সরকার পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করছে: প্রধানমন্ত্রী

জাতীয় লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ২০০৯ সাল থেকে ধারাবাহিকভাবে রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পেয়ে আওয়ামী লীগ সরকার শান্তি চুক্তির আলোকে পার্বত্য অঞ্চলের সার্বিক উন্নয়নে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, ‘আমরা পার্বত্য চট্টগ্রাম বিষয়ক মন্ত্রণালয়, পার্বত্য চট্টগ্রাম আঞ্চলিক পরিষদ ও তিন পার্বত্য জেলা পরিষদ গঠন করেছি। এ অঞ্চলের শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ, যোগাযোগ, অবকাঠামো, মোবাইল নেটওয়ার্কসহ সকল খাতের উন্নয়নে ব্যাপক কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। পার্বত্য জেলাসমূহের নৈসর্গিক সৌন্দর্য সমুন্নত রাখা ও পর্যটন শিল্পের প্রসারেও আমরা নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছি।’

প্রধানমন্ত্রী শনিবার ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আজ দেয়া এক বাণীতে আরো বলেন, সময়োচিত পদক্ষেপের ফলে আজ পার্বত্য জেলাসমূহ কোন পিছিয়ে পড়া জনপদ নয়। দেশের সার্বিক উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় এ অঞ্চলের জনগণ সম-অংশীদার। পার্বত্য অঞ্চলের জীববৈচিত্র সংরক্ষণ, এর টেকসই ব্যবহার এবং সকল উপকারভোগীর নিকট সমান সুবিধা পৌঁছানোর লক্ষ্যে সরকার ন্যাশনাল বায়োডাইভারসিটি স্ট্রাটেজি এন্ড অ্যাকশান প্ল্যান ২০১৬-২০২১ বাস্তবায়ন করছে।

শেখ হাসিনা বলেন, বিশ্বের অন্যান্য দেশের ন্যায় বাংলাদেশেও ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস-২০২১’ পালিত হচ্ছে জেনে তিনি আনন্দিত। দিবসটির এবারের প্রতিপাদ্য সাসটেইনব্যাল মাউনটেন ট্যুরিজম সময়োপযোগী হয়েছে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি বলেন, পৃথিবীর প্রায় ২২ শতাংশ পার্বত্য অঞ্চল প্রায় ১২ শতাংশ মানুষের বসবাস এবং ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ মিঠা পানির উৎস। পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের জীবন অত্যন্ত বৈচিত্রময়। পর্বতমালা, নদ-নদী, বহু প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণি এ অঞ্চলকে করেছে বৈচিত্রপূর্ণ।

শেখ হাসিনা বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সর্বপ্রথম আধুনিকতার ছোঁয়া বিবর্জিত পশ্চাদপদ পার্বত্য জনগোষ্ঠীকে উন্নয়নের মূলধারায় ফিরিয়ে আনেন এবং পার্বত্যবাসীর জীবনমান উন্নয়নে নানামুখী কর্মসূচি গ্রহণ করেন। আঞ্চলিক উন্নয়নের পাশাপাশি শিক্ষাক্ষেত্রে পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রীদের সম-সুযোগ প্রদানের ব্যবস্থা নেন। এ লক্ষ্যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব ১৯৭৩ সালের জুন মাসে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ও কারিগরি প্রতিষ্ঠানসমূহে পাহাড়ী ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য সুনির্দিষ্ট আসন সংরক্ষণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের সংঘাতময় পরিস্থিতি নিরসনের লক্ষ্যে ১৯৯৭ সালের ২ ডিসেম্বর কোন তৃতীয় পক্ষের মধ্যস্থতা ছাড়াই আওয়ামী লীগ সরকার ও পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির মধ্যে এই ঐতিহাসিক চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। বিশ্ব ইতিহাসে এটি একটি বিরল ঘটনা। পার্বত্য চট্টগ্রাম শান্তি চুক্তির মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলের দীর্ঘদিনের জাতিগত হানাহানি বন্ধ হয়। অনগ্রসর ও অনুন্নত পার্বত্য অঞ্চলে প্রতিষ্ঠিত হয় শান্তি ও উন্নয়নের ধারা। ইউনেস্কো শান্তি পুরস্কার অর্জন এই চুক্তির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির স্মারক।

পার্বত্য অঞ্চলে বসবাসকারী ১২টি জাতিগোষ্ঠীর অনন্য বৈশিষ্ট্যমন্ডিত সংস্কৃতি ও বৈচিত্রময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের জন্য এ অঞ্চল সারা দেশের জনগণের নিকট অন্যতম প্রধান পর্যটন আকর্ষণে পরিণত হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের পর্যটকরাও এখন পার্বত্য অঞ্চল ভ্রমণে আগ্রহী হয়ে উঠেছেন, যা শান্তি চুক্তির আগে ছিল অলীক কল্পনা।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস আয়োজনের মাধ্যমে পার্বত্য চট্টগ্রাম অঞ্চলে টেকসই পর্যটনের প্রচার ও প্রসার ঘটবে এবং নতুন প্রজন্ম দেশের বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও সংস্কৃতি সম্পর্কে সম্যক ধারণা লাভ করবে বলে তিনি মনে করেন।

তিনি আশা প্রকাশ করেন, সকলের সম্মিলিত প্রচেষ্টায় পার্বত্য অঞ্চলের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে আমরা জাতির পিতার ক্ষুধা-দারিদ্র্যমুক্ত ও সুখী-সমৃদ্ধ স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশ গড়ে তুলতে সক্ষম হব। তিনি ‘আন্তর্জাতিক পর্বত দিবস-২০২১’ উপলক্ষে আয়োজিত সকল কর্মসূচির সার্বিক সাফল্য কামনা করেন।- বাসস

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *