভুক্ত ৮ জন আসামির মধ্যে ৭ আসামিসহ ১৬ জন সন্দেহভাজন আসামিকে গ্রেফতার করা হয়। এবার কাদেরকেও গ্রেফতার করা হলো।
প্রসঙ্গত, গত ২৭ মার্চ ফেনীর সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদরাসার অধ্যক্ষ মাওলানা সিরাজ উদ দৌলা রাফিকে নিজ কক্ষে ডেকে নিয়ে যৌন হয়রানি করেন বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনায় মেয়েটির মা বাদী হয়ে মামলা করেন। পরে ৬ এপ্রিল সকালে ওই শিক্ষার্থী আলিম পরীক্ষা দিতে সোনাগাজী ইসলামিয়া সিনিয়র ফাজিল মাদ্রাসায় যান। তার বান্ধবী নিশাতকে ছাদের ওপর কেউ মারধর করছে, এমন সংবাদে তিনি ছাদে যান। সেখানে বোরকাপরা ৪-৫ জন তাকে অধ্যক্ষ সিরাজ উদ দৌলার বিরুদ্ধে করা শ্লীলতাহানির মামলা তুলে নিতে চাপ দেয়। অস্বীকৃতি জানালে তারা রাফির গায়ে কেরোসিন ঢেলে আগুন দিয়ে পালিয়ে যায়।
এরপর ১০ এপ্রিল রাত সাড়ে ৯টার দিকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইউনিটের আইসিইউতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান রাফি।