বিশ্ববাজারে কমলেও ফের বাড়ল সয়াবিনে তেলের দাম

জাতীয় বিশেষ সংবাদ লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বিশ্ববাজারে সয়াবিন তেলের দাম নিন্মমুখী। এরপরও দেশে বাড়ানো হলো এর দাম। ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণ দেখিয়ে তা লিটারে ৯ টাকা পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে-যা মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর করা হয়।

পরিশোধন মিল মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ ভেজিটেবল অয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়ে দাম বৃদ্ধির বিষয়টি জানিয়েছে।

এদিকে তেলের দাম বাড়ায় ক্রেতাদের মধ্যে ক্ষোভ দেখা দিয়েছে। তারা বলছেন, বাজারে সব ধরনের পণ্যের উচ্চমূল্যের মধ্যেই তেলের দাম বাড়ানো হয়েছে। এতে আয়ের সঙ্গে ব্যয় সামলাতে ভোগান্তি আরও বাড়বে।

মিল মালিকদের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, এখন থেকে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন তেল গ্রাহক পর্যায়ে বিক্রি হবে ১৭৫ টাকায়, যা এর আগে ১৬৬ টাকা ছিল। অর্থাৎ, খোলা সয়াবিনের দাম লিটারে বাড়ছে ৯ টাকা। আর প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি হবে ১৯২ টাকায়, যা এতদিন ১৮৫ টাকা ছিল। অর্থাৎ লিটার বোতলে ক্রেতাকে ৭ টাকা করে বাড়তি গুনতে হবে। সয়াবিন তেলের ৫ লিটারের বোতল বিক্রি হবে ৯৪৫ টাকায়। সেক্ষেত্রে লিটার প্রতি দাম পড়বে ১৮৯ টাকা।

নতুন সিদ্ধান্তে সয়াবিনের দাম বাড়লেও লিটারে ৭ টাকা কমেছে পাম তেলের দাম। প্রতি লিটার পাম তেল এখন বিক্রি হবে ১৪৫ টাকায়, যা আগে ১৫২ টাকা নির্ধারিত ছিল।

এদিকে বিশ্ববাজার পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, জুনে প্রতি টন সয়াবিন তেলের মূল্য ছিল ১৭৫১ ডলার। মঙ্গলবার তা ছিল ১৫১৬ ডলার। অর্থাৎ এ সময়ে প্রতি টনে দাম কমেছে ২৩৫ ডলারেরও বেশি।

সমিতির সচিব নুরুল ইসলাম মোল্লা জানান, আন্তর্জাতিক বাজারে তেলের দাম কিছুটা কমলেও ডলারের মূল্যবৃদ্ধির কারণে আমদানি খরচ বেড়ে গেছে। সে কারণে আমরা লিটারে দাম ২০ টাকা করে বাড়ানোর প্রস্তাব করেছিলাম।

মূল্য বৃদ্ধির ঘোষণা দিয়ে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো সমিতির চিঠিতে বলা হয়, ৩ আগস্ট সয়াবিন তেলের মূল্য সমন্বয়ের বিষয়ে প্রস্তাব পাঠানো হয়েছিল। সে অনুযায়ী ১৭ আগস্ট আলোচনার পর মূল্যবৃদ্ধির এ ঘোষণা দেওয়া হলো। ২৩ আগস্ট থেকে নতুন এ দাম কার্যকর হবে।

রাজধানীর নয়াবাজার ও কেরানীগঞ্জের জিনজিরা কাঁচাবাজার ঘুরে এবং বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, খুচরা বাজারে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৮২ টাকায়, যা ১৭৫ টাকা নির্ধারিত দামের তুলনায় ৭ টাকা বেশি। পাশাপাশি প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি হয়েছে ১৯২ টাকা। আর পাম তেলের দাম কমানো হলেও আগের দরে প্রতি লিটার ১৫০-১৫২ টাকায় বিক্রি হয়েছে, যা ১৪৫ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে।

জিনজিরা কাঁচাবাজারে তেল কিনতে আসা মো. ইসমাইল বলেন, ব্যবসায়ীরা ইচ্ছা হলেই তেলের দাম বাড়ায়। কিন্তু গণমাধ্যমেই খবর শুনছি বিশ্ববাজারে তেলের দাম কমছে। তাহলে আমাদের দেশে কীভাবে তেলের দাম বাড়ে। সরকার আমাদের কথা একটুও মাথায় রাখে না। বাজারে একের পর এক পণ্যের দাম বাড়ছে। আমাদের ভোগান্তি আরও বাড়বে।

জিনজিরা কাঁচাবাজারের মুদি বিক্রেতা সাক্কুর আলম যুগান্তরকে বলেন, বাজারে নতুন দামে বোতলজাত সয়াবিন সরবরাহ নেই। দু-একদিন সময় লাগবে সরবরাহ পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে। তবে অনেক অসাধু বিক্রেতা আগের বোতলজাত সয়াবিন নতুন দামে বিক্রি করছে, যা কাম্য নয়।

জানতে চাইলে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সভাপতি গোলাম রহমান যুগান্তরকে বলেন, পরিবহণ ভাড়া বৃদ্ধির অজুহাতে অনেক পণ্যের দাম অযৌক্তিকভাবেও বাড়ছে। সেই দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে না আনতেই সয়াবিন তেলের দাম বাড়ানো হলো। এতে ক্রেতাদের ব্যয় আরও বাড়বে। তাই সংশ্লিষ্টদের উচিত তেলসহ পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে আনতে যে যে পদক্ষেপ নেওয়া যায় তা নেওয়া। ব্যবসায়ীদের সঙ্গে বসে পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করা। পরিবহণ খরচ বাড়ায় পণ্যের দাম কত হয়, তা নির্ধারণ করা। এতে অসাধুরা সুযোগ নিতে পারবে না।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *