ছাত্রলীগ নেতাকে পেটালেন সম্পাদক, কলিজা টেনে বের করার হুমকি

রাজনীতি লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : রাজশাহী জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমির বিরুদ্ধে কলিজা টেনে বের করে নেয়ারও হুমকিসহ এক ছাত্রলীগ নেতাকে পেটানোর অভিযোগ উঠেছে। রাজশাহী বিমানবন্দরে শনিবার (৩ সেপ্টেম্বর) সকালে ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মীর সামনে আমিনুল ইসলাম সবুজ নামে ওই ছাত্রলীগ নেতাকে অমি প্রকাশ্যে বেধড়ক পিটিয়েছেন।

পেটানোর পরে ওই ছাত্রলীগ নেতার কলিজা টেনে বের করে নেয়ারও হুমকি দিয়েছেন অমি। এছাড়া অমি ওই ছাত্রলীগ নেতার পিতামাতাকে উদ্দেশ্য করে মোবাইল ফোনে দিয়েছেন অশ্লীল গালিগালাজ। পোটানোর কারণে বাম কানে শুনতে পাচ্ছেন না আহত সবুজ। তিনি
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন।

এর আগে অমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের নিজ হোস্টেলে এক ছাত্রকে রাতভর নির্যাতন করেছিলেন।

জেলা ছাত্রলীগের একাধিক সূত্র জানায়, বাগমারা উপজেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক পদপ্রত্যাশী এবং রাজশাহী মহানগরীর গ্যালাক্সি ম্যাটস ইনস্টিটিউটের ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক সবুজ সম্প্রতি ফেসবুকে একটি পোস্ট দেন। অমির বাড়িও বাগমারায়। এর পর সবুজের ওই ফেসবুক পোস্টটি জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ
সম্পাদক অমির নজর আসে। অমি পোস্টের বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার (১সেপ্টেম্বর) রাতে ফোনে মোহনপুর উপজেলা ছাত্রলীগের
সভাপতি আব্দুর রাজ্জাকের সাথে আলোচনা করেন। অমি এসময় রাজ্জাককে বলেন, সবুজ যেন তাকে ফোন দেয়। রাজ্জাক এরপর সবুজকে অমির কাছে ফোন দিতে বলেন। সবুজ রাত ১২টার দিকে অমিকে ফোন দেন।

সবুজ সাংবাদিকদের বলেন, ‘আমি ফোন দেয়ার পর অমি ফোন রিসিভি করেন। এরপর তিনি আমাকে অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজ শুরু করেন। জেলা ছাত্রলীগের একজন শীর্ষ নেতা যে ভাষায় কথা বলেছেন, এটি কল্পনাও করা যাই না। ফোনালাপের অধিকাংশ সময় তিনি আমার বাবা-মার নাম উচ্চারণ করে গালিগালাজ করেন। এসময় তিনি বলেন, তোর কলিজা টেনে বের করে ফেলব।

সবুজ বলেন, এ ঘটনার পর শনিবার সকালে রাজশাহী-৪ (বাগমারা) আসনের এমপি প্রকৌশলী এনামুল হককে বিমানবন্দরে অর্ভ্যথনা
জানানোর জন্য যায় আমি। এসময় সেখানে ছাত্রলীগের অর্ধশতাধিক নেতাকর্মী এমপির জন্য অপেক্ষা করছিলেন। আমাকে সামনে পেয়েই
অমি আমার ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েন। এরপর সবার সামনে আমাকে মারতে শুরু করেন।

অমি আমার দুই কানে বেশ কয়েকটি থাপ্পড় দেন। তার থাপ্পড়ের কারণে আমি এখন বাম কানে শুনতে পাচ্ছি না। বিষয়টি আমি ছাত্রলীগের শীর্ষ নেতাদের জানিয়েছি। আমাকে মারধর এবং বাবা-মাকে অশ্লøীল গালিগালাজের বিচার দাবি করছি। আমি বর্তমানে চরম নিরাপত্তাহীনতায় রয়েছি। আবারও যেকোনো সময় হামলার আশঙ্কা করছি।
সবুজকে মারধর এবং ফোনে গালিগালাজ দেবার বিষয়টি স্বীকার করে জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক অমি বলেন, সবুজ ফেসবুকে একটি উল্টাপাল্টা পোস্ট দিয়েছে। সে আমার এলাকার ছেলে হয়ে আমার বিরুদ্ধে কুৎসা রটনা করে। একারণে আমার মাথা ঠিক ছিল না। তাকে গালিগালাজ করে ফেলেছি। তাকে কয়েকটি চড়থাপ্পড় দিয়েছি। তাকে শাসন করেছি।

আবার বলেছি, তোমার সামনে অনেক সুযোগ আছে। ভালোভাবে ছাত্র রাজনীতি করো। এরপর তাকে আমি আদর করে দিয়েছি।

এ ব্যাপারে জেলা ছাত্রলীগের সভপাতি সাকিবুল ইসলাম রানা বলেন, মারধর ও গালিগালাজের বিষয়টি শুনেছি। ছাত্রলীগের দায়িত্বশীল পদে
থেকে কোনো নেতাকর্মীর শরীরে হাত দেওয়া ঠিক না। আমরা কর্মীদের বুকে টেনে নিয়ে রাজনীতি করব। কেন তাদেরকে মারধর করব।

সাধারণ সম্পাদক অমির বিরুদ্ধে যে অভিযোগ উঠেছে, প্রমাণিত হলে বিষয়টি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপতি এবং সাধারণ সম্পাদককে অবগত করা হবে। কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগ এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেবে।

প্রসঙ্গত, গত ২৬ জুলাই জেলা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন অমি রাজশাহী মেডিকেল কলেজের শহিদ মুক্তিযোদ্ধা কাজী নুরুন্নবী হোস্টেলে মিলন হোসেন (১৯) নামে এক এইচএসসি শিক্ষার্থীকে রাতভর নির্যাতন করেন। জেলার পুঠিয়া উপজেলার শিবপুরহাটের আলমগীর হোসেনের ছেলে আহত মিলন হাসপাতালে কয়েকদিন চিকিৎসা নেবার পর সুস্থ হন। মিলন ছাত্রলীগ নেতা অমির ব্যক্তিগত সহকারী (পিএ) হতে অস্বীকৃতি জানানোর কারণে তাকে নির্যাতন করা হয়।

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *