সবাইকে টিকা গ্রহণের পরামর্শ টিকা গ্রহণকারী চিকিৎসকদের

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: রাষ্ট্র, পরিবার ও নিজের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশবাসীকে কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন দেশের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ। টিকা গ্রহণের সাত ঘন্টা পরেও কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি বলে উল্লেখ করেছেন প্রথম দফায় টিকা গ্রহণকারী বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকগণ।

বুধবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভার্চুয়ালি উপস্থিত থেকে ঢাকার কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালে দেশে প্রথমবারের মতো কোভিড-১৯ এর টিকাদান কর্মসূচির আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন করেন। ঐ কেন্দ্রে মোট ২৬ জনকে টিকা দেয়া হয়।

আজ ঢাকার পাঁচটি কেন্দ্রে মোট ৫৪১ জনকে কোভিড-১৯ এর টিকা দেয়া হয়েছে। সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাপাতাল থেকে, আইসিটি প্রতিমন্ত্রী জুনায়েদ আহমেদ পলক, স্বাস্থ্য সচিব আব্দুল মান্নান ও তথ্য সচিব খাজা মিয়া বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ) থেকে টিকা গ্রহন করেন।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ)-এর উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়ার টিকা গ্রহণের মধ্যে দিয়ে আজ সকাল নয়টায় বিএসএমএমইউ-এর টিকাদান কর্মসূচি শুরু হয়। অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়ুয়া বলেন, ‘আমি টিকা নিয়েছি। তারপর সারাদিন অফিস করেছি। আমার কিছুই মনে হয়নি। এখনো সুস্থ আছি। আমার কোন পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হয়নি।’ টিকা নিয়ে যারা সংশয়ের মধ্যে আছেন, তিনি তাদের সব সংশয় কাটিয়ে টিকা গ্রহণ করার আহ্বান জানান।

তিনি বলেন, প্রথমদিন আমরা যারা টিকা নিয়েছি আমাদের দেখে জাতীয় স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে দেশের মানুষ টিকা নিতে উদ্বুদ্ধ হবেন বলে আশা করছি।

বিএসএমএমইউ-এর উপ-উপাচার্য (শিক্ষা) অধ্যাপক ডা. সাহানা আখতার রহমান বলেন, টিকা নিয়ে নিজেকে খুব ভাগ্যবান মনে করছি। টিকা নেয়ার পর আমার এখনো কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয়নি। আর সব টিকারই ছোটখাটো পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া থাকে। এতে ভীত হওয়ার কিছু নেই।

টিকা নিয়ে যারা নানা সংশয়ে ভুগছেন এবং গুজব ছড়াচ্ছেন তাদের উদ্দেশ্যে অধ্যাপক আতিকুর রহমান বলেন, চিকিৎসা বিজ্ঞানের সব নিয়ম মেনেই অক্সফোর্ড এই টিকাটি তৈরি করেছে। টিকার গুণগত মান যাচাই করেই আমাদের পাঠানো হয়েছে। তাই, যারা এখনো সংশয়ে আছেন তাদের মন থেকে সংশয় ঝেড়ে ফেলে টিকাদান কর্মসূচিতে যোগ দিন।

তিনি কোভিড-১৯ টিকা নেয়ার মধ্যে দিয়ে জাতিকে দায়িত্বশীল আচরণ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, যিনি বা যারা টিকা নেবেন, তারা কেবল নিজের স্বাস্থ্যের নিরাপত্তাই নিশ্চিত করবেন না। জাতিকে সুরক্ষিত রাখতেও সহায়ক হবেন।

হেলথ এন্ড হোপ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের চেয়ারম্যান মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. লেলিন চৌধুরী বলেন, কোভিড-১৯ এর সাথে প্রায় এক বছরের অভিজ্ঞতালব্ধ জ্ঞান থেকে একটি বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি অবলম্বন করে কোভিড-১৯ টিকাটি তৈরি করা হয়েছে। পৃথিবীর সমস্ত ওষুধ ও ইনজেকশনের মতো ভ্যাকসিনেরও কিছু পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া আছে। পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বিহীন কোনো ওষুধ পৃথিবীতে নেই। তাই, এই টিকাটির কিছু পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া থাকতে পারে। তবে, সেটি খুব মৃদু। অর্থ্যাৎ ১ লাখ লোক যদি টিকা নেয়, এর মধ্যে একটি অংশের লোকের সুই ফোটানোর জায়গাতে ব্যথা হবে, ফুলে যাবে। বাকিদের কিন্তু তেমন কিছু হবে না। আবার কারো শরীরে হালকা ব্যথা বা ম্যাজ ম্যাজ করতে পারে। মাথা ঘোরাতে পারে। কিন্তু শরীর ব্যথা বা মাথা ঘোরানো ভাব কোনোটাই কিন্তু ২৪ ঘন্টার বেশি থাকবে না।

অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ভ্যাকসিন দেয়ার এক ঘন্টার মধ্যেই ভ্যাকসিনের যে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া দেখা যায় এবং এগুলো ঠিক হয়ে যায়। যারা কোভিড-১৯ টিকা গ্রহণের ব্যাপারে এখনো সংশয়ের মধ্যে আছেন তাদের উদ্দেশ্যে ডা. লেলিন বলেন, করোনার মতো ভাইরাস কোনো ব্যক্তিকে চেনে না। তা যে কারোই হতে পারে। ব্যক্তিগত ভাবে সাবধান থাকারও কোনো জায়গা নেই। যখন দেশের ৭০ থেকে ৮০ শতাংশ মানুষ টিকা নেবে আমরা জাতিগতভাবে তখনই সুরক্ষিত থাকবো। এজন্যই ব্যক্তি আমার টিকা নেয়া মানেই, আমার পরিবার, আমার চারপাশের মানুষ এবং দেশবাসীকে সুরক্ষা দেয়া। অর্থ্যাৎ প্রত্যেকের নিজের ভ্যাকসিন নেয়া জাতিকে সুরক্ষা দেয়া কার্যক্রমের একটি অংশ ।

তিনি ভ্যাকসিন বিরোধীদের একই সাথে দেশবাসী, সমাজ এবং নিজের পরিবারের বিপক্ষে অবস্থান নিচ্ছেন উল্লেখ করে দেশবাসীকে টিকা নেয়ার মধ্যে দিয়েই করোনা যুদ্ধের প্রথম পর্যায়ের সাফল্য নিশ্চিত করার আহ্বান জানান।

ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল (ডিএমসিএইচ)-এর পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. নাজমুল হক বলেন, ডিএমসিএইচ থেকে আজ ১২০ জনকে কোভিড-১৯টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কারো মধ্যে কোনো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অসুস্থতার লক্ষণ দেখা যায়নি।

বিএসএমএমইউ-এর কার্যালয় সুত্রে জানা যায়, বিএসএমএমইউ-এর নির্ধারিত কেন্দ্রে আজ ১৯৮ জনকে টিকা দেয়া হয়েছে। কিন্তু কারো পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া বা অসুস্থতা দেখা দেয়নি।- বাসস

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *