বাগমারায় অপারেশন করছেন ৮ম শ্রেণী পাস ভুয়া চিকিৎসক !

রাজশাহী লীড স্বাস্থ্য

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার ভবানীগঞ্জ বাজারের বিতর্কিত আত তাবারা মডেল হাসপাতালের চিকিৎসক পরিচয় দেন কথিত আব্দুল মতিন ওরফে মতিন ডাক্তার।পড়ালেখায় মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের গন্ডিও পেরোতে পারেননি তিনি। কিন্তু চিকিৎসক সেজে দিব্বি করে যাচ্ছেন রোগির সিজারসহ বিভিন্ন অপারেশন।

গ্রামের সহজ-সরল মানুষ তাকে চিনে মতিন ডাক্তার হিসেবে। নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকেলও কখনো ওটি ইনচার্জ আবার কখনো ওটি এসিস্ট্যান্ট হিসেবে কাজ করে যাচ্ছেন কথিত এই ভুয়া চিকিৎসক আব্দুল মতিন। গুঞ্জন রয়েছে অনেক সময় চিকিৎসক না পেলে তিনি নিজেই অপারেশন করেন।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, আব্দুল মতিন উপজেলার কালিকাপুর গ্রামের আবুল কাশেমের ছেলে। ভবানীগঞ্জ সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ে দশম শ্রেণী পর্যন্ত পড়াশোনা করেন তিনি। তারপর ২০০৪ সালে এসএসসি পরীক্ষায় অকৃতকার্য হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে দেন। এরপর নাইট গার্ডের চাকরি নেন একটি ক্লিনিকে। তারপর ওয়ার্ড বয় হিসেবে বাগমারার একটি বেসরকারি ক্লিনিকে কাজ করেন কয়েক বছর যাবত।

বর্তমানে ভবানীগঞ্জের আত তাবারা মডেল হাসপাতালে ওটি ইনচার্জ হিসেবে কাজ করছেন তিনি। শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম শ্রেণী পাশ হলেও নিজেকে ডাক্তার হিসেবে পরিচয়ও দেন। তার অপচিকিৎসার শিকার হয়ে মৃত্যুবরণ করেছেন একাধিক রোগী। তার মধ্যে অন্যতম বাগমারা উপজেলার মাড়িয়া ইউনিয়নের গোয়ালপাড়া গ্রামের হাতেম আলীর কন্যা ডেইজি খাতুন (৩২)।

জানা গেছে, কয়েক মাস পূর্বে ২২ এপ্রিল দিবাগত রাতে সিজারিয়ানের পর আব্দুল মতিনের পরামর্শে ডেইজিকে রেফ্রিজারেটরে সংরক্ষণ করা রক্ত দেওয়া হয়ে। এতে কিছুক্ষণ পর মৃত্যু ঘটে রোগীর। ঘটনাটি ধামাচাপা দিতে মৃত্যুর খবর গোপন রেখে মাঝরাতে ডেইজী কে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের রেফার্ড করা হয়। এতেও শেষ রক্ষা হয়নি। পরবর্তী তে রোগীর অভিভাবকদের নগদ আড়াই লাখ টাকা দিয়ে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সহায়তায় মিটমাট করা হয় বিষয়টি।

এছাড়াও অভিযোগ রয়েছে, আব্দুল মতিনের তত্ত্বাবধানে গাইনোকলজিস্ট ছাড়াই আয়াদের দিয়ে প্রতিনিয়ত অবৈধ গর্ভপাত করা হয় সেখানে। কয়েকমাস পূর্বে এরকম একটি গর্ভপাত করতে যেয়ে মৃত্যুবরণ করে একটি রোগী। সেসময় বিভিন্ন গনমাধ্যমে শিরোনাম হয় খবরটি। সে সময় রাজশাহীর জনপ্রিয় অনলাইন গণমাধ্যম পদ্মাটাইমসে ২৫ জুন প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে ঘটনাটি উল্লেখ করে বলা হয়েছে- গতমাসে ভবানীগঞ্জ আঁত-তাবারা হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে এমন গর্ভপাত ঘটাতে গিয়ে এক প্রসুতির মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। পরে এই ঘটনা ধামাচাপা দিতে থানা পুলিশ সহ স্থানীয় দলীয় নেতা কর্মী কর্মীদের মুখ বন্ধ করতে পাঁচ লক্ষাধিক টাকা ব্যয় করতে হয় ওই ক্লিনিক মালিককে।

বিষয়গুলো নিয়ে কথা বলতে গত ১৯ আগস্ট শুক্রবার সন্ধ্যায় আব্দুল মতিনকে ফোন করা হলে আত তাবারা মডেল হাসপাতালের একজন নারী কর্মী কলটি রিসিভ করে বলেন, মতিন স্যার এখন ওটি তে আছেন। পরে ফোন দিতে হবে। এরপর ঐদিন রাতে একাধিকবার ফোন করা হলেও কল রিসিভ করা হয়নি।

এ বিষয়ে আত তাবারা মডেল হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মুশফিকুর রহমান জানান, আব্দুল মতিন তার প্রতিষ্ঠানে ওটি ইনচার্জ হিসেবে কাজ করেন। এছাড়াও সে সার্জনের সহকারী হিসেবে অপারেশনে অংশ নেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে আব্দুল মতিনের শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে সরাসরি কিছু না বলে জানান, মতিন ইতিপূর্বে ভবানীগঞ্জ ক্লিনিকে ১৫/২০ বছর চাকরি করেছেন।

আব্দুল মতিনের বিষয়ে ভবানীগঞ্জ ক্লিনিকের ব্যবস্থাপক আসাদুল আল ফিরোজ জানান, মতিন আমাদের ক্লিনিকে প্রথমে ওয়ার্ড বয় ও পরে ওটি বয় হিসেবে কয়েক বছর কাজ করেছে। পরবর্তীতে অনৈতিক কর্মকাণ্ডের জন্য চাকরিচ্যুত করা হয় তাকে।

ওটি ইনচার্জ ও ওটি এসিস্ট্যান্টের নূন্যতম শিক্ষাগত যোগ্যতার বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে বাগমারা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সার্জারি কনসালটেন্ট ও বিশেষজ্ঞ সার্জন ডাঃ এস বেলাল হোসেন জানান, একজন ওটি ইনচার্জকে কমপক্ষে ডিপ্লোমা নার্স হতে হবে এবং ওটিতে সার্জনের ফার্স্ট এসিস্ট্যান্ট হতে হলে অবশ্যই তাকে একজন ডাক্তার হতে হবে।

অভিযোগ রয়েছে, বাগমারায় ব্যাঙের ছাতার মতো গজিয়ে ওঠা বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টার গুলো প্রয়োজনীয় সংখ্যক নিজস্ব চিকিৎসক ছাড়াই চলছে বলে জানা গেছে। বিধি অনুযায়ী দশ শয্যার একটি ক্লিনিকের কমপক্ষে তিনজন নিজস্ব ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও বাগমারার অধিকাংশ ক্লিনিকে কোন নিজস্ব সার্বক্ষণিক চিকিৎসক নেই। নেই প্রয়োজনীয় সংখ্যক নার্স। অপারেশনের পর ক্লিনিকের হাতুড়ে ডাক্তার ও আয়াদের তত্ত্বাবধাণে ফেলে রাখা হয় রোগী। এতে বিভিন্ন সময়ে ঘটছে দুর্ঘটনা। বেসরকারি ক্লিনিকগুলোর এসকল অপকর্ম বন্ধ করতে কর্তৃপক্ষের নজরদারি ও কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি করেন ভুক্তভোগী ও স্থানীয় বাসিন্দারা।

এ বিষয়ে বাগমারা উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডাঃ মোঃ গোলাম রাব্বানী জানান, কোন প্রতিষ্ঠানের অপকর্মের অভিযোগ পেলে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।সেই সাথে কর্তৃপক্ষের নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।

সূত্র: পদ্মাটাইমস

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *