ভোজ্যতেলে দাম কমেনি, ৫-২০ টাকা বেশি নিচ্ছে দোকানিরা

জাতীয় রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহীর বাজারগুলোতে বেড়েই থাকছে ভোজ্যতেল সয়াবিনের দাম । প্রতি লিটার ও কেজিতে ৫ থেকে ২০ টাকা বেশি নিচ্ছেন বিক্রেতারা। সয়াবিনের দাম কমছেই না বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।

বুধবার (৩ আগস্ট) স্বদেশ বাণীর সরেজমিনে বাজারের দোকানগুলোতে গেলে দেখা যায়, ভোজ্যতেলের মূল্য নিয়ে ক্রেতাদের দুরবাস্থার কথা। সেই সাথে সচেতন মহলের মতামত।

রাজশাহীতে ‍সরকার নির্ধারিত দামে ভোজ্যতেল বিক্রি হচ্ছে না। দাম কমানোর পর রাজশাহীর খুচরা বাজারে এর কোনো প্রভাব পড়েনি। বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৮৫ টাকা  বিক্রি করার কথা থাকলেও বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ থেকে ২০০ টাকায়। ৫ লিটারের তেল ৯০০ থেকে ৯১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

একই ভাবে বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে খোলা সয়াবিন তেল এবং পাম তেলও। বাধ্য হয়েই বেশি দামে ভোজ্যতেল কিনছেন ক্রেতারা। আবার নগরীর চেয়ে জেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মুদির দোকানগুলোতে আরও বেশি দামে বিক্রি করছেন ব্যবসায়ীরা। ভোজ্যতেলের খুচরা বিক্রেতারা বলছেন, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কমলেও এখন বিক্রি হচ্ছে আগের কেনা ভোজ্যতেল। এ কারণে সরকার নির্ধারিত দামের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করতে হচ্ছে।

রাজশাহী সাহেব বাজারের মেসার্স  মোস্তফা নামের তেল ব্যবসায়ীদের ফোন করলে বলেন, তারা ১৬৭ টাকা লিটার খোলা তেল দিতে পারবেন।সন্দেহ হলে জানতে চান। সংবাদকর্মী পরিচয় পাওয়ায় ফোন কেটে দেয়।

জেসমিন আরা নামের একজন গৃহিনী নগরীর ভেড়িপাড়া মোড়ে বাজার করতে আসেন।

তিনি জানান, দেশে কোনো  জিনিসের দাম  বাড়লে চোখের পলকেই দাম  বেড়ে যায়। আর কমলে তা সহজে কার্যকর হয় না। এটা সরকারের ব্যর্থতা নয়। এর জন্য দায়ী স্থানীয় প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের। বাজারে সঠিক তদারকিহলে এমন হতো না।শিক্ষার আলো ছড়িয়ে লাভ হচ্ছেনা। সামাজিক সচেতনতা বাড়াতে হবে।

বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারে আসা কলেজ অধ্যক্ষ মতিউর বলেন, দাম বাড়লে  নানা অজুহাতে দাম বাড়াতে থাকে  বিক্রেতারা। ভোজ্যতেলের ক্ষেত্রে তেমনটিই ঘটছে। সরকারি নির্দেশনা উপেক্ষা করে আগের দামে সয়াবিন তেল বিক্রি করা হচ্ছে বাজারে। দাম কমার পর এ পরিস্থিতি বিরাজ করলেও দাম বাড়ার সময় দেখা দিয়েছিল ভিন্ন পরিস্থিতি। তখন সরকার নতুন দাম ঘোষণার সঙ্গে সঙ্গে খুচরাসহ সব বাজারে দাম বাড়িয়ে দেয় বিক্রেতারা। অথচ এখন দাম কমানোর কয়েক দিন পরও সেই সুফল পাচ্ছেন না ক্রেতারা।

রাজশাহী নগরীর  একাধিক ব্যবসায়ী জানান, ভোজ্যতেলের  দাম ২১ জুলাই নতুন করে দাম কার্যকর করা হয়। সরকারের নির্ধারিত নতুন দাম লিটার প্রতি বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম ১৪ টাকা কমিয়ে ১৮৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়। এছাড়া খোলা তেলের দাম লিটার প্রতি ১৬৬ টাকা এবং খোলা পাম তেলের দাম লিটারপ্রতি ১৫২ টাকা নির্ধারণ করা হয়। সে হিসাবে ভোজ্যতেলের দাম কমার কথা। তবে শুক্রবার নগরীর একাধিক কাঁচাবাজার এবং মুদি দোকান ঘুরে আগের বাড়তি দামেই ভোজ্যতেল বিক্রির প্রমাণ পাওয়া গেছে। নগরীর  মালদা কলোনী বৌ বাজার, ভেড়িপাড়া মোড়, কোর্ট বাজার, লক্ষীপুর মোড়, উপশহর নিউ মার্কেট, নিউ মার্কেটসহ কয়েযকটি বাজারে  বোতলজাত সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৯০ থেকে  ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। খোলা সয়াবিন তেল লিটার প্রতি ১৯০ টাকায় এবং পাম তেল লিটারপ্রতি ১৮৫ টাকায় বিক্রি করছেন দোকানিরা।

খুচরা ব্যবসায়ীরা বলছেন,  আমরা খোলা তেল পাচ্ছি ১৭০ টাকা কেজি । বিক্রি করছি ১৭৫ টাকা থেকে ১৮০ টাকা কেজি। তেলের ভালো মন্দ আছে। পুরাতন দামের তেলগুলো বর্তমান দামে বিক্রি করলে লস খাবো। আমার মত সব দোকানিরা একই ভাবনা ভাবছে তা নয়। অনেকেই বেশি লাভের আসায় বসে আছে।

কাজের অজুহাতে বা মালিক দোকানে নেই বলে কথা বলতে চান না বড় বড় ব্যবসায়ীরা। তারা নজর এড়িয়ে ‍রমরমা তেলের ব্যবসা্ করে যাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন সচেতন মহল।

তারা আরও জানান, ভোগান্তি শুধুই নিম্ন আয়ের লোকদের। সামান্য টিসিবির পণ্যেও ‍ভোগান্তি পোহায়। অভিযোগ ছাড়া আর খুব   বড়য সমস্যা না হলে বাজার মনিটরিং হয় না্ । বাজারে বিএসটিআই, ভোক্তা অধিকার আইন রেগুলার আসতে হবে। তাছাড়া মানহীন খাবার, আর বাজারে দাম অস্থিতিশীল থাকবে।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক তেল ব্যবসায়ী জানান, তেলের বাজারে কখনোই ঘাটতি ছিলো না। সিন্ডিকেট মহলের কারসাজি ছিলো। যখন, ম্যাজিস্ট্রেটরা মাঠে ছিলো। এভাবে থাকবে বাজার। সরকার নতিপত্রে যতই দাম নির্ধাণ করুক সরকারের দৃষ্টির অগোচরে দাম বাড়িয়ে বিক্রি করবে। এছাড়াও ব্যবসা সফল খোলা তেলেই সম্ভব ১৯০ টাকা লিটার বা কেজি তেল কিনে নিয়ে যাচ্ছেন ক্রেতারা। সেই তেল ভেজালযুক্ত সাধারণ ক্রেতারা বুঝতে পারছে না। আবার বাজারে এসে অনেকেই কম দামের তেল নিয়ে যাচ্ছেন।

এদিকে,  আন্তর্জাতিক বাজারে ভোজ্যতেলের দাম কমলেও ওইসব ভোজ্যতেলের চালান এখনো দেশে আসেনি। তাদের কাছে আগের চালানের তেল আছে। যেগুলো আগের বাড়তি দামে কেনা। যে কারণে তেলের দাম এখনো আগের দামেই বিক্রি করছেন তারা। নতুন দামের তেল বাজারে এলে তখন তারাও নতুন দামে বিক্রি করবেন। আবার অনেক ব্যবসায়ী বলছেন, সরকার দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে ঠিকই। কিন্তু বাজারে তদারকি করছে না। শুধু দাম নির্ধারণ করলেই হবে না। কোম্পানি, আড়তদার বা পাইকারিতে দাম কমানো হয়েছে কিনা সেটা তদারকি করতে হবে। তাদের কাছ থেকে আমরা কম দামে ভোজ্যতেল পেলেই খুচরায় কম দামে বিক্রি করতে পারব।

স্ব.বা/ম

 

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *