তানোরে আল মদিনা হিমাগারের বিরুদ্ধে প্রতারনা মামলা

রাজশাহী

সারোয়ার হোসেন,তানোর: রাজশাহীর তানোর পৌর এলাকার আল মদিনা সিডস্ নামের আলুর হিমাগারের মালিক হোল্ডিং ট্যাক্স না দিতে ট্রেড লাইসেন্স জালিয়াতি করায় মালিক ও ম্যানেজারের বিরুদ্ধে প্রতারনার মামলা দায়ের করেন পৌর মেয়র ইমরুল হক। গত ২৩ জুন বৃহস্পতিবার রাজশাহী বিজ্ঞ চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিষ্ট্রড আমলী আদলত ১ এ ৪৬৮/৪৭১/৪২০ ও ৪১৯ ধারার অপরাধ উল্লেখ করে এবং কোল্ড স্টোরের মালিক রাজশাহীর বোয়ালিয়া থানাধীন ঘোড়ামাড়া গ্রামের মোহাম্মদ হাসান(৪৫) কে এক নম্বর আসামি । সে মোহাম্মদ আলীর পুত্র অপর জন দুই নম্বর আসামি ম্যানেজার আশরাফুল হক (৪৫)। এমন জালিয়াতি ও প্রতারনার মামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে ওই এলাকার সব মহলে আনন্দ বিরাজ করছে। কারন অনেকের জমির পুরো টাকা ও কয়েক জন কর্মচারী মারা গেলেও কোন সহযোগিতা করেন নি, নামমাত্র দায়সারা কিছু দিয়ে এবং মালিকের মৃষ্টি কথা এবং মামলার ভয়ভীতির হুমকি দিয়ে থামিয়ে দেন বলেও নিশ্চিত হওয়া গেছে। ফলে মদিনা হিমাগারের এমন জালিয়াতির কারনে তাদেরকে জেল হাজতে পাঠানো উচিত বলে মনে করেন সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা।

মামলার বিষয়ে মালিক হাসান জানান, মাত্র ১১ হাজার টাকার ট্রেড লাইসেন্স নকল ছিল। এটার জন্য সব দায় ম্যানেজারের। আমি তাকে চাকুরী থেকে বরখাস্ত করেছি। আমি সরকার কে কোটি কোটি টাকা টেক্স দিয়ে থাকি। মাত্র ১১হাজার টাকার জন্য জালিয়াতি করব এটা কি আপনার বিশ্বাস হয়। তিনি আরো জানান মামলা হয়েছে জবাব দেওয়া হবে, যেটা সঠিক মনে করবেন আদালত সেটাতেই সন্তোষ প্রকাশ করব।

মামলার বিবরণে উল্লেখ, চলতি মাসের ৯ জুন তারিখে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ আল মদিনা সিডস্ নামের হিমাগারে ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অভিযান পরিচালনা করেন। ওই সময় হিগামারের হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স সন্দেহ হলে জব্দ করেন। কাগজপত্র পরিক্ষা নিরিক্ষার জন্য তানোর পৌর মেয়র ইমরুল হককে নির্দেশ দেন। পরিক্ষা নিরিক্ষা করে দেখে ২০২০ থেকে ২০২২ সাল বা চলতি বছরে হোল্ডিং ট্যাক্স ফাঁকি দিতে ট্রেড লাইসেন্স জালিয়াতি করেন। পরিক্ষা নিরিক্ষায় সেটাই প্রমান হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন প্যানেল মেয়র। এরপরও মেয়র হিমাগারের মালিক হাসান ও ম্যানেজার আশরাফুল কে একাধিক বার ডেকেও কোন গুরুত্ব দেন নি। যার কারনে তাদের নামে প্রতারণা ও জালিয়াতির মামলা করা হয়।
অথচ হিমাগার মালিক হাসান মিথ্যাচার করে বলেছিলেন ট্রেড লাইসেন্স জাল।তাকে পুনরায় হোল্ডিং ট্যাক্সের বিষয়ে বলা হলে তিনি জানান সরকারকে প্রতি বছর লাখ লাখ টাকার কর দিই। আর পৌরসভায় কর দিব না। আসলে ম্যানেজারসহ আরেক জন কর্মচারী এসব করেছেন। এর জন্য চাকুরী থেকে বাদ দিয়েছি। তাদের অপরাধের জন্য বাদ দিলেন আপনিও তো অপরাধী তাহলে কি করবেন জানতে চাইলে এড়িয়ে গিয়ে জানান যা হবে আদালতের মাধ্যমেই হোক।

প্যানেল মেয়র আরব আলী জানান, আল মদিনা সিডস্ নামের হিমাগারে হোল্ডিং ট্যাক্স ও ট্রেড লাইসেন্স মিলে ৫ লাখ ৮০ হাজার টাকার প্রতারনা করতেই জালিয়াতি করেন। তারা এত বড় ব্যবসায়ী হয়েও যদি কর লাইসেন্স জালিয়াতি করতে পারে তাহলে আরো কত কি জালিয়াতি করেছে বলা কষ্টকর।

ইউএনও পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, তাদের কাগজপত্র সন্দেহ হলে পৌর মেয়রকে যাচাই বাছাই করে জালিয়াতি প্রমান হলে মামলা করতে নির্দেশ দেওয়া আছে।

পৌর মেয়র ইমরুল হক মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করে বলেন তাদের কাগজপত্র জালিয়াতি প্রমান হওয়ায় মামলা করা হয়েছে।

স্হানীয়রা জানান হিমাগার চালু হওয়ার পর নানা দূর্ঘটনায় ৯ জন কর্মকর্তা কর্মচারী মারা যান। তার মধ্যে পৌর সংরক্ষিত কাউন্সিলর মমেনা আহম্মেদের জামাই সাহাবুল স্টোর কিপারে চাকুরী করতেন।কিন্তু হিমাগারের ভিতর থেকে আলু বোঝাই ট্রাক চাপায় মারা যান তিনি। মমেনা আহম্মেদ বলেন হিমাগারের ভিতরে মারা গেছে, ক্ষতি দেওয়ার কথা বলা হলে তারা বলেন মানুষ কি সারা জীবন বেচে থাকবে আল্লাহর মাল আল্লাহ নিয়েছে। এপর্যন্ত তারা কয়েক বারে যত সামান্য টাকা দিয়ে দিনের পর দিন ঠেলছেন আর মৃষ্টি কথা শোনাচ্ছেন। শুধু আমার জামাই না মারা গেছেন বেড়লপাড়া গ্রামের রফিকুল, গাগরন্দ গ্রামের আলাউদ্দিন, এদের কোন কিছুই দেয়নি মানুষ খেকো হিমাগারের মালিক হাসান। এছাড়াও চাপাইনবয়াবগঞ্জ জেলার মেশিন অপারেটর সাপের কামড়ে, একই জেলার ট্রলি চালক ও বডি গার্ডসহ বিভিন্ন এলাকার ৯ জন কর্মচারী হিমাগারের ভিতরেই মারা যান।
হিমাগারের সাথে বেশকিছু ব্যবসা করা ব্যক্তি নাম প্রকাশ না করে জানান, আমরা অনেক হিমাগারের সাথে ব্যবসা করেছি, কিন্তু এর মত চিটার বাটপার দেখিনি। আমরাও জানি আলুর ব্যবসায় যেমন হয় সিন্ডিকেট তেমনি চলে চিটারি। তবে আল মদিনা সিডস্এ ব্যাপক অনিয়ম দুর্নীতি চলে। প্রায় পাঁচ বছর ধরে ব্যবসা করা অবস্থায় নয়জন লোক মারা গেল, কোন ক্ষতি পুরন দেয়নি।

তাদের হিমাগারে অনেক কৃষকের রয়েছে অভিশাপ। যার কারনেই এত লোক মারা গেল, কাগজপত্র জালিয়াতি, জমি কিনে পুরো টাকা না দেওয়া, সেই প্রতিষ্ঠান ভালো থাকতে পারে না।

এছাড়াও চলতি মৌসুমে হিগামারে যান্ত্রিক ত্রুটির জন্য হাওয়া না পাওয়ায় শতশত মন আলু পঁচে গেছে বলেও জানান স্হানীয়রা।

 

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *