ইসির কার্যকর পদক্ষেপেই বন্ধ হবে নির্বাচনি সহিংসতা

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক : নির্বাচন কমিশনের সক্রিয় উদ্যোগের অভাবে ইউনিয়ন পরিষদ (ইউপি) নির্বাচনে দেশব্যাপী সহিংসতা বাড়ছে। মাঠ প্রশাসন থেকে সরকারের উচ্চ পর্যায়ে এমন বার্তাই এসেছে।

বৃহস্পতিবার বিভাগীয় কমিশনারদের বৈঠকে বিষয়টি নিয়ে আলোচনা হয়েছে। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে বৈঠকটি হয়।

এতে মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের তদারকি করতে বলা হয়। শীতে ওয়াজ-মাহফিলের অনুমোদন না দেওয়ার বিষয়েও আলোচনায় আসে।

এদিকে আজ সাপ্তাহিক ছুটির দিনে নির্বাচন কমিশন বিভাগীয় কমিশনারদের নিয়ে বৈঠকে বসছে। এতে ইউপি নির্বাচনের সার্বিক অবস্থা নিয়ে আলোচনা হতে পারে।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত বিভাগীয় কমিশনারদের বৈঠকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের অন্তত ১২ জন সচিব সচিব উপস্থিত ছিলেন। সংশ্লিষ্ট সচিবরা স্ব স্ব মন্ত্রণালয়ের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। স্থানীয় সরকার বিভাগের পক্ষ থেকে আগামী ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনগুলো যাতে ভালো হয় সে বিষয়ে প্রয়োজনীয় প্রস্তুতি রাখার কথা বলেছে।

মাঠ প্রশাসনের কর্মকর্তাদের তথ্য অনুযায়ী, জেলা ও উপজেলা নির্বাচনী কর্মকর্তারা নির্বাচনি আচরণবিধি নিশ্চিত করতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেন না। তারা শুধু সংশ্লিষ্টদের ট্রেইনিং করিয়ে দায়িত্ব শেষ করেন। কিন্তু প্রার্থীরা নির্বাচনি আচরণবিধি মেনে চলছেন কিনা, না চললে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার উদ্যোগ নির্বাচন কর্মকর্তারা নেন না। ফলে ভোটের দিন সংঘাতে জড়ানোর সাহস পাচ্ছেন প্রার্থী ও তাদের সমর্থকরা।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, নির্বাচনি আচরণবিধি অনুসরণের ব্যাপারে শুরু থেকেই কড়া পদক্ষেপ নেওয়া হলে ভোটের দিন পরিস্থিতি শান্ত রাখা সহজ হতো। কিন্তু ভোটের আগে থেকেই সহিংসতা শুরু হলেও সেগুলো নিয়ন্ত্রণে তেমন কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। এটা শুধু জেলা-উপজেলার বিষয় নয়, কেন্দ্রীয়ভাবে নির্বাচন কমিশন থেকে মাঠ কর্মকর্তাদের মনিটর করারও ব্যবস্থা নেই।

যে কারণে ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনের এই অবস্থা হয়েছে। এবারের নির্বাচনে প্রত্যেক উপজেলায় তিন জনের বেশি নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট না দেওয়ার জন্য বলা হয়েছে। এতে মাঠ পরিস্থিতি সামলানো যায়নি।

তবে মাঠের নির্বাচনি কর্মকর্তারা বলছেন উলটো কথা। সিলেট বিভাগের একটি উপজেলার আটটি ইউনিয়নে মাত্র একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দেওয়া হয়েছে। ওই উপজেলায় দায়িত্বপ্রাপ্তরা বলছেন, আটটি ইউনিয়নে একজন ম্যাজিস্ট্রেট দিলে নির্বাচন যেমন হয় তেমনই হয়েছে। এখানে নির্বাচনি কর্মকর্তাদের দোষ দিলে হবে না।

জানা গেছে, ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে একেকটি উপজেলার দুই-তিনটি ইউনিয়নের জন্য একজন করে রিটার্নিং অফিসার নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা না থাকায় নির্বাচনি অনিয়মের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিতে পারেন না। এ কারণে রিটার্নিং কর্মকর্তাদের নির্বাচনকালীন ম্যাজিস্ট্রেসি ক্ষমতা দেওয়ার দাবি জানিয়ে আসছে নির্বাচনি কর্মকর্তারা।

ময়মনসিংহের এক নির্বাচন কর্মকর্তা বলেন, মাঠ প্রশাসনের মূল নিয়ন্ত্রণ সংসদ সদস্য, উপজেলা চেয়ারম্যান, ডিসি, এসপি, ইউএনও এবং ওসিদের হাতে। নির্বাচনের সময় এদের মধ্যে সমন্বয় থাকা দরকার। আইনশৃঙ্খলা কমিটির বৈঠকের মাধ্যমে এসব বিষয় নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। কিন্তু বাস্তবে নানা কারণে তা হয়ে ওঠে না।

জানা গেছে, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব বলেছেন বর্তমানে করোনায় আক্রান্ত মৃত্যুসহ সার্বিকভাবে দেশ ভালো অবস্থানে আছে। টিকা দেওয়া চলছে। মাঠ পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের টিকার বিষয়ে বিভাগীয় কমিশনারদের তদারকি করতে বলেন। একইসঙ্গে ঢাকায় দুটি হাসপাতাল ছাড়া বাকি সব হাসপাতালকে নন-কোভিড ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন।

জ্বালানি সচিব দেশের সীমান্ত এলাকায় জ্বালানি তেল চোরাচালান যাতে না হয় তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত রাখতে বলেন। জননিরপত্তা বিভাগের সচিব আগামী পর্বের ইউপি নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি সন্তোষজনক পর্যায়ে রাখা বিষয়টিতে গুরুত্ব দেন। সড়ক পরিবহণ ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব বাস ভাড়া সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী যেন আদায় হয় সে বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপের কথা বলেছেন। মোবাইল কোর্ট পরিচালনার মাধ্যমে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নিতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

ধর্ম সচিব শীতের সময়ে গ্রাম ও শহর ওয়াজ-মাহফিলের চাহিদার বিষয়টি উল্লেখ করে করোনার জন্য গতবারের মতো এবারো এ ধরনের সভা শুরু করার সিদ্ধান্ত হয়নি। তাই আসন্ন শীতে ওয়াজ-মাফফিলসহ যে কোনো ধর্মীয় জমায়েত অনুমোদনের বিষয়টি মাঠ প্রশাসনকে সতর্ক থাকার জন্য বলেন।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *