বাঘা প্রতিনিধি: শনিবার রাত ১০ টা। দ্বিতীয় তলায় ছট-ফট করছে রুগী। সেখানে নেই কোন ডাক্তার। নিচ তলায় প্যান্ডেল আর রঙ্গিন বাতির ঝলকানিতে ভরপুর বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে। তৈরী করা হয়েছে বিশাল মঞ্চ। সেই মঞ্চে জমকালো আয়োজনে চলছে কনর্সাট হিসাব রক্ষকের বিদায় অনুষ্ঠান। সিভিল সার্জন এ বিষয়ে কিছুই জানেন না ! এই অনুষ্ঠানের জন্য হসপাতালের স্টাফ এবং ঔষধ কোম্পানীর রিপ্রেজেন্টটিবদের কাছে উত্তোলন করা হয়েছে বিপুল অর্থ।
অনুষ্ঠানের সাথে সম্পৃক্ত বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারি জানান, চলতি সপ্তাহে এই হাসপাতালে কর্মরত (জিয়া পরিষদের সহ সভাপতি) হিসাব রক্ষক মজিবুর রহমান অবসর গ্রহন করেন। এর জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের বড়কর্তা (টিএইচএ) সিরাজুল ইসলাম শনিবার রাতে এক জমকালো সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান (কনসাট)সহ ভুরিভোজের আয়োজন করেন। সন্ধ্যে থেকে শুরু হয় অনুষ্ঠান-চলে একটানা রাত সাড়ে ১০ টা পর্যন্ত।
বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের নৈশ্য প্রহরী সোহেল রানা জানায়, এই অনুষ্ঠানের জন্য তার কাছে ৩’শ টাকা চাঁদা নেয়া হয়েছে। অপর একজন দ্বিতীয় শ্রেনীর কর্মকর্তা আব্দুর আজিজ জানান, এই অনুষ্ঠানের জন্য (চার শ্রেনী) প্রথম-দ্বিতীয়-তৃতীয় এবং চতুর্থ যথাক্রমে- এক হাজার, ৭’শ, ৫ শ এবং ৩’শত টাকা হারে অর্থ উত্তোলন করেছেন স্বাস্থ্য বিভাগের বড়কর্তা ডা: সিরাজুল ইসলাম।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ঔষধ কম্পানীর দু’জন রিপ্রেজেন্টটিব (কোম্পানী প্রতিনিধি) জানান, এই অনুষ্ঠানের জন্য অত্র অঞ্চলের দায়িত্বে নিয়োজিত ৪০ জন কর্মকর্তার নিকট ৫’শ টাকা হারে চাঁদা নেয়া হয়েছে। আর এটি নতুন কোন ঘটনা নয়, স্বাস্থ্য বিভাগের যে, কোন অনুষ্ঠানে তারা এভাবে অর্থ দিয়ে আসছেন।
মহিলা ওয়ার্ডে যন্ত্রনায় কাতরানো রুগী চম্পা খাতুনের স্বামী জাহাঙ্গীর হোসেন-সহ অন্যান্য রুগীর অবিভাবকরা জানান, এই হাসপাতালে অসুস্থ রুগীরা যখন দ্বিতীয় তলায় নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে ছট-ফট করছে এবং জেএসসি পরীক্ষার্থীরা পড়া-লেখায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছে ঠিক সে সময় ডাক্তার-সহ হাসপাতালের কর্মকর্তা কর্মচারীরা রঙ্গিন বাতি জেলে করছে আনান্দ উৎসব। এর ফলে রুগীরা ঠিকমত ঘুমাতেও পারেনি। তাঁরা এ বিষয়ে সরকারের উর্ধতন কর্মকর্তা সহ স্বাস্থ্য মন্ত্রনালয়ের দৃষ্টি কামনা করেছেন।
এদিকে স্থানীয় একাধিক লোকজন অভিযোগ করে বলেন, যার উদ্দেশ্যে এই আয়োজন (হিসাব রক্ষক) মজিবুর রহমান তিনি একজন কর্মকর্তা। তাঁর আয়ের সাথে ব্যায়ের কোন সংগতি নেই। বিগত সময়ে রাজশাহী কাটাখালিতে তার দ্বিতীয়তলা ভবন নির্মান, বাঘায় জমি ক্রয় এবং বে-সরকারী মেডিক্যাল কলেজে তার সন্তানকে ১৫ লক্ষ টাকা ব্যায়ের ভর্তির খবর বিভিন্ন দৈনিকে ছাপা হয়েছিল।
তাঁর বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে,অপারেশান রুমের এসি তার নিজের বাসায় লাগানো সহ ভুয়া নামে রুগী ভর্তি করে ঠিকাদারকে খাবার সরবরাহে সহায়তা, স্টেশনারী ক্রয় ও অপারেশনের যন্ত্রাংশ বিক্রীর অর্থ লোপাট, বিভিন্ন উন্নয়ন বরাদ্দে কাটচুপি, এবং বহিরাগত লোকদের সরকারি কোয়াটার ভাড়া দিয়ে সেই টাকা সরকারি কোষাগারে জমা না দিয়ে বড় কর্তার সাথে ভাগা-ভাগি’র ।
এ বিষয়ে বাঘা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের প্রধান কর্মকর্তা (টিএইচএ) ডা: সিরাজুল ইসলামের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সকল স্টাফদের কাছে অর্থ উত্তোলনের বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, হাসপাতালে ডাক্তার ছিলনা এ কথা সঠিক না। জেএসসি পরীক্ষার বিষয়টা আমার মনে ছিলনা। আমরা একই পরিবারের সদস্য হিসাবে সকল স্টাফ মিলে এ বিদায় অনুষ্ঠান করেছি। এখানে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হয়েছে,কনর্সাট হয়নি। তবে মজিবুর রহমান দাবি করেছেন, তার বিরুদ্ধে আমিত অভিযোগ ভিত্তিহীন। তিনি যা কিছু করেছেন তা সৎপথে রোজগার করে।
এ বিষয়ে রাজশাহী সিভিল সার্জন সঞ্জিব সরকারের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, বাঘা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের কনসাট চলছে, এ বিষয়ে আমার জানা নেই। তিনি বলেন, একজন কর্মকর্তাকে বিদায় দেয়ার জন্য স্বাস্থ্য বিভাগের হলরুম রয়েছে, আলাদা মঞ্চ করে কনসাট করার প্রয়োজন ছিল না। সেই হলরুমে সবাই মিলে ফেয়ারওয়েল দেয়া যেতে পারতো। তিনি এ বিষয়টি দেখবেন বলে জানান।