অবশেষে নিন্মমানের সামগ্রী তুলে নিয়ে সড়কে নতুন করে কাজ শুরু করলো ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

বাঘা প্রতিনিধি :
অবশেষে সড়কের নির্মাণ কাজের নিন্মমানের সামগ্রী তুলে নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। নিন্মমানের কাজে এলাকাবাসীর অভিযোগের প্রেক্ষিতে গনমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের নির্দেশে শনিবার(২২-৬-১৯) এই কাজ শুরু করেছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) সূত্রে জানা গেছে, প্রায় ১৮ কোটি টাকা ব্যয়ে বাঘা উপজেলার ‘বাঘা-আড়ানী’ সড়কের ১১ কিলোমিটার রাস্তার নির্মাণকাজ করছিলো মাঠ পর্যায়ে ঠিকাদারের অংশীদার রাজশাহীর হারুন-অর-রশিদ। কাজটি পেয়েছে যশোরের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মইনুদ্দীন বাঁশি। দরপত্রের শর্ত ভঙ্গ করে নিন্মমানের বালির ব্যবহার ও পাথর কম দিয়ে তারা রাস্তার কাজ করছিলো। নিয়ম অনুযায়ী ৭০ ভাগ পাথর ও ৩০ ভাগ বালি ব্যবহারের কথা থাকলেও তার অনুপাত সঠিক নেই বলে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে অভিযোগ এনে দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী কাজের দাবি করেন এলাকাবাসী। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধি এলাকাবাসির কথা আমলে না নিয়ে কাজে বাঁধা দেওয়ার অভিযোগ করে থানায় খবর দিয়ে পুলিশ নিয়ে যান।
বাঘা পৌরসভার সাবেক কাউন্সিলর শাহবাজ আলী বলেন, এই রাস্তার নির্মাণ কাজের আর প্রায় দেড় কিলোমিটার বাঁকি রয়েছে। এতদিন রাস্তায় যে বালি ব্যবহার করা হয়েছে, তা আগের চেয়ে আরও নিন্মমানের ছিল। রাস্তার নিমার্ণকাজ চলাকালে সওজ এর কোনো প্রতিনিধি উপস্থিত না থাকার সুযোগে দরপত্রে বর্ণিত কাজে আগের তুলনায় অনিয়মটা বেশি করেন। বিষয়টি স্থানীয়দের নজরে এলে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তাটুকু সঠিকভাবে করার জন্য আবেদন করেন। এই জায়গাতে পানি জমে তাড়াতাড়ি নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে এই এলাকার রাস্তাটির কাজ দরপত্রের নিয়ম অনুযায়ী করার জন্য দাবি কন্ হয়। ঘটনার প্রেক্ষিতে অভিযোগকারিদের সরানোর জন্য ঠিকদারের প্রতিনিধি চাঁদা চাওয়ার কথা বলে বাঘা থানায় খবর দিয়ে পুলিশ নিয়ে আসেন। এ সময় ওই রাস্তা দিয়ে বাঘা উপজেলা চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট লায়েব উদ্দীন যাওয়ার সময়, স্থানীয় লোকজন তাঁর কাছেও এই অভিযোগ করেন। তারা বলেন,পুরো রাস্তাটিই হয়তো এইভাবে করা হয়েছে। উপজেলা চেয়ারম্যান সেখান থেকে সওজ এর নির্বাহী প্রকৌশলীকে ফোন করে অভিযোগের বিষয়টি অবহিত করেন। নির্বাহী প্রকৌশলী ওই অবস্থায় কাজ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়ে ওই সড়ক পরিদর্শনের আশ্বাস দেন। অভিযোগের প্রেক্ষিতে সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করে অনিয়ম ধরা পড়েছে।
স্থানীয়রা জানান, বালি-পাথরের অনুপাত সমান সমান দেখেছেন। যে বালি ব্যবহার করা হয়েছে তা নিন্মমানের। এছাড়াও পর্যাপ্ত পানি ব্যবহার এবং কার্পেটিংয়ের আগে যে বালি ব্যবহার করা হচ্ছে, তা পরিষ্কার করা হচ্ছে না। রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের বাঘা উপজেলার ‘বাঘা-আড়ানী’ সড়কের নির্মাণকাজে এই অনিয়ম পাওয়া যায়।

বৃহস্পতিবার (২০-০৬-১৯) রাজশাহী সড়ক ও জনপথ বিভাগের প্রকৌশলীসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরের কর্মকর্তারা সরেজমিন সড়কের নির্মাণকাজ পরিদর্শন করেন। সওজ এর গবেষণাগারের উপসহকারী প্রকৌশলী মিজানুর রহমান জানান, রাস্তা খুঁড়ে পাথর ও বালির অনুপাত পরীক্ষা করে ৬০ ভাগ পাথর ও ৪০ ভাগ বালি পাওয়া গেছে। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ৭০ ভাগ পাথর ও ৩০ ভাগ বালি থাকার কথা। এছাড়াও ‘বালি’ নিন্মমানের বলে মন্তব্য করেন। তবে তাদের ল্যাবে (গবেষণাগারে) বালি ও পাথরের অনুপাত পরীক্ষায় যদি কোনো গড়মিল পাওয়া যায় তা হলে ঠিকাদারকে দিয়ে আবার রাস্তা ঠিক করে নেওয়া হবে।
রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের নির্বাহী প্রকৌশলী শামসুজ্জোহা বলেন, গবেষণাগারের পরীক্ষক মিজানুর রহমান যা বলেছেন সেটাই সঠিক। ঠিকাদারকে রাস্তা ঠিক করে দিতে হবে। ঠিকাদার হারুন অর রশিদ ও তার প্রতিনিধি সেকেন্দার আলী বলেন, ‘অল্প জায়গায় এটা হয়েছে। মাল মিক্সার করে রিমুভ করে ঠিক করে দিবেন বলে জানান। রাজশাহী সড়ক ও জনপথ (সওজ) বিভাগের উপ-সহকারী প্রকৌশলী আলতাফ হোসেন ও ঠিকাদারের প্রতিনিধি সেকেন্দার আলী বলেন,শনিবার (২২-০৬-১৯)উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনের রাস্তায় নিন্মমানের সমাগ্রী তুলে (ভেকু দিয়ে) নিয়ে নতুন করে কাজ শুরু করা হয়েছে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *