ন্যাপ সভাপতি অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ

চারণ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন কিংবদন্তি রাজনীতিবিদ, ধর্ম কর্ম গণতন্ত্রের নিশ্চয়তাসহ সমাজতন্ত্রের প্রবক্তা, আদর্শের বাতিঘর, বাম আন্দোলনের প্রবাদ পুরুষ বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি (ন্যাপ) সভাপতি, মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী সরকারের উপদেষ্টা, গরীবের বন্ধু, অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের ৩য় মৃত্যুবার্ষিকী আজ মঙ্গলবার (২৩ আগষ্ট)।

এ দেশের গরীব সাধারণ মানুষের মুক্তির দিশারী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ ১৯২২ সালের ১৪ই এপ্রিল তিনি কুমিল্লা জেলার দেবীদ্বার উপজেলায় বর্ধিষ্ণু গ্রাম এলাহাবাদে জন্ম গ্রহণ করেন। বাবা ছিলেন স্কুল শিক্ষক আলহাজ্ব কেয়াম উদ্দিন ভুইয়া, মাতার নাম আফজারুন্নেছা।

অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ একজন মেধাবী ছাত্র ছিলেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্নাতক সম্মানসহ অর্থনীতি শাস্ত্রে এম, এ এবং পরে পরিসংখ্যান বিষয়ে ইনেস্কোর ডিপ্লোমা লাভ করেন। ১৯৫২ সাল পর্যন্ত অর্থনীতি বিষয়ে দেশের বিভিন্ন সকরারি কলেজসহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনা করেন এবং স্বে”ছায় চাকুরী ছেড়ে সক্রিয় রাজনীতিতে আসেন। ১৯৫২ সালে মহান ভাষা আন্দোলনে তিনি সম্পৃক্ত ছিলেন। সে সময় সরকারি কর্মরত থাকার সুবাদে তার প্রাপ্ত ফ্ল্যাট ৮/ আই আজিমপুর কলোনীতে রাজনৈতিক নেতাদের ভাষা আন্দোলন সম্পর্কিত গোপন বৈঠক অনুষ্ঠিত হতো, সেটা তখন ভাষা আন্দোলনের হেডকোয়ার্টার হিসেবে পরিচিতি পায়।

১৯৫৪ সালের সাধারণ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের প্রার্থী হিসেবে তাঁর নিজ আসন কুমিল্লার দেবিদ্বার থেকে প্রভাবশালী মুসলিম লীগ প্রার্থী ও তদানিন্তন শিক্ষা মন্ত্রী মফিজ উদ্দিনকে বিপুল ভোটের ব্যবধানে পরাজিত করেন। ১৯৫৭ সালের এপ্রিলে প্রাদেশিক পরিষদে তিনিই প্রথম পুর্ববাংলার স্বায়ত্তশাসনের দাবী উত্থাপন করেন। ১৯৫৭ সালে ন্যাপ গঠিত হলে তিনি তদানিন্তন অবিভক্ত পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি যুগ্ম সম্পাদক ছিলেন।

১৯৫৮ সালে স্বৈরচারী আইয়ুব খান প্রবর্তিত সামরিক শাসনামলে বৈরী পরিবেশে থেকেও তিনি স্বৈরচারী আইয়ুব শাসনের বিরুদ্ধে গণআন্দোলন সংগঠিত করেন। এই সময়ে তাঁর বিরুদ্ধে গ্রেফতারী পরোয়ানা হুলিয়া জারী করা হয় এবং ধরিয়ে দেবার জন্য পুরস্কার ঘোষনা করা হয়। এই অনিবার্য্য কারণেই তাঁকে “আত্মগোপন জীবন” বেছে নিতে হয়। দীর্ঘ আট বছর আত্মগোপন জীবনের পরিসমাপ্ত ঘটিয়ে ১৯৬৬ সালে তিনি আবার প্রকাশ্য রাজনীতিতে ফিরে আসেন এবং বঙ্গবন্ধুর ৬ দফাকে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ দৃঢ়ভাবে সমর্থন করেছিলেন।

১৯৬৭ সালে পূর্ব পাকিস্তান ন্যাশনাল আওয়ামী পাটির (ন্যাপ) এর সভাপতি হন। স্বৈরচারী আইয়ুব এর বিরুদ্ধে সক্রিয় নেতৃত্ব দান এবং ১৯৬৯-এ ডেমোক্রেটিক এ্যাকশন কমিটি (ডাক) গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালনের ফলশ্রুতিতে তখন তাঁকে কারাবরণ করতে হয়। পরবর্তীতে পূর্ব পাকিস্তানের শ্বায়ত্বশাসন, গণতন্ত্র ও অর্থনৈতিক স্বাধীনতার প্রশ্নে তিনি আইয়ুব খান আহুত রাওয়ালপিন্ডের “গোল টেবিল বৈঠকে” পূর্ব পাকিস্তানের প্রতিনিধিত্ব করেন।
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে তিনি অনন্য ভূমিকা পালন করেন। ৭১’ এর ২৫ শে মার্চ বঙ্গবন্ধু পাকিস্তানের কারাগারে অন্তরীন হলে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরিসরে মুক্তিযুদ্ধকে তিনি সংগঠিত করেন।

৭১’ এর ১৭ই এপ্রিল মুজিব নগরে প্রবাসী সরকারের অস্থায়ী রাষ্ট্রপ্রতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম এবং প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দিন আহমেদের নেতৃত্বাধীন সরকার শপথ গ্রহণ করলে ১৮ই এপ্রিল ন্যাপের পক্ষ থেকে তিনি অস্থায়ী সরকারকে সমর্থন জানান। মুক্তিযুদ্ধকালীন প্রবাসী বিপ্লবী সরকারের “উপদেষ্টা পরিষদের” একজন অন্যতম সদস্য হিসেবে তিনি রণাঙ্গনে থেকে যেমন মুক্তিযুদ্ধকে সংঘঠিত করেছেন তেমনি আন্তর্জাতিক সমর্থন আদায়ের লক্ষ্যে জনমত গঠনে সোভিয়েত রাশিয়াসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সফর করেন। তিনি ৭১’ এর মে মাসে ন্যাপ কমিউনিস্ট পার্টি ছাত্র ইউনিয়নের ১৯ হাজার গেরিলা বাহিনী গঠনের নের্তৃত্ব দেন। ৭১’ এর সেপ্টেম্বরে তিনি জাতিসংঘে বাংলাদেশের বিপ্লবী সরকারের প্রতিনিধিত্ব করেন।

১৯৭৯ সালে তিনি সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালে অনুষ্ঠিত বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি নির্বাচনে তিনি ন্যাপ, সি,পি,বি এবং দেশের প্রগতিশীল গণতান্ত্রিক শক্তির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্ধিতা করেন। ১৯৮২ সালে স্বৈরচারী এরশাদ বিরোধী গণতান্ত্রিক আন্দোলনের প্রাক্কালে তিনি আবার কারারুদ্ধ হন। ১৯৮২ সালে ঢাকার অদূরে মদনপুরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত উপমহাদেশে একমাত্র রাজনৈতিক প্রশিক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্র “সামাজিক বিজ্ঞান পরিষদ” সকল প্রগতিশীল মহলের জন্য এক অনন্য দৃষ্টান্ত।

সংসপ্তক অধ্যাপক মোজাফফর আহমদকে ২০১৪ সালে স্বাধীনতা পদক দেওয়া হলে তিনি তা গ্রহন অপারগতা প্রকাশ করে বলেছিলেন, “রাজনীতির অর্থ দেশ ও মানুষের সেবা করা, পদ পদবীর জন্য কখনও রাজনীতি করিনি।”

বর্ণাঢ্য রাজনৈতিক জীবনের অধিকারী অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ দীর্ঘদিন অসুস্থ থাকার পর ২০১৯ সালের ২৩ আগস্ট রাজধানীর একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ৯৭ বছর বয়সে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

প্রিয় নেতার স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে ও তাঁর আত্মার শান্তি কামনায় ২৩শে আগষ্ট সকাল ৭ টায় দলীয় কার্যালয়ে কালো পতাকা উত্তোলন ও সকাল ১০ টায় দলীয় নেতাকর্মীবৃন্দ অধ্যাপক মোজাফফর আহমদের সমাধিস্থলে শ্রদ্ধা নিবেদন করা হয় । ৯ই সেপ্টেম্বর শুক্রবার বিকাল ৪ টায় কেন্দ্রীয় ন্যাপের উদ্যোগে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে অধ্যাপক মোজাফফর আহমদ স্মরণ সভা অনুষ্ঠিত হবে বলে জানা গেছে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *