আব্বাসের ৪১ ক্যাডার এখনো সক্রিয়

রাজশাহী লীড

স্বদেশবাণী ডেস্ক:  রাজশাহীর কাটাখালী পৌরসভার বরখাস্ত মেয়র আব্বাস আলির ৪১ জন ক্যাডার এখনো সন্ত্রাসী কার্যকলাপে সক্রিয় রয়েছে। এলাকায় চাঁদাবাজি ও দখলবাজি তিনি অব্যাহত রেখেছেন। এগুলো করতেই তিনি সন্ত্রাসী ক্যাডার বাহিনী গড়ে তুলেছিলেন। ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হয়ে কারাগারে গেলেও সেখান থেকে তিনি বাহিনী নিয়ন্ত্রণ করছেন। আব্বাসের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের গ্রেফতারে এলাকাবাসী প্রশাসনে লিখিত অভিযোগ করেছে।

আব্বাসের সশস্ত্র ৪১ ক্যাডারের নাম-ঠিকানাসহ পূর্ণাঙ্গ তথ্য উল্লেখ করে মঙ্গলবার জেলা প্রশাসক ও রাজশাহী মহানগর পুলিশের কমিশনারের কাছে অভিযোগ করা হয়েছে। ক্যাডারদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আবেদন জানানো হয়েছে। এসব ক্যাডারের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা রয়েছে বলেও এলাকাবাসী অভিযোগ করেছে। এলাকাবাসীর পক্ষে আব্দুল আউয়াল অভিযোগ দিয়েছেন।

অভিযোগপত্র থেকে জানা

যায়- আব্বাসের মাদক সিন্ডিকেট, চাঁদাবাজি ও দখলবাজির নেতৃত্বে রয়েছে তার তিন ভাই আসের আলি, শামীম আলি ও সুমন আলি এবং চাচা দুলাল আলি। তাদের মধ্যে আসের আলি আওয়ামী লীগ নেতা আবু বাক্কার হত্যা মামলায় যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত। উচ্চ আদালত থেকে তিনি জামিনে আছেন। আব্বাসের অন্যতম ক্যাডার মোখলেসুর রহমান দুলালকে সম্প্রতি পুলিশ গ্রেফতার করেছে। তবে অন্য ক্যাডাররা আগের মতোই মোটরসাইকেলে মহল্লা মহল্লায় টহলদারি করছে। কে কোথায় ঘরবাড়ি বানাচ্ছে সেসব সম্পর্কে জেনে তারা দল বেঁধে চাঁদা আদায় করছে। এ ছাড়া বালুর ট্রাকপ্রতি ৪৫০ টাকা করে চাঁদা তুলছে ক্যাডাররা।

আব্বাসের ক্যাডার বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে রয়েছে- চক বেলঘরিয়ার বাবু মেম্বার, সাগর আলি, সোহাগ আলি, রুবেল হোসেন, লিটন হোসেন, মামুন, জুয়েল, সোহান আলি, সুজন আলি, মুস্তাকুল হোসেন, সোহেল রানা, হাসান আলি, টুয়েল হোসেন, বাখরাবাজের জয়, গিয়াস উদ্দিন, মিলন আলি, মনিরুল হক মনি, মো. শুভ, পিয়াল হোসেন, আব্দুল আজাদ, দিলবর আলী, জমসেদ কসাই, হরিয়ানের বিপ্লব হোসেন, রিদয় হোসেন, মারুফ হোসেন, রবিন আলি, হৃদয় আলি, আব্বাস হোসেন কালু, শ্যামপুরের আল মামুন, দেওয়ানপাড়ার রুবেল হোসেন, চিনিকল বাজারের রাজু আহম্মেদ, উজ্জ্বল হোসেন, মৃধাপাড়ার রেজাউল হোসেন রেজা, তুষার আহম্মেদ ও আলমগীর হোসেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ- কাটাখালীতে ঘরবাড়িঘর বানাতে গেলেই আব্বাসের ক্যাডারদের মোটা অঙ্কের টাকা চাঁদা দিতে হয়। আব্বাস জেলে থাকলেও তার ক্যাডাররা আগের মতোই ভবন মালিকদের কাছে গিয়ে মোটা অঙ্কের চাঁদা দাবি করছে। চাঁদা না দিলে পরিণতি ভয়াবহ হবে বলেও তারা হুমকি দিচ্ছে।

অভিযোগপত্রে আরও বলা হয়- কেউ চাঁদা দিতে রাজি না হলে তাকে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। আব্বাসের বিরুদ্ধে কেউ যাতে মুখ না খোলে সেজন্য হুমকি দেওয়া হচ্ছে। হুমকি দিয়ে ক্যাডাররা বলছে- আব্বাস জেল থেকে বের হলেই অনেকের বিরুদ্ধে অ্যাকশন নেওয়া হবে। এ কারণে আব্বাসের ক্যাডারদের গ্রেফতার করা প্রয়োজন বলে অভিযোগপত্রে বলা হয়। আব্বাসের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অভিযোগ দিতে ভুক্তভোগীরা ভয় পাচ্ছেন। কারণ আব্বাসের ক্যাডার বাহিনীর কাছে অস্ত্র রয়েছে। তারা যেকোনো সময় বড় অঘটন ঘটাতে পারে। স্থানীয় পুলিশ প্রশাসন ক্যাডারদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নিচ্ছে না বলেও তারা অভিযোগ করেন।

এলাকাবাসীর অভিযোগ প্রসঙ্গে রাজশাহীর জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল জানান, অভিযোগ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অভিযোগের তালিকা পুলিশের কাছে পাঠিয়ে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। অভিযোগের সত্যতা পেলে পুলিশ সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে।

উল্লেখ্য, ২৩ নভেম্বর বঙ্গবন্ধু সম্পর্কে কটূক্তি করেন আব্বাস আলি। ২৫ নভেম্বর নগর স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও রাসিকের ১৩নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল মোমিন বোয়ালিয়া মডেল থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে তার বিরুদ্ধে মামলা করেন। ২ ডিসেম্বর রাজধানীর ঈশা খাঁ রাজমণি হোটেল থেকে তাকে গ্রেফতার করে র‌্যাব। বর্তমানে তিনি রাজশাহী কেন্দ্রীয় কারাগারে রয়েছেন। ১০ ডিসেম্বর আব্বাসকে সাময়িকভাবে বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *