রাজশাহী সেফ হোম থেকে নতুন জীবনে তারা

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: আসমা, নাসরিন। সাবই বাগ প্রতিবন্ধী। কেই কথা বলতে পারেন না। এমনি কেউ কেউ আবার শুনতেই পারে না। ইশারায় কথা বলেন তার। ভাষার জেলের সাথে সাথে নিজের জগতেও বন্দি ছিলেন এরা সবাই।

রাজশাহী সেফ হোমে থাকা তাদের মত আরও ১০ জন মেয়েকে চাকুরির ব্যবস্থা করে দিয়েছে সেফ হোমের ব্যবস্থাপক লাইজু রাজ্জাক। এই ব্যবস্থার মধ্য দিয়েই সেফ হোমের বন্দি জীবন ছেড়ে নতুন প্রথীবিতে পা রাখছেন তারা।

বৃহস্পতিবার বিকেলে ওদের বিদায় উপলক্ষে এক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে সেফ হোম কতৃপক্ষ। অনুষ্ঠানে শুরু হয় এক আবেগঘন পরিবেশের সৃষ্টি হয়। অনুষ্ঠানের অতিথিদের অনেকেরই চোখ ভিজে ওঠে।

বেসরকারি সংস্থা ‘ইউসেফ বাংলাদেশে’র পক্ষ থেকে এই মেয়েদের সেলাইয়ের প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। আর তাদের মাধ্যমেই ‘ইস্কয়ার গ্রুপ’ তাদের টেক্সটাইল ডিভিশনে এদের চাকরি দিয়েছে। প্রতিষ্ঠানটি নারায়নগঞ্জের কাচপুরে।

অনুষ্ঠানে ইউসেফ এর প্রশিক্ষক রউফুল ইসলাম বললেন, তারা এই ধারা অব্যাহত রাখার চেষ্টা করবেন।

প্রশিক্ষণ নেওয়া ১৫ জনের মধ্যে ১০ জন পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছে। এরা হলো মায়া সুলতানা (১৮), আসমা খাতুন (২০), নাসরিন খাতুন (২৪), তারা (২৫), সালমা (২১), তানিয়া (২৫), আলোকি (২৪), লতা (২৬), জাহানারা (৩০) ও হাজেরা (১৮)।

তাদের বিদায় অনুষ্ঠানে সেফ হোমের উপ-তত্বাবধায়ক লাইজু রাজ্জাক শোনালেন কীভাবে তাদের চাকরির জোগাড় হলো। তিনি একদিন ইউসেফ বাংলাদেশের রাজশাহী কার্যালয়ের পাশ দিয়ে যাওয়ার সময় দেখেন ‘চাকরির মেলা’ শিরোনামে একটি নোটিশ ঝুলছে। সেখানে গিয়ে তিনি জানতে পারেন তারা মেয়েদের সেলাই প্রশিক্ষণ দিয়ে চাকরির ব্যবস্থা করেন। প্রতিবন্ধীদের জন্য বিশেষ কোটা রয়েছে। যেই কথা সেই কাজ। সেফ হোমে ১৫ জন মেয়ে প্রশিক্ষণ নিল।

এবার চাকরি দাতা প্রতিষ্ঠানে ‘ইস্কয়ার গ্রুপে’র লোকেরা এলেন। সেফ হোমেই পরীক্ষা হলো। পাস করল ১০জন। সঙ্গে সঙ্গে নিয়োগপত্র। প্রথম অবস্থায় তারা মাসে ছয় হাজার টাকা করে বেতন পাবে। ভালো করলে পরের বছরই বেতন বেড়ে হবে ১২ হাজার। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা তারাই করবে। এ জন্য মাসে বেতন থেকে ২ হাজার টাকা কাটা যাবে। আগামী শনিবার সেফ হোমের উপ-তত্বাবধায়ক জানালেন আগামী শনিবার তিনি এই মেয়েদের নিয়ে নারায়নগঞ্জে নিয়ে যাবেন। নিজ হাতে তাদের ব্যাংক হিসাব নম্বর খুলে দিয়ে আসবেন। যাওয়ার আগেই তাদের জন্য নতুন জমা বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। প্রত্যেকের জন্য একটা করে কম্বল, মশারী, এক জোড়া করে স্যান্ডেল ও একটি করে ব্যাগ কিনে দেওয়া হয়েছে। এ যেন কনে বিদায়ের অনুষ্ঠান।

সামাজসেবা অধিদপ্তরের রাজশাহী বিভাগীয় উপ-পরিচালক রাশেদুল কবীরের কণ্ঠ ধরে এল। যেন নিজের মেয়েকে বিদায় দিচ্ছেন। বললেন, হয়তো ঠিকমতো দেখাশোনা করতে পারিনি। মায়েরা তোমরা আমাকে ক্ষমা করে দিও।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *