মূল্যবৃদ্ধির বেসামাল বাজারে হিমশিম খাচ্ছেন ক্রেতারা !

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার : জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধির সাথে সাথে কাঁচামাল থেকে শুরু করে মুদি দোকানের নিত্য প্রয়োজনীয় দ্রব্যগুলোর মূল্য অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়েছে। রাজশাহীর বাজারগুলোতে ক্রেতারা জিনিসপত্রের দাম নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। সংসারের চাকা ঘুরছে না। মূল্যবৃদ্ধিতে বাজারে এসে হিমশিম খাচ্ছেন বলে জানাচ্ছেন ক্রেতারা।

রবিবার (১৪ আগস্ট) সকালে রাজশাহীর সাহেববাজার, লক্ষীপুর বাজার, তালাইমারী বউবাজার, ভদ্রা কাঁচা বাজার, নিউমার্কেট, তেরখাদিয়া কাঁচাবাজার, মালদা কলোনী বউ বাজার, শালবাগান সবজি বাজারসহ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ক্রেতারা জানান ভোগান্তি শুধু নয় সংসার জীবনে বিপর্যয়ের মুখে পড়েছেন বলে ক্রেতারা জানিয়েছেন।

বিক্রেতারা জানান, জ্বালানি তেলের অস্বাভাবিক ঊর্ধ্বগতিতে বাজারে জিনিসপত্রের দাম ওঠা নামা করবেই। এতটা করবে তা আশা করেননি।প্রতিদিনই দাম বাড়ছে। সবজি বাজারের দাম বৃদ্ধির সঙ্গে পরিচিত থাকলেও কিছু করার থাকছে না। লোকসান তো করা যাবে না। দাম বেড়েছে, এর মধ্যে মাত্র কয়েকদিনের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির প্রতি কেজিতে ২০-৩০ টাকা বেড়েছে, সয়াবিন প্রতি লিটারে বেড়ছে ২০-২৫ টাকা। ডিমের হালিতে দাম ৬ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪৫ টাকায়। বাড়তি পিয়াজ ও রসুনের দামও।  বিক্রেতা বশির শেখ, শফিকুল ইসলাম জানান, কাঁচামরিচের দাম কিছুটা কমেছে। বর্তমানে কাঁচামরিচের দাম ২০০-২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ক’দিন আগেও ২৫০ টাকা দরে কাঁচামরিচ বিক্রি হয়েছে।

অন্যদিকে, সবচেয়ে বেশি বেড়েছে সয়াবিন তেলের দাম। বিক্রি হচ্ছে ১৯৫ টাকা লিটার দরে। ক’দিনের ব্যবধানে লিটারে বেড়েছে ২০-২৫ টাকা। তারা আরও বলেন, দাম বাড়ানোয় পাইকারি বিক্রেতা লাভবান হলেও খুচরা বিক্রেতা লাভবান হচ্ছে না। আগে প্রতি কেজিতে যে লাভ থাকতো এখনো তাই থাকে। বরং বেচাবিক্রি কমেছে। এতে তারা ক্ষতির মুখে পড়ছেন। শুধু ব্যবসায়িকভাবেই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন তা না, তারাও দিনশেষে বিভিন্ন নিত্যপণ্যের ক্রেতা।

ব্রয়লার মুরগি প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৯০ টাকা, যা কয়েকদিন আগে ছিল ১৩৫০ টাকা। আর সোনালি মুরগি কেজি প্রতি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ থেকে ২৭০ টাকা। যা দু’দিন আগে কেজি প্রতি ২৩০ টাকা দরে বিক্রি হয়েছে। এই দাম আরও বাড়বে বলে ধারণা করছেন সাহেববাজারের মুরগি দোকানদার মোবারক হোসেন। এদিকে বাড়তে শুরু করেছে পিয়াজের দামও। ৪০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পিয়াজ ১০ টাকা বেড়ে ৫০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রসুন কেজি প্রতি ৩০ টাকা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১০ টাকায়। আদা কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা।

গতকাল ১২ আগস্ট (শুক্রবার) ভালো মানের এক কেজি কাঁচা মরিচ ২৬০-৩০০ টাকা টাকায় বিক্রি হতে দেখা গেছে। কালচে রংয়ের (একটু নিম্নমানের) কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ২৪০ টাকা কেজি দরে হয়েছে। গত সপ্তাহেও এই কাঁচা মরিচ বিক্রি হয়েছে ১৮০-২০০ টাকা কেজি দরে।

দাম বৃদ্ধির বিষয়ে আড়ৎদাররা বলছেন, জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় পরিবহন খরচ বেড়েছে। একই সঙ্গে মহরমের ছুটির কারণে মরিচ আমদানি কমেছে। তাই দাম আরেক দফা বেড়েছে।

সাহেব বাজারের কাঁচা বাজার থেকে ২৫০ গ্রাম কাঁচা মরিচ কিনেছেন হাসিবুল ইসলাম । দাম পড়ছে ৭০ টাকা। জানতে চাইলে তিনি বলেন, দুদিন আগে মরিচ কিনতে এসেছিলাম। দাম বেশি শুনে ওইদিন চলে যাই। আজ স্ত্রীর কথায় আবার মরিচ কিনতে আসলাম। দোকানদার বলছেন, কেজি ৩০০ টাকা। উপায় না পেয়ে ১ পোয়া কিনেছি।

ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, জীবনে মরিচের এত দাম দেখিনি। এত দামে মরিচও কিনিনি। ব্যবসায়ী ওমর ফারুক বলেন, স্যার আমাদের কিছু করার নাই। আমরা বেশি টাকায় মাল কিনেছি, তাই বেশি টাকায় মাল বিক্রি করছি। ২৫০ টাকায় কিনে ২৮০ টাকায় বিক্রি করছি। আমরা কি করবো বলেন? তিনি আরো বলেন, আড়ৎদাররা বলল গতকাল মাল আসেনি।

সাহেব বাজারের এক ডিম বিক্রেতা বলেন, ডিমের দামে খামারিরা কিছুটা লাভবান হচ্ছেন। খাবারের দাম বেশি থাকলে লাভ কিছুটা কম হয়। লাল ডিম পাইকারিতে হালি ৪৪ টাকা আর সাদা ডিম ৪০ টাকা। হাঁসের ডিম ৪৮ টাকা। নগরীর শালবাগান সবজি বাজারে কথা হয় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত আমিনুল ইসলামের সঙ্গে। তিনি বলেন, ডিম-মুরগি, রসুন-পেয়াজসহ নিত্যপণ্যের দাম যেভাবে বাড়ছে, তাতে আমাদের নাভিশ্বাস উঠে যাচ্ছে। পরিবার নিয়ে খেয়ে-পড়ে বেঁচে থাকা দায় হয়ে গেছে।

মালদা কলোনিতে বাজার করতে আসা রফিকুল নামের এক ব্যাংকার বলেন, তেলের বিকল্প বাজারে কি, কে বলবেন? কোন তেলের দাম রাজশাহীতে কম নেই।  অন্যের দেশের সাথে তুলনা না করে নিজের দেশকে বেহেস্ত করতে হলে জনগণের দিকে নজর দিতে হবে আগে। কারণ নিত্যপণ্যের দামের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে আমাদের বেতন বাড়ছে না।

বাগমারা উপজেলার খামারী তালেব বলেন, গত দু’বছর ধরে পাঁচ-ছয় দফায় পোল্ট্রি ফিডের দাম বেড়েছে। আমরা লোকসানে শেষ হয়ে গেছি। গত মাসেও খাদ্যের দাম বেড়েছে। আগে ১৯শ’ টাকায় যে খাদ্য কিনেছি সেই খাদ্য এখন ৩২শ’ ৫০ টাকা। তবে, ডিমের দাম বাড়ার কারণে লাভ হচ্ছে। মিথ্যে বলবো না- ১ হাজার ডিমে এখন দেড়-দু হাজার টাকা লাভ হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, বর্তমানে খামারে লাল একশ’ ডিমের পাইকারি রেট ১ হাজার ২০ টাকা।

বরেন্দ্রীকা ছাত্রাবাসের নয়ন নামের এক ম্যানেজার এসেছেন তালাইমারী কাঁচা বাজারে। তিনি জানান, দামের নিরূপণ করতেই দিন চলে যাচ্ছে। এখানে এক দাম অন্যবাজারে আরেক দাম। মরিচ ২৫০ টাকা কেজি। কিভাবে বাজার করবো। মেসে থাকি কম খরচের জন্য। এ তো সংসার জীবনের খরচে মাস পার করতে হচ্ছে। কি করা যাবে? বাধ্য হয়ে পড়ছি আমরা। খেয়ে পরে বাঁচতে চাই আমরা।

সাদা ডিম সাড়ে ৯০০ টাকা ১০০’ ডিমের দাম। বাজারে এর চেয়ে কিছু বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে। খুচরা বাজারে মানভেদে চালের দাম প্রতি কেজিতে ৫-১০ টাকা পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি কেজি ২৮ বালাম ৫৫-৬০ টাকা, মিনিকেট মানভেদে ৬৫-৭০ টাকা, বাসমতি ৭০-৮০ টাকা ও স্বর্ণা মোটা ৪৬-৪৮ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। একাধিক খুচরা ও পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন- জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির কারণে চালের দাম কিছুটা বেড়েছে। তাছাড়া ভারত থেকেও চাল আমদানি বন্ধ, সরকার যদি চাল এল.সি করে তবে দাম নিয়ন্ত্রণে চলে আসবে।

এদিকে চালসহ নিত্যপণ্যের বাজার নিয়ন্ত্রণের ভেতরে আসবে এমনটা ভাবতে পারছেন না সাধারণ ক্রেতারা। তারা বলছেন, এই ক’য়েকদিনের ভেতরে যে দাম বেড়েছে তা মজুত পণ্য থেকেই দাম বাড়ানো হচ্ছে। জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ধাক্কা বাজারে আসলে প্রতিটি পণ্যই ক্রয় ক্ষমতার বাইরে চলে যাবে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *