স্টাফ রিপোর্টার : রাজশাহী শহরের পদ্মা পাড়সহ বিনোদনকেন্দ্র, রাস্তার ধারে, স্কুল-কলেজের বাইরে যে সকল মুখোরোচক স্ট্রীট ফুড বিক্রি করা হয় তার অধিকাংশতেই ব্যবহার করা হচ্ছে এসব ক্ষতিকর ও ভেজাল চিনি। এছাড়াও বিভিন্ন বেকারি পণ্য যেমন- কেক, বিস্কুট, পাউরুটি, পেস্ট্রী, চকলেট, চুইংগাম, আইসক্রীম, আচারসহ বাহারী সব খাবারেও এ সব ব্যবহার করা হয় বলে জানিয়েছেন প্রস্তুতকারকরা। অন্যদিকে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা জানাচ্ছেন এসব চিনি মাত্রাতিরিক্ত গ্রহণ করায় রোগের ঝুঁকি বাড়ছে চিনিতে। রোগের যা ছোট কিংবা বড় যে কোন বয়সী মানুষের নিত্যদিনের খাদ্য তালিকার উল্লেখযোগ্য একটি অংশ।
চা কিংবা কফি অথবা যে কোন মিষ্টি জাতীয় খাদ্যসামগ্রী তৈরিতে মূল উপদান হিসেবে ব্যবহৃত হয় চিনি। আর বাজারে যে সকল চিনি চোখে পড়ে তার মধ্যে রয়েছে সাদা চিনি, ব্রাউন সুগার, ঘন চিনি, স্যাকারিন, ইউরিয়া সার মিশ্রিত চিনি ইত্যাদি। তবে স্যাকারিন, ইউরিয়া সার মিশ্রিত চিনি, ঘন চিনি বা সোডিয়াম সাইক্লামেট মানবদেহের জন্য অত্যন্ত ক্ষতিকারক বলে জানা গেছে।
দেখা যায়, সাধারণ চিনির তুলনায় স্যাকারিন, ঘন চিনির দাম বাজারে কম এবং তা সাধারণ চিনির চেয়ে প্রায় ৩০০-৪০০ গুন বেশি মিষ্টি হওয়ায় পরিমাণে কম লাগে। তাই স্বল্পমূল্যে পাওয়া যায় বলে এর সঙ্গে মেশানো হচ্ছে বিষাক্ত সার ম্যাগনেসিয়াম সালফেট। যেখানে আসল চিনি ৫০ কেজি লাগে সেখানে ঘনচিনি ১ কেজিতেই যথেষ্ট। আর এই ভেজাল ঘন চিনি দিয়েই নগরীর বেকারিগুলোতে তৈরি হচ্ছে মিষ্টি ও মিষ্টি জাতীয় বিভিন্ন খাদ্যসামগ্রী। এসব খাদ্যের প্রতি খুব সহজেই আকৃষ্ট হয় শিশুরা। যেমন- চকলেট, আইসক্রিম ও বিভিন্ন ধরনের কোমল পানীয়।
বিভিন্ন অভিজাত মিষ্টির দোকানগুলোতে মিষ্টি জাতীয় খাদ্য তৈরিতে আসল চিনির বদলে ব্যবহার করে করা রাসায়নিক মিশ্রিত এই ঘন চিনি। এতে তাদের খরচ কম হয়। এছাড়াও আইসক্রিম কারখানা, স্বল্পমূল্যের জুস ও কোল্ড ড্রিংকস কারখানাগুলোতেও ব্যবহার হয় এই ঘন চিনি।
এদিকে বেকারি পণ্যে ব্যবহৃত স্যাকারিন ও ঘন চিনি রাসায়নিক যৌগ, যার কোন পুষ্টিগুন নেই। শুধুমাত্র স্বাদেই এটি মিষ্টি। প্রাথমিকভাবে এসব খাবার পেটে ব্যাথা, বমি, ডায়রিয়ার মতো অসুস্থতাসহ দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন রোগ সৃষ্টি করে থাকে মানব দেহে। তবে এসবের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার মানুষের শরীরে ডায়বেটিস বৃদ্ধি করে। এছাড়াও ঘন চিনি ক্যান্সারসহ নানা রকম রোগের স্বাস্থ্য ঝুঁকি তৈরি করে। এটা খাদ্যে মিশিয়ে ব্যবহার করলে প্রথমেই কিডনি আক্রান্ত হয়, উচ্চরক্ত চাপ বেড়ে হৃদরোগের ঝুঁকি ও ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার আশংকা বাড়ায়।
রাজশাহীর চিনি বিক্রেতা জনি বলেন, সব ধরনের পণ্যের দাম বেড়েছে। এরই সাথে বেড়েছে চিনির দামও। তাই চিনির চেয়ে দাম কম ও অনেক বেশি মিষ্টি হওয়াতে চিনির পরিবর্তে কারখানাগুলোতে বেকারি ব্যবসায়ীরা ঘন চিনি কিনে ব্যবহার করে।
স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, চিনি এমন এক খাবার যা এমনিতেই যথেষ্ট ক্ষতিকর। এবং চিনি এক প্রকার আসক্তি হিসেবে কাজ করে মানব দেহে। তাই মিষ্টি জাতীয় খাবার পরিমানে কম খাওয়া এবং তা এড়িয়ে চলা উচিত। চিনি বা মিষ্টি জাতীয় খাবার খাওয়ার অপকারিতাও রয়েছে অনেক।
এর মধ্যে অন্যতম দাঁত নষ্ট করে, ক্ষুধা বৃদ্ধি করে, উচ্চ রক্তচাপ ও হৃদরোগের ঝুঁকি বৃদ্ধি করে, ইনসুলিন হরমোনের কার্যকারিতা হ্রাস করে, কিডনি ও লিভারের রোগ বাড়ায়, বাতের ব্যাথা বাড়ায়, মিষ্টি আসক্তি ও পুষ্টির ভারসাম্যহীনতা তৈরি করে ইত্যাদি। এছাড়াও অতিরিক্ত চিনি রক্ত চলাচলে বাধা তৈরী করে থাকে। এটি ধমনির দেয়ালের পুরুত্ব বাড়িয়ে দেবার ফলে রক্তচাপ বেড়ে যায় ও এর ফলে মানবদেহে নানা ধরনের সমস্যা হয়ে থাকে।
ঘন চিনির ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে বারিন্দ মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা. শামসুল আলম বলেন, ঘন চিনিসহ বিভিন্ন ভেজাল উপাদান দিয়ে তৈরি খাদ্য কিডনি, লিভারের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকারক। এসব খাবার খেলে ক্যান্সার পর্যন্ত হতে পারে।
স্ব.বা/ম