বৈরিতা নয়, আলোচনায় সমাধান চায় বাংলাদেশ

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, কারও সঙ্গে দ্বন্দ্ব বা বৈরিতা সৃষ্টি করে নয়, আলোচনার মাধ্যমে রোহিঙ্গা সংকটের সমাধান চায় বাংলাদেশ।

তিনি বলেন, রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন নিয়ে বাংলাদেশ কারও সঙ্গে দ্বন্দ্বে জড়ায়নি; আলোচনার মাধ্যমেই মিয়ানমার তাদের নাগরিকদের ফেরত নেবে, এটাই সরকার চায়।

বৃহস্পতিবার সকালে সামরিক বাহিনী কমান্ড ও স্টাফ কলেজের (ডিএসসিএসসি) কোর্স সমাপনী (২০২০-২১) অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির ভাষণে তিনি এসব কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আজকে যারা গ্র্যাজুয়েশন লাভ করেছেন তারাই আমার সেই ২০৪১ এর উন্নত-সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার সৈনিক হবেন। কাজেই, দেশকে যেন আমরা এগিয়ে নিয়ে যেতে পারি এবং দেশের ভাবমূর্তি যাতে উজ্জ্বল হয় সেদিকেই সবাইকে দৃষ্টি রাখতে হবে।’

তিনি বলেন, ‘মনে রাখতে হবে, এ দেশ লাখো শহিদের রক্তের বিনিময়ে আমরা স্বাধীন করেছি এবং এ দেশকে একটি উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ হিসাবে আমরা গড়ে তুলতে চাই।’

প্রধানমন্ত্রী গণভবন থেকে ভিডিও কনফারেন্সে মিরপুর সেনানিবাসের শেখ হাসিনা কমপ্লেক্সের অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করেন।

অনুষ্ঠানে ডিএসসিএসসির কমান্ড্যান্ট মেজর জেনারেল মো. জুবায়ের সালেহীন স্বাগত বক্তৃতা করেন।

অনুষ্ঠানে প্রতিষ্ঠানের কমান্ড্যান্টকে প্রধানমন্ত্রীর পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের সনদপত্র প্রদানের অনুমতি প্রদান করেন শেখ হাসিনা।

এ কোর্সে ১৬টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ৪৩ জন বিদেশি কর্মকর্তা এবং ১০ নারী কর্মকর্তাসহ ২২৫ জন সশস্ত্র বাহিনীর কর্মকর্তা প্রশিক্ষণ শেষ করে এদিন পিএসসি অর্জন করেন। প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত ৪৩টি বন্ধুপ্রতিম দেশের ১ হাজার ২০৮ জন অফিসার এ কলেজ থেকে গ্র্যাজুয়েশন করেছেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানা প্রতিকূলতা ও ঝুঁকিসহ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্য দিয়ে আমরা নতুন বছর ২০২১ এ পদার্পণ করেছি।

করোনাভাইরাসের কারণে সারা বিশ্ব যখন স্থিমিত, তখন দেশের মানুষের স্বাস্থ্যগত নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করার পাশাপাশি আমরা দেশের অর্থনীতিসহ সব উন্নয়ন কার্যক্রম অব্যাহত রাখতে সমর্থ হয়েছি।

বঙ্গবন্ধুর করে যাওয়া পররাষ্ট্রনীতির অনুশীলনে আন্তর্জাতিক বিশ্বে বাংলাদেশের বন্ধুত্বপূর্ণ অবস্থান, রোহিঙ্গা সমস্যা, দেশে নারীর ক্ষমতায়নসহ অর্থনীতির চাকাকে গতিশীল রাখায় তার সরকারের ভূমিকাও ভাষণে তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।

তিনি বলেন, আমাদের পররাষ্ট্রনীতির মূলমন্ত্র ‘সবার সঙ্গে বন্ধুত্ব, কারও সঙ্গে বৈরিতা নয়’- এ নীতিতে অনুপ্রাণিত হয়ে আমরা আন্তঃরাষ্ট্রীয় সুসম্পর্ক সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিতে সর্বদা সচেষ্ট। আজ বাংলাদেশের সঙ্গে সব দেশের একটা সুসম্পর্ক প্রতিষ্ঠিত হয়েছে।

শেখ হাসিনা বলেন, অভ্যন্তরীণ সম্পদসহ নানাবিধ সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও আমরা বিপন্ন মানবতার ডাকে সাহায্যের হাত বাড়িয়েছি। মিয়ানমার থেকে ১০ লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা আমাদের দেশে এসেছে, তাদের আমরা আশ্রয় দিয়েছি।

মিয়ানমারের সঙ্গে আলাপ-আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছি যাতে তারা তাদের নাগরিকদের ফিরিয়ে নিয়ে যায়। এজন্য বন্ধুত্বসুলভ একটা মনোভাব নিয়ে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমরা কোনো দেশের সঙ্গে কোনো দ্বন্দ্বে লিপ্ত হইনি।

রাখাইন রাজ্যে সংঘটিত মানবতাবিরোধী অপরাধের প্রতি দৃষ্টি আকর্ষণ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন- তবে, যারা অন্যায় করেছেন নিশ্চই আমরা সেটা বলব এবং তাদের নাগরিকদের তারা ফেরত নেবে সেটাই আমরা চাই।

মিয়ানমারের বাস্তুচ্যুত নির্যাতিত জনগণকে মানবিক কারণে আশ্রয় দেওয়ায় আন্তর্জাতিক মহলে বাংলাদেশ বিশেষ প্রশংসা ও সাধুবাদ পাচ্ছে।

নারী শিক্ষা, নারীর ক্ষমতায়ন এবং জনগণের অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জনসহ সব ক্ষেত্রে তার সরকার ব্যাপক সাফল্যের পরিচয় রেখে চলছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিশ্বায়ন ও তথ্যপ্রযুক্তির উন্নয়নের এ যুগে আমরা ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার পথে দ্রুত অগ্রসর হচ্ছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, এ বছর প্রশিক্ষণার্থী কর্মকর্তাদের মাঝে একজন বিদেশি নারী অফিসারসহ মোট ১০ জন নারী অফিসার রয়েছেন। প্রতি বছর উল্লেখযোগ্যসংখ্যক নারী অফিসারের অংশগ্রহণ, আমাদের সশস্ত্র বাহিনীতে নারীর ক্ষমতায়নের একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *