চেয়ারম্যান সাহেব, তাদের ভালো হয়ে যেতে বলুন: ওবায়দুল কাদের

জাতীয়

স্বদেশবাণী ডেস্ক : নিজের সড়ক পরিবহণ ও সেতু বিষয়ক মন্ত্রণালয় নিয়ে স্বস্তিতে নেই বলে জানিয়েছেন মন্ত্রী ওবায়দুল কাদের।শুক্রবার জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় নিজের মন্ত্রণালয়ের ব্যাপক উন্নয়নের পরও সড়ককে নিরাপদ না করতে পারায় তিনি এই অস্বস্তি প্রকাশ করেছেন।

মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্টদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমরা সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না।আমি মনে করি, সড়কে শৃঙ্খলা আনাই বড় চ্যালেঞ্জ।

গতকাল (২১ অক্টোবর) রাজধানীতে এক অনুষ্ঠানে যাত্রী কল্যাণ সমিতি দুর্ঘটনার বিষয়ে একটি পরিসংখ্যান দিয়েছে।তারা জানায়, গত ৬ বছরে দেশে সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৩ হাজার ৮৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে।

হাইওয়ে পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মল্লিক ফখরুল ইসলাম গত ৯ মাসের জরিমানার পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।

সেই প্রসঙ্গ তুলে হাইওয়ে পুলিশের উদ্দেশে সড়কমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, কত টাকা জরিমানা তুলেছেন- এটার হিসেব দিয়ে কোনো লাভ নেই। এটা কোনো বিষয় নয়। আমার কাছে বিষয় সড়ক নিরাপদ আছে কি না। গাড়িগুলো নিয়ম মতো চলছে কি না, গাড়ির ফিটনেস আছে কি না, চালকের ফিটনেস, গাড়ির চালক গাড়ি চালাবার যোগ্য কি না, গাড়ি ওভারলোডেড কি না, গাড়ি বেশি গতিতে চলছে কি না- এসব আমার কাছে বিষয়। আমি এটাই দেখব। আমার কাছে বিষয় দুর্ঘটনা কমেছে কি না।

দুর্ঘটনা দুর্ভাবনার কারণ হয়ে আছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিদিনই ঘটছে।পাখির মতো মানুষ মরে, মাছির মতো মানুষ মরে। এ মর্মান্তিক দৃশ্যপট মানুষ হিসেবে সইতে পারি না। অনেক কষ্ট হয়।

এদিকে গতকাল (২১ অক্টোবর) ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটিতে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক এক সংলাপে নিজেদের গবেষণার ফলাফল তুলে ধরে বুয়েটের দুর্ঘটনা গবেষণা কেন্দ্রের পরিচালক অধ্যাপক মো. হাদিউজ্জামান জানান, মহাসড়কে বিভাজক বসানোয় গাড়ির মুখোমুখি সংঘর্ষ কমলেও পেছন থেকে ধাক্কার ঘটনা বেড়ে গেছে। তিনি বলেন, অনেকের ধারণা সড়ক বাঁকে বেশি দুর্ঘটনা ঘটে। কিন্তু জরিপ করে দেখা গেছে বাঁকে দুর্ঘটনা ঘটে ৩০ শতাংশ, আর বাকি সব দুর্ঘটনা ঘটে সরল বা সোজা সড়কে। এজন্য গাড়িগুলোর অতিরিক্ত গতিতে চালানোকে দায়ী করেন তিনি। পাশাপাশি কেন চালকরা বেপরোয়া হয়ে ওঠেন, তার ব্যাখ্যাও দেন এই গবেষক।হাদিউজ্জামান ব্যাখ্যা দিয়ে বলেন, সারা দেশের সড়কগুলোর উপর দুইশ’র বেশি হাট ও বাজার রয়েছে। এই হাটবাজারের যানজটে পরে দীর্ঘক্ষণ অপেক্ষা করতে হয় চালককে। ওই চালকরা যখন গাড়ি নিয়ে সরল পথে আসে, তখন যানজটে নষ্ট হওয়ার সময় পুষিয়ে নিতে অতিরিক্ত গতিতে গাড়ি চালাতে গিয়ে দুর্ঘটনা ঘটায়।

আজ জাতীয় নিরাপদ সড়ক দিবসের আলোচনায় সড়ক পরিবহণ ও সেতুমন্ত্রী বলেন, অনেকগুলো ত্রুটি আমাদের আছে সেটা তো অস্বীকার করে লাভ নেই। সুন্দর সুন্দর ব্যানার পোস্টার করলেই আমাদের দায়িত্ব শেষ হয় না।নিরাপদ সড়ক দিবস করতে হবে প্রতিদিন।

সড়কে শৃঙ্খলা ফেরানোই চ্যালেঞ্জিং উল্লেখ করে তিনি বলেন, এত উন্নয়ন হলো কিন্তু অনেকে বলেন- এই কাজটি হয় না কেন। সড়কে শৃঙ্খলা কেন আনতে পারব না। এখন সংকট শৃঙ্খলা, পরিবহণ ও সড়কের। এখানে ব্যর্থ হলে আমাদের উন্নয়ন ম্লান হয়ে যাবে। এটাই আমাদের চ্যালেঞ্জিং। কাজের মান ও গতি দুটোই ঠিক রাখতে হবে।

এ সময় বিআরটিএর’র দুর্নীতি নিয়েও কথা বলেন সড়কমন্ত্রী। তিনি বলেন, রাজনৈতিক তদবির হয় কারণ সবাই আসতে চায় মিরপুরে না হলে ইকিরিয়ায় (কেরানীগঞ্জ)। টাকার খনি আছে ওখানে। যেখানে গাড়ি বেশি সেখানে সবাই ট্রান্সফার হয়ে যেতে চায়। এসব অপকর্ম আমি বন্ধ করেছি।

বিআরটিএ চেয়ারম্যানের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, আমি বলব- যা বন্ধ হয়নি সেটা বন্ধ করেন। এখনও বিআরটিএ অফিসগুলোতে সর্ষের মধ্যে ভূত। এই ভূত হলো দালাল।ভেতরের আশ্রয়-প্রশ্রয় না পেলে কীভাবে বাইরে থেকে তারা (দালাল) দৌরাত্ম করে। এগুলো বন্ধ করতে হবে যে কোনো মূল্যে। আমি কোনো রাজনৈতিক সুবিধায়, কাউকে অ্যালাউ করি না।

বিআরটিএ চেয়ারম্যানের উদ্দেশে মন্ত্রী হুশিয়ারি দিয়ে বলেন, চেয়ারম্যান সাহেব- বিআরটিএতে যে অপকর্ম যারা করে তাদের ভালো হয়ে যেতে বলুন।তিনি অপকর্মকারীদের বিরুদ্ধে ডিসিপ্লিনারি অ্যাকশন নিতে, বিআরটিএ চেয়ারম্যানকে নির্দেশ দেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *