পশ্চিমাঞ্চল রেলে দূর্নীতিবাজ কালোবাজারিদের হাতে জিম্মি ট্রেনের টিকিট!

অর্থনীতি বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড সারাদেশ

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী রেল ওয়ে স্টেশনে বাঙালীদের ধর্মীয় উৎসব এলে, শিক্ষানগরীতে ভর্তি পরীক্ষার্থীদের আগমন ঘটলেই একটি শব্দ শোনা যায় ট্রেনের টিকিট নেই। অনলাইন সার্ভার কাজ করে না। টিকিটের টাকা অনেক সময় এপসের মাধ্যমে অথবা দালাল চক্রের মাধ্যমে নাই হয়ে যায়। পশ্চিমাঞ্চল রেলের দূর্নীতিবাজ কালোবাজারিদের হাতে ট্রেনের টিকিট জিম্মি থাকছে বলে জানাচ্ছেন সচেতন মহল।

গত কয়েকদিন ধরে এই বিষয় নিয়ে বিভিন্ন গণমাধ্যমে কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষণ করে একের পর এক সংবাদ প্রকাশও হয়েছে। টিকিট কালোবাজারি ঢাকতে চলছে নানা প্রচার প্রচারণা। গণমাধ্যমেও দেওয়া হয়েছে পক্ষপাত মূলক বক্তব্য।

গণমাধ্যমকর্মীদের অনুসন্ধানে জানা গেছে,পশ্চিমাঞ্চলের সিসিএম ও তাঁর সহযোগী রাজশাহী রেল স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম কালোবাজারি টিকিট বানিজ্যের মূলহোতা। দীর্ঘদিন একই স্থানে থাকার সুবাদে শক্তিশালী সিন্ডিকেট তৈরি করেছেন আব্দুল করিম। সিসিএম এর নির্দেশে কালোবাজারিতে জড়িত রেলের কিছু কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মাঝে টিকিট বন্টন করেন স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম। অসম বন্টনের কারণে ইতোমধ্যে আভ্যন্তরীণ কোন্দলে জড়িয়েছেন তাঁরা। এর একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে।

মূলত জরুরি প্রয়োজনে টিকিট না পেয়ে টিকিট বন্টনকারী স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিমের নিকট গিয়ে অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে টিকিট ভাগাভাগির বিষয়টি সবার নজরে পড়ে। টিকিট চেয়ে না পেয়ে, কে কিভাবে টিকিট পাচ্ছে, সেই বিষয়ে হাটে হাড়ি ভেঙ্গে দেয় শ্রমিক লীগ নেতারা। এতে ক্ষুব্ধ হয় স্টেশন ম্যানেজার। অপপ্রচারে লিপ্ত হন তিনি। প্রকৃত ঘটনা আড়াল করতে ফলাও ভাবে প্রকাশ করা হয় টিকিট নিয়ে গালাগালির বিষয়টি। ভাইরাল করা হয় ঘটনার ভিডিও টিও। যদিও ঘটনাটি ঠিক করেননি সেখানে উপস্থিত শ্রমিক লীগের একপক্ষের নেতারা।

তারা বলছেন, আমরা কাউন্টারে গিয়ে টিকিট পাই না। পাঁচবার গিয়ে টিকিট না পেয়ে কালোবাজার বা অন্যান্যরা কিভাবে টিকিট পাচ্ছেন সে বিষয়ে কথা বলতে গিয়ে অনাকাঙ্ক্ষিত আচরণ ও ঘটনার সৃষ্টি হয়েছে।

নাম প্রকাশে অনেচ্ছুক কয়েকজন রেল কর্মচারী বলেন, এ ঘটনায় শ্রমিকলীগের দুটি গ্রুপ কোন্দলে জড়িয়ে পড়েছেন। একে অপরের প্রতি তারা দোষ চাপাচ্ছেন। মেহেদি-আনোয়ার টিকিট সুবিধা ভোগ করছেন বলেও ভিডিওতে বলতে দেখা গেছে।

ঘটনার প্রত্যাক্ষদোষী ও অনুসন্ধানে বেড়িয়ে আসে থলের বিড়াল। ঘটনার সূত্রপাতে রাজশাহী রেল শ্রমিকলীগের নেতা মেহেদী হাসান ও রেল মেডিক্যালের ফার্মাসিস্ট আনোয়ারের টিকিট কালোবাজারি বিষয়টি জনসমক্ষে আসে। উক্ত দুই ব্যক্তি রেল শ্রমিকলীগের নেতা। তাদের নামে বরাদ্দ বা বন্টনে পাওয়া টিকিটগুলো তাঁরা তাদের সহযোগীর মাধ্যমে কালোবাজের বিক্রি করতো। অথচ সাধারণ মানুষ টিকিট না পেয়ে দ্বিগুণ দামে কালোবাজার থেকে টিকিট ক্রয় করতে হয়।

ইতোমধ্যে জিএম দপ্তরের বার্তাবাহক জিয়া নামে এক কর্মচারীকে টিকিট কালোবাজারি কালে হাতে নাতে আটক করেন আরএনবি সদস্যরা। পরে অবশ্য তাকে মুচলেকায় ছেড়ে দেওয়া হয়। করা হয় সাময়িক বরখাস্ত।

একটি সূত্র নিশ্চিত করেন, জিয়াকেও টিকিট দিয়েছিলেন স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম। প্রতিনিয়ত রেল কর্মচারীরা এভাবেই টিকিট কালোবাজারি করে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা।

রেলের বিভিন্ন সূত্র বলছে, স্বজন প্রীতি ও অধিক লাভের আশায় স্টেশন ম্যানেজারের টিকিট কালোবাজারি দিনের পর দিন বেড়েই যাচ্ছে। গুটিকয়েক যুবকের মাধ্যমে সরাসরি কালোবাজারে টিকিট বিক্রি করছেন স্টেশন ম্যানেজার। প্রতিমাসে ভাগ-বাঁটোয়ারা হয় কালোবাজারে টিকিট বিক্রির টাকা।

এ বিষয়ে স্টেশন ম্যানেজার আব্দুল করিম বলেন,আমার এখানে টিকিট কালোবাজারির কোন সিন্ডিকেট নেই। আমার বিরুদ্ধে আনিত অভিযোগ সব মিথ্যা। ঘটনার দিন তারা নিজেরাই গণ্ডগোল করেছেন।

কথা বলতে সিসিএম আহসানউল্লাহ ভূইয়াকে ফোন দিলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। তাই তার বক্তব্য নেওয়া সম্ভব হয়নি।

কথা বলতে জিএম (পশ্চিম) অসীম কুমার তালুকদারকে ফোন দিলে তিনি বলেন, ২% টিকিট অফিসার ও স্টাফদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়। সেই ২% টিকিট বন্টন করার দ্বায়িত্ব স্টেশন ম্যানেজারকে আমি নিজে দিয়েছি। এর বাহিরে কোন কিছু করার এখতিয়ার তাঁর নাই। ভিডিও’র ঘটনায় ওয়ালী খান ও তাঁর অনুসারীরা মিথ্যাচার করেছেন।

তিনি আরও বলেন, আমি নাকি তাদের ব্যানার ফেস্টুন ভেঙ্গেছি। জিএম এর তো কোন কাজ নাই ব্যানার ফেস্টুন ভেঙে বেড়াবে? এ ঘটনায় একজন আওয়ামী লীগ নেতা তদন্ত করতে এসেছিলেন। আমি এখানে থাকি বা না থাকি অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা নত করবো না। ঘটনার তদন্তে কমিটি করা হয়েছে। তদন্ত শেষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *