মজুরির চেয়ে খরচই বেশি, বন্দি কিস্তির জালে

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: মজুরি বৃদ্ধির দাবিতে লাগাতার আন্দোলন চালিয়ে যাচ্ছেন চা শ্রমিকরা। তারা বলছেন, ১২০ টাকা মজুরিতে দুর্মূল্যের বাজারে টিকে থাকা দায়। আবার বিভিন্ন খাতে টাকা কেটে নেওয়ার কারণে ১২০ টাকাও তারা ঠিকমতো পান না। ফলে বাধ্য হয়েই তারা মজুরি বাড়ানোর আন্দোলনে নেমেছেন।

শ্রমিকদের আন্দোলনের ফলে এমন প্রশ্ন সামনে এসেছে যে, তাদের দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা খরচ হয় কোথায়? তারা কি আদৌ সঞ্চয় করতে পারেন?

মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের কালীঘাট, ভাড়াউড়া ও সাতগাঁও চা-বাগান ঘুরে শ্রমিকদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, দৈনিক মজুরি ১২০ টাকা হলেও এ টাকায় দিন পার হয় না তাদের। তার ওপর বিভিন্ন খাতে টাকা দিতে হয়। ফলে ঋণ করে চলতে হয় তাদের, সঞ্চয় তো দূরের কথা।

শ্রমিকদের দেওয়া হিসাব অনুযায়ী, একজন শ্রমিকের শুধুমাত্র জীবনধারণের জন্য দৈনিক খরচ ১১৫ থেকে ১৩০ টাকা। তাদের প্রতিদিনের খরচ তালিকায় আছে, এক কেজি মোটা চাল ৪৫-৫০ টাকা, কল্যাণ তহবিলে ৯ টাকা (সপ্তাহে ৬৪ টাকা), বিদ্যুৎবিল ৭ থেকে ১৬ টাকা (সপ্তাহে ৫০ থেকে ১২৫ টাকা এবং মাসে ২০০ থেকে ৫০০ টাকা), ইউনিয়ন চাঁদা ৫০ পয়সা (মাসে ১৫ টাকা), রেশন ৭০ পয়সা থেকে ২ টাকা (সপ্তাহে ৫ থেকে ১০ টাকা), তেল ১০ থেকে ১৫ টাকা, লবণ ৩ টাকা (সপ্তাহে আধা কেজি ২০ টাকা), এর বাইরে চা-পাতা ভর্তার জন্য শুকনো মরিচ, গুঁড়া মরিচ, হলুদ, মশলা, পেঁয়াজ, রসুন, মুড়ি, চানাচুর সবগুলো ৫ টাকা করে।

আগের দিনের কেনা কিছু রয়ে গেলে পরের দিন ৫ টাকার কাঁচা মরিচ কেনেন, তা দিয়ে দুই দিন চলে যায়। এর বাইরে যে শ্রমিকদের স্কুল-কলেজ পড়ুয়া সন্তান আছে, তাদের যাতায়াতেও প্রতিদিন অর্থ ব্যয় হয়। কেউ অসুস্থ হলে সেখানে খরচ আছে।

শ্রমিকরা জানান, ১২০ টাকা মজুরিতে তাদের সংসার চলে না। মজুরির চেয়ে খরচ বেশি। সে কারণে তারা সুদের ওপর ঋণ বা কিস্তি নিয়ে সংসার চালান। এ টাকা শোধ করতে করতে আবার কিস্তি নিতে হয়। আবার একদমই শোধ করতে না পারলে গরু-ছাগল বিক্রি করে দেন।

ভাড়াউড়া চা বাগানের চা-শ্রমিক বিমল হাজরা ঢাকা পোস্টকে বলেন, স্ত্রী, দুই মেয়ে আর মাকে নিয়ে আমার সংসার। আমি বাগানে কাজ করে যে আয় করি, তাতে সঞ্চয় তো দূরে থাক, ঠিকমতো সংসারই চলে না। এ কারণে সুদের ওপর কিস্তি নিতে হয়। যতদিন বেঁচে আছি, মনে হয় না এই কিস্তির জাল থেকে বেরোতে পারব। তিনি বলেন, বাজারে সব জিনিসের দাম বেড়েছে। সামনে ৫ টাকা দামে জিনিস পাব কি না তাও জানি না। এমন হলে না খেয়েই মরতে হবে।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *