দশ টাকায় আজীবন বই পড়তে পারবে রাজশাহীর দিগন্ত প্রসারী সংঘে

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী শিক্ষা

মহানগর প্রতিনিধি: পাঁচ দশকেরও বেশি সময় ধরে সামাজিক কর্মকান্ড ও খেলাধুলায় খ্যাতি অর্জন করা রাজশাহীর দিগন্ত প্রসারী সংঘে স্থানীয় যুব-তরুণদের জ্ঞান অর্জনের লক্ষ্যে এবার পাঠাগার যুক্ত করা হয়েছে।

পাঠাগারটি পশ্চিমাঞ্চলের জন্য করা হলেও রাজশাহীর যে কেউ মাত্র ১০ টাকা দিয়ে সদস্য কার্ড সংগ্রহ করে আজীবন যেকোন বই পড়তে পারবেন দিগন্ত প্রসারীর পাঠাগারে।

মঙ্গলবার (১২ জুলাই) সকালে শহরের কোর্ট চত্বরে অবস্থিত দিগন্ত প্রসারী সংঘের কার্যালয়ে নতুন এই পাঠাগারের শুভ উদ্বোধন করেন রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা। এসময় রাজশাহীর বিভিন্ন স্কুল-কলেজের শিক্ষক, আইনজীবী, সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ, জনপ্রতিনিধিসহ স্থানীয় সূধীজন উপস্থিত ছিলেন।

এর আগে সেখানে সংক্ষিপ্তভাবে আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে প্রধান অতিথির বক্তব্যে সাংসদ বাদশা বলেন, যুব-তরুণ প্রজন্মকে বই পড়ায় উদ্বুদ্ধ করতে অনেক বেশি ভূমিকা রাখে পাঠাগার। রাজশাহী লাইটের মাধ্যমে অনেক আলোকিত হয়েছে। অবশ্যই এটি আমাদের উন্নতি ও গর্ব। তবে বিদ্যুৎ না তাকলে এই আলো নিভে যাওয়ারও সম্ভাবনা আছে। কিন্তু জ্ঞান চর্চার আলো যদি একবার জ্বালানো যায়, তবে সেটি কোনদিনই নিভে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। তাই বই পড়ার অভ্যাস প্রজন্ম থেকে প্রজন্মে ছড়িয়ে দিতে হবে। সোনার মানুষ গড়তে বই পড়ার অভ্যাস ভূমিকা রাখে, দেশকেও সমৃদ্ধ করে।

আগামীতে শহরের প্রতিটি এলাকায় দিগন্ত প্রসারী সংঘ পাঠাগারের শাখা করা হবে জানিয়ে ফজলে হোসেন বাদশা বলেন, ক্লাবের কার্যালয় এখানে হওয়ায় আমরা পাঠাগারের সূত্রপাত এখান থেকে করলাম। আগামীতে পুরো রাজশাহী শহরজুড়ে এর শাখা গড়ে তোলা হবে। যেখানে একই পদ্ধতিতে বই পড়ার সুবিধা থাকবে। আমি উপস্থিত শিক্ষকদের আহ্বান জানাবো- আপনারা আপনাদের প্রতিষ্ঠানের কমপক্ষে পাঁচজন শিক্ষার্থীকে সপ্তাহে অত্যন্ত একবার এই পাঠাগারে পাঠাবেন। এখানে তাদের মাত্র ১০ টাকার বিনিময়ে একটি সদস্য কার্ড প্রদান করা হবে। তারা আজীবন সেই কার্ড দিয়ে বই পড়তে পারবে।

শিক্ষকদের জাতির ‘সম্পদ’ আখ্যায়িত করে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির এই সিনিয়র সদস্য বলেন, আমি যদি আগে জানতাম এখানে এতো শিক্ষক এসেছেন; তাহলে আমি ১০০টি ফুলের মালা করে রাখতাম! ফুলের মালা করতাম তার কারণ; এটি করে পুরো বাংলাদেশকে দেখাতাম- কোথাও শিক্ষককে পুলিশের উপস্থিতিতে জুতার মালা দেওয়া হয়, আর রাজশাহী এমন জায়গা যেখানে জনগণের উপস্থিতিতে শিক্ষকদের ফুলের মালা দেওয়া হয়। এখানে ফুলের মালা নাই- তাই আমার অন্তরের মালা আপনাদের উদ্দেশে উৎসর্গ করলাম।

পাঠাগারের উদ্বোধন ঘোষণা করে এমপি বাদশা উপস্থিত শিক্ষক-আইনজীবীদের কাছে তাদের সামর্থ অনুযায়ী দিগন্ত প্রসারীর পাঠাগারে কিছু বই দেওয়ার জন্য উন্মুক্ত আহ্বান জানান। তার উদ্যোগকে স্বাগত ও আহ্বানে সাড়া দিয়ে তাৎক্ষনিকভাবেই অনেকে পাঠাগারে বিভিন্ন ধরনের বই প্রদান করেন। পরে পাঠাগারে গিয়ে সর্বপ্রথম একটি বই পড়ে রেজিস্ট্রার খাতায় স্বাক্ষর করেন ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক ফজলে হোসেন বাদশা।

দিগন্ত প্রসারী সংঘ পাঠাগারের সভাপতি সেলিম মনোয়ারের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় আরো বক্তব্য রাখেন, রাজশাহী সিটি করপোরেশনের প্যানেল মেয়র-২ ও ১ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর রজব আলী, কবিকুঞ্জের সভাপতি কবি আরিফুল হক কুমার, স্থানীয় সংরক্ষিত ওয়ার্ডের মহিলা কাউন্সিলর তাহেরা খাতুন মিলি, দিগন্ত প্রসারী সংঘের সাধারণ সম্পাদক নুরুল হক প্রমুখ। দিগন্ত প্রসারী সংঘ পাঠাগারের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মতিন এই সভাটি সঞ্চালনা করেন।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *