রাজশাহীর বাগমারায় মা-ছেলেকে গলা কেটে হত্যা মামলার রায় আগামী বুধবার

রাজশাহী

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর বাগমারা উপজেলার দেউলা গ্রামের আকলিমা বেগম (৪৫) ও তার ছেলে জাহিদ হাসানকে (২৫) গলা কেটে হত্যার মামলাটির রায় ঘোষণা করা হবে আগামী বুধবার (১৮ সেপ্টেম্বর)। রাজশাহীর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক অনুপ কুমার চাঞ্চল্যকর এই মামলাটির রায় ঘোষণা করবেন।

আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। তিনি জানান, দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য এ বছরের এপ্রিলেই মামলাটি জেলা জজ আদালত থেকে দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে পাঠানো হয়। মামলাটিতে মোট ৫১ জন সাক্ষী ছিলেন। আদালত ৪৭ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। এরপর গত বুধবার উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক উপস্থাপন শেষে এ মামলার রায় ঘোষণার দিন ধার্য্য করা হয়।

বাগমারার দেউলা গ্রামের নিজ বাড়িতে ২০১৪ সালের ২৪ নভেম্বর রাতে আকলিমা বেগম ও তার ছেলেকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এ ঘটনায় আকলিমার বড় ছেলে দুলাল হোসেন বাদী হয়ে অজ্ঞাত কয়েকজনকে আসামি করে বাগমারা থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। এরপর থেকে বিভিন্ন সময় নানা মোড় নেয় এই জোড়া খুনের তদন্ত। তিন দফা বদল করা হয় তদন্ত কর্মকর্তা।

সর্বশেষ পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) মামলাটির তদন্ত করে। এরপর এই হত্যাকাণ্ডের রহস্য বেরিয়ে আসে। পরে ২০১৮ সালের ৩১ মে আদালতে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আলমগীর হোসেন এ মামলার অভিযোগপত্র দাখিল করেন। এতে সাতজনকে অভিযুক্ত করা হয়।

এই হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী দুইজন। এরা হলেন- নিহত আকলিমা বেগমের দেবর আবুল হোসেন মাস্টার (৫২) এবং হাবিবুর রহমান হাবিব (৪০) অপর এক ব্যক্তি। আবুল হোসেন বাগমারা উপজেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক। দেউলা রানী রিভারভিউ উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকও তিনি। আর হাবিবুরের বাড়ি রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার আলীপুর গ্রামে। তার বাবার নাম আবুল কাশেম।

মামলায় অভিযুক্ত অন্য পাঁচজন হলেন- দুর্গাপুর উপজেলার দেবীপুর গ্রামের খলিলুর রহমানের ছেলে চাকরিচ্যুত বিজিবি সদস্য আবদুর রাজ্জাক (৩৫), একই উপজেলার শ্যামপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে আব্দুল্লাহ আল কাফি (২২), একই গ্রামের লবির উদ্দিনের ছেলে রুহুল আমিন (৩০), দুর্গাপুরের খিদ্রকাশিপুর গ্রামের ছাবের আলীর ছেলে রুস্তম আলী (২৬) এবং খিদ্রলক্ষ্মীপুর গ্রামের মনিরুল ইসলাম ওরফে মনির (২৩)। এরা সবাই ভাড়াটে খুনি হিসেবে হত্যাকাণ্ডে অংশ নেন।

নিহত আকলিমা বেগমের বড় ছেলে দুলাল হোসেন জানান, ছোটবেলায় তার বাবা মারা যাওয়ার পর চাচা আবুল হোসেনই সব সম্পত্তির দেখাশোনা করতেন। দিনে দিনে তারা বড় হয়ে ওঠেন। ২০১৪ সালে তার ভাই জাহিদ হাসান রাজশাহী কলেজ থেকে দর্শন বিভাগে মাস্টার্স শেষ করেন। চাচা আবুল হোসেনের পর তার ভাই জাহিদ ছিল একমাত্র উচ্চশিক্ষিত। বিষয়টি মেনে নিতে পারতেন না চাচা। জাহিদ পড়াশোনা শেষ করে চাচার কাছ থেকে সব সম্পত্তি বুঝে নিতে চায়। এ নিয়ে চাচার সঙ্গে দ্বন্দ্ব শুরু হয়েছিল।

দুলাল জানান, তিনি আলাদা বাড়ি করে থাকেন। আর তার মা ও ভাই এক বাড়িতে থাকতেন। এই বাড়িতে জাহিদ না থাকলে আবুল হোসেন বিভিন্ন স্থান থেকে নারীদের নিয়ে গিয়ে অসামাজিক কার্যকলাপ করতেন। বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন নিয়ে গিয়ে এই নারীদের দিয়ে ব্ল্যাকমেইলও করা হতো। এসবের প্রতিবাদ করতেন তার মা। এ নিয়ে আবুল হোসেনের সঙ্গে দ্বন্দ্ব আরও বেড়ে যায়।

দুলাল আরও জানান, ২০১৩ সালে জাহিদের পড়াশোনার জন্য তার মা আকলিমা বেগম রাজশাহী মহানগরীর টিকাপাড়া এলাকায় ভাড়া থাকতেন। সেখানে হাবিবুর রহমানের সঙ্গে তার পরিচয় হয়। হাবিবুর মাদক ব্যবসা করতেন। এই কাজে তিনি আকলিমাকে ব্যবহারের চেষ্টা করতেন। কিন্তু আকলিমা এতে রাজি হননি। আর আবুল হোসেনের সঙ্গে হাবিবুরের পরিচয় ছিল। এসব দ্বন্দ্বের জের ধরে তারা আকলিমা ও জাহিদকে হত্যার পরিকল্পনা করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী তারা ভাড়াটে খুনিদের নিয়ে গিয়ে নির্মমভাবে তার মা ও ভাইয়ের গলা কেটে হত্যা করেন।

তবে এ মামলায় ন্যায় বিচার পাওয়া নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন মামলার বাদী দুলাল হোসেন। তিনি বলেন, মামলার সব আসামিই জামিনে আছেন। আদালতে যুক্তিতর্ক উপস্থাপনের দিনও কাউকে কারাগারে নেওয়া হয়নি। ফলে রায়ে আসামিদের কেমন শাস্তি হবে তা বুঝে উঠতে পারছি না।

দুলাল বলেন, হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী আবুল হোসেন খুব প্রভাবশালী। মামলার তদন্তকালে তাকে বিভিন্নভাবে বাঁচানোর চেষ্টা করা হয়েছে। কিন্তু তদন্ত কর্মকর্তা পরিবর্তনের ফলে প্রকৃত ঘটনা বেরিয়ে এসেছে। কিন্তু তাকে কখনও গ্রেপ্তার করা হয়নি। অভিযোগপত্র দাখিলের পর তিনি আত্মসমর্পণ করেছিলেন। কিন্তু মাত্র ১৭ দিনের মাথায় তিনি নিম্ন আদালত থেকেই জামিন পেয়েছিলেন।

দুলাল আসামিদের সর্বোচ্চ শাস্তি দাবি করেন। আদালতের রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী এন্তাজুল হক বাবু বলেন, মা-ছেলেকে অত্যন্ত নির্মমভাবে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছিল। আমরা মনে করি, আদালতে এ ঘটনার সঙ্গে আসামিদের সম্পৃক্ততা প্রমাণ করতে পেরেছি। তিনজন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিও দিয়েছেন। তাই রায়ে তাদের সর্বোচ্চ সাজা হবে বলেই আশা করছি।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *