সরকার নির্ধারিত দামে চামড়া বিক্রি নিয়ে অভিযোগ

অর্থনীতি লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : যশোরে কোরবানি পরবর্তী চামড়ার দ্বিতীয় হাট বেশ জমজমাট। শনিবার (১৬ জুলাই) রাজারহাটে চামড়ার সরবরাহ আশানুরূপ হলেও দাম নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা। তারা বলছেন, হাটে চামড়া এনে তারা লাভ করবেন কী, বড় অংকের টাকা ক্ষতি হয়েছে। যদিও আড়তদার ও ট্যানারি মালিকদের প্রতিনিধিরা বলছেন, সরকার নির্ধারিত দামেই- এমনকি ক্ষেত্রবিশেষেও একটু বেশি দামেও তারা চামড়া কিনেছেন।

কোরবানির ঈদের পর দক্ষিণবঙ্গের সবচেয়ে বড় চামড়ার হাট যশোরের রাজারহাটে আজ প্রায় ১৫ হাজার চামড়া ওঠেছে। প্রতিবারের মতো এবারও খুলনা বিভাগসহ আশেপাশের জেলা থেকে ব্যবসায়ীরা হাটে সমবেত হন। হাটের জায়গা উপচে রাস্তার পাশেও চামড়া নিয়ে বসেন ব্যবসায়ীরা। তবে চামড়ার দাম নিয়ে তাদের আক্ষেপ ছিল।

যশোরের বাগআচঁড়া থেকে হাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী শাহ আলম বলেন, আজকের হাটে ২০০ পিস চামড়া এনেছি। এর মধ্যে ৩০ পিস ১ হাজার ২৫০ টাকা দরে বিক্রি হলেও বেশিরভাগ ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা দরে বিক্রি করতে হয়েছে। হাটে ভালো চামড়া ২৮ টাকা এবং ছোট চামড়া ২২ টাকা বর্গফুট দরে বিক্রি করায় ২০ থেকে ২২ হাজার টাকা ক্ষতি হয়েছে।

বাগেরহাট থেকে আসা রুস্তম আলী হাটে ৩০০ পিস চামড়া আনেন। এর মধ্যে বড় চামড়া ৩০ থেকে ৩২ টাকা এবং ছোট চামড়া ১০ টাকা বর্গফুট দরে বিক্রি করেছেন। সরকার নির্ধারিত ৪৪ টাকার স্থলে গড়ে ৩০ টাকা ফুট দরে বিক্রি করায় তার প্রায় ৩০ হাজার টাকার লোকসান গুনতে হয়েছে। প্রতিবারই এভাবে ক্ষতি হতে থাকায় তিনি চামড়া ব্যবসা করবেন না বলে জানিয়েছেন।

খুলনার দিঘলিয়া থেকে আসা ওয়াহেদুজ্জামান জানান, আজকের হাটে তিনি সর্বোচ্চ ২৮ টাকা দরে চামড়া বিক্রি করেছেন। এতে ১০ থেকে ১২ হাজার টাকা লোকসান হয়েছে।

বাগেরহাটের মোংলা থেকে ১৫০ পিস চামড়া আনেন নিতাই দাস। বেলা ১১ টা পর্যন্ত কাঙ্ক্ষিত দাম না পাওয়ায় চামড়া বিক্রি করেননি। তিনি বলেন, চামড়া প্রতি গড়ে খরচ ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা। অথচ ক্রেতারা ২০০ থেকে ৫০০ টাকা দাম বলেছেন।

২০০ পিস চামড়া নিয়ে গোপালগঞ্জ থেকে এসেছেন সুকুমার বিশ্বাস। বড় চামড়ায় তার ১ হাজার থেকে ১ হাজার ২০০ টাকা পর্যন্ত খরচ হয়েছে। কিন্তু ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। অর্থাৎ প্রতি বর্গ ফুটে সর্বোচ্চ ২৮ টাকা পড়েছে। এছাড়া প্রতি পিস ছাগলের চামড়ার দাম ৫ থেকে ৬ টাকা হাকা হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এসময় তিনি অভিযোগ করেন, ট্যানারি মালিক প্রতিনিধি ও আড়তদাররা চামড়ার দামের বিষয়ে যে কথা বলছেন, তা সত্য নয়। উনারা বেশি দামে কিনছেন বলে মিডিয়ার সামনে ভুল তথ্য উপস্থাপন করছেন।

এদিকে ঢাকার হেমায়েতপুর থেকে হাটে আসা খোকন ট্যানারির প্রতিনিধি আবু বকর সিদ্দিকী শাহীন বলেন, আমরা সরকার নির্ধারিত দামেই চামড়া সংগ্রহ করছি। কিছু চামড়া নির্ধারিত দামের চেয়েও বেশি দামে কিনেছি। আজকের হাটে খরিদ্দার বেশি হওয়ায় বাজার ভালো। ২ হাজার পিস চামড়া কেনার লক্ষ্য নিয়ে আজ হাটে এসেছি। ইতোমধ্যে ৬০০ এর বেশি চামড়ার কেনা হয়েছে। সর্বোচ্চ ১ হাজার ৭০০ টাকা দরে চামড়া কিনেছি।
এসময় হাটে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা সঠিক তথ্য দিচ্ছেন না বলে দাবি করেন তিনি।

হাটে আশানুরূপ চামড়া উঠেছে উল্লেখ করে বৃহত্তর যশোর চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, ঈদ পরবর্তী এ হাটে বেচাকেনা ভালো। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের নির্ধারিত দামেই ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচা করছেন।

বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে অনুরোধ জানিয়ে তিনি বলেন, গতবার চামড়া খাতের ৪ ট্যানারি মালিকদের ব্লু  (কাঁচা চামড়া যা এক সপ্তাহের মধ্যে প্রসেস হয়ে বাইরে পাঠানো হয়) ছেড়ে দেওয়ায় সারাদেশে চামড়ার দাম বৃদ্ধি পেয়েছিল। কিন্তু যখনই ব্লু খাত বন্ধ করা হয়েছে, আবারও এ খাত থমকে গেছে।

ব্লু খাত ছেড়ে দেওয়ার পাশাপাশি ২ শতাংশ সুদে চামড়া ব্যবসায়ীদের ঋণ দেওয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবি জানান তিনি।

প্রসঙ্গত, রাজারহাটে যশোরসহ খুলনা বিভাগের দশ জেলার পাশাপাশি ফরিদপুর, গোপালগঞ্জ, মাদারিপুর, ঝালকাঠি, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া কেনাবেচা করেন।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *