কমছে না রাজশাহীর বাজারে দ্রব্যমূল্যের উত্তাপ !

রাজশাহী লীড

স্টাফ রির্পোটার : দিনের পর দিন সব কিছুর দাম বেড়েই চলেছে। বাড়ছে না আয়। এক পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির প্রভাব পড়ছে বাজারের অন্যান্য দ্রব্যের মূল্যের উপরে। কমছেই না রাজশাহীর বাজারে দ্রব্যমূল্যের উত্তাপ,এদিকে  টান পড়ছে বেতনের টাকায় বলে জানিয়েছেন ক্রেতারা।

শুক্রবার (২৬ আগষ্ট) রাজশাহীর বাজার ঘুরে দেখা যায় চাল, ও আটা কেজিতে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে এবং সয়াবিন তেলের দাম লিটারে ৭ টাকা বৃদ্ধি পেয়েছে। এ সপ্তাহে আটাশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজি যা গত দুই সপ্তাহ আগেও বিক্রি হয়েছে ৫৭ টাকায়।

গত দুই সপ্তাহ আগে মিনিকেট বিক্রি হয়েছে ৬৩ টাকা যা এই সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ৬৮ টাকা, গত সপ্তাহের থেকে ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা এবং ৫ টাকা বেড়ে আউশ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫ টাকা কেজিতে।

বাজার ঘুরে দেখা গেছে, সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে চাল, আটা, তেল ও খাসির মাংসের দাম। সেই সাথে  উঠে এসেছে আয়ের চেয়ে ব্যয় বেশি হওয়া মানুষের বাজার খরচে টানাপড়নের চিত্র।

সারোয়ার নামের একজন পণ্যের ডিলার সাহেব বাজারে আসেন বাজার করতে। তিনি বলেন, রাজশাহীতে গত ১৫ দিনের ব্যবধানে বেড়েছে চাল, আটা ও তেলের দাম। এছাড়া এক সপ্তাহের ব্যবধানে খাশির মাংস কেজিতে ৫০ টাকা বাড়তি দেখা যাচ্ছে । এভাবে দাম বৃদ্ধি হলে আমরা কি ভাবে বাঁচবো? দুর্ভোগ আর সংকটের মধ্যে দিয়েই ৫ বছর কেটে গেল। ব্যবসাতে লস। আয় কম ব্যয় বাধ্যতামূলক করতেই হচ্ছে।

চাল কিনতে আসা আব্দুর রশিদ জানান, প্রতিনিয়ত চালের দাম বাড়তেই আছে আমরা গরিব মানুষ এভাবে চাউলের দাম বাড়লে কেমন করে সংসার চালাব। আমার মতো যাদের বড় সংসার আর আয় করার মানুষ একজন আমরা তারা খুব কষ্টে জীবন-যাপন করছি চালের দাম বৃদ্ধির কারণে।

চাল ব্যবসায়ী এপি চাউল ভান্ডার থেকে জানান, চালের আমদানী কমের কারণে ও জ্বালানি তেলের দাম বাড়ায় বাইরে থেকে চাল আসার খরচ বেড়ে গেছে তাই চালের দাম কিছুটা বৃদ্ধি পেয়েছে।

চাউলের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আটার দামও। কেজিতে ৫ টাকা বেড়ে আটা বিক্রি হচ্ছে ৫৬ টাকা কেজিতে। ৫ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে তেল বিক্রি হচ্ছে ১৯০ টাকা লিটার।

এ সপ্তাহে গরুর মাংশের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বেড়েছে খাশির মাংশের দাম। ৫০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে খাশির মাংশ বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকা কেজিতে।

এছাড়া এ সপ্তাহে কিছু মাছের দাম অপরিবর্তিত থাকলেও বৃদ্ধি পেয়েছে রুই, সিলভার, মিরকা ও কাতল মাছের। বড় ইলিশ গত সপ্তাহের চেয়ে ১০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে বিক্রি হচ্ছে ১৭০০ টাকা কেজিতে, ২০০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে ছোট ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ টাকা, ৩০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা।

গত সপ্তাহের চেয়ে ১০ টাকা বেশিতে সিলভার মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৬ টাকা, কেজিতে ২০ টাকা বেড়ে মিরকা মাছ বিক্রি হচ্ছে ২২০ টাকা ও ২০ টাকা বৃদ্ধি পেয়ে কাতল মাছ বিক্রি হচ্ছে ২৫০ টাকা কেজি দরে।

মাছ কিনতে রাশেদুল ইসলাম জানান, প্রতি সপ্তাহে মাছ কিনলে আসলে দেখছি মাছের দাম কেজিতে ৫০-১০০ টাকা বৃদ্ধি। এভাবে যদি প্রতি সপ্তাহে মাছের দাম বৃদ্ধি পায় তাহলে আমরা নিম্ন আয়ের মানুষ মাংশের মতো মাছ খাওয়া ছেড়ে দিব।

মাছ কিনতে আসা ফাহমিদা আক্তার জানান, গত সপ্তাহের চেয়ে মাছের দাম আবার বেড়ে গেছে। কিছু বলার নাই যেখানে দুই কেজি মাছ কিনতাম সেখানে হয়তো এককেজি কিনবো। বাজারে মূল্যবৃদ্ধির আগুন চায়ের স্টলেও চলছে।চা প্রতি কাপ ৭ টাকা। হোটেল ও রেস্টুরেন্টেও খাবারের মূল্য তালিকা বৃদ্ধি করা হয়েছে। রান্না করতে গেলে গ্যাসের দাম বেশি, বিদ্যুতের ইউনিটের খরচ বেড়েছে। উভয় সংকট চলছে। এভাবে চললে তো মুখ দিয়ে ভুলেও বলতে পারবো না যে, আমরা ভালো আছি।

মাছ বিক্রেতা নুরুল ইসলাম জানান, বৃষ্টি ও মেঘের কারণে জেলেরা মাছ ধরতে পারছে না সে কারণে মাছ কম আসছে। আর আমদানি কম থাকার কারণে আমরা চাহিদা অনুযায়ী মাছ সরবরাহ করতে পারছি না তাই মাছের দামটা বেশি।

বাজার ঘুরে দেখা যায় মুরগি ও ডিমের দাম গত সপ্তাহের চেয়ে কম। এ সপ্তাহে ব্রয়লার মুরগি ২৫ টাকা কমে কেজিতে বিক্রি হচ্ছে ১৬৫ টাকা, ১০ টাকা কমে সোনালী মুরগি বিক্রি হচ্ছে ২৬০ টাকা এবং দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজিতে। গত সপ্তাহের চেয়ে ২ টাকা কমে লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৬ টাকা এবং সাদা ডিম বিক্রি হচ্ছে ৩৪ টাকা হালিতে।

এ সপ্তাহে অপরিবর্তিত রয়েছে সবজির বাজার। কিছু কিছু সবজির দাম কমেছে বলেও জানান সবজি ব্যবসায়ীরা। পূর্বের মূল্যে বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকা কেজি, ফুলকপি ৮০, করলা ৬০, আলু ২৫, ২০ টাকা কমে শসা বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকা, ২০ টাকা কমে টমেটো বিক্রি হচ্ছে ১২০ এবং কেজিতে ১০০ টাকা কমে কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকা কেজিতে।

এছাড়াও এ সপ্তাহে স্থিতিশীল রয়েছে মুদিসামগ্রী পণ্যের বাজার। মুদিপণ্যের সব পণ্যের দাম পূর্বের মতোই রয়েছে।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *