হকার্স একটি উদ্যোগের নাম : তাসনিয়া ইরা

অর্থনীতি লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক : ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে লেদার প্রোডাক্টস ইঞ্জিনিয়ারিং-এ পড়াশোনা করেছেন উদ্যোক্তা তাসনিয়া ইরা। আগে পেশায় একজন মার্চেন্ডাইজার ও প্রোডাকশন ম্যানেজার ছিলেন। পরে “দি হকার্স বাংলাদেশ” নামে উদ্যোগ, তিনি এর ফাউন্ডার এবং ক্রিয়েটিভ হেড।

নিজে থেকে কিছু করবেন, নিজের জন্য কিছু করবেন, নিজের একটা স্বকীয় পরিচয় হবে– এসব ভেবে উদ্যোক্তা হওয়ার স্বপ্ন দেখা শুরু হয়েছিলো। তবে সাহসের অভাব আর ব্যবসায়িক খুঁটিনাটিকে ঝামেলা মনে হতো বলে শুধু স্বপ্নই দেখে যেতেন। তার স্বপ্নগুলো সত্যি করার অনুপ্রেরণা পেয়েছেন তার স্বামী ও বাবা-মা-ভাইয়ের কাছ থেকে। উদ্যোগে ইচ্ছাশক্তির পাশাপাশি দরকার অনুপ্রেরণা, তার জন্য সেই অনুপ্রেরণা তার স্বামী। অনেকে যখন বলতেন, মেয়ে হয়ে এতো কিছু করার দরকার কী, দুয়েকটা ব্যাগ নিজেদের জন্য ডিজাইন করলেই হলো; তখন স্বামীর অনুপ্রেরণাতেই ফেসবুকে একটা পেজ খুলে শুরু করলেন হকার্স নিয়ে পথ চলা।

পথচলাটা খুব সহজ ছিল না। শুরুতে সামান্য পুঁজি নিয়ে কাঁচামাল যোগাড় করার জন্য ঘুরেছেন। মেয়েরা পাইকারি মার্কেটে তেমন যাওয়া আসা করে না বলেই হয়তো লোক চোখ ঘুরিয়ে দেখেছে, কেউ কেউ তো ‘মেয়ে মানুষ আইছে ব্যবসা করতে’ বলে উপহাসও করেছে। পরিমাণে অল্প কিনতে চাইতেন বলে অনেকে অনাগ্রহ দেখিয়েছে। আর যারা দিয়েছে দাম বাড়িয়ে তারপর দিয়েছে। তারপরও থেমে যাননি এই উদ্যোক্তা। কোয়ালিটির সাথে আপোষ করেননি। বরং খরচটা কমিয়ে কিভাবে একটা ভালমানের পণ্য তৈরি করতে পারেন সেটাতেই মনোযোগ দিয়েছেন বেশি।

বাজারে যখন বাইরে থেকে ইমপোর্ট করা পণ্যের ছড়াছড়ি, তখন দেশেই তৈরি ভালোমানের ব্যাগের সাথে পরিচয় করানোটা খুব জরুরি বলে তিনি মনে করেছিলেন। ইরা বলেন, “আমাদের দেশেই কিন্তু বড় বড় ব্রান্ডের ব্যাগ তৈরি হচ্ছে। তারপরও আমরা কেন বিদেশ থেকে আমদানি করা ব্যাগ ব্যাবহার করবো? এমন ভাবনা থেকেই ক্রেতাদের দেশীয় পণ্যের প্রতি, আমাদের পণ্যের গুণগত মানের প্রতি আস্থা তৈরি করার জন্য দি হকার্স কাজ শুরু করি।”

দেশে রয়েছে প্রচুর গার্মেন্টস ওয়েস্ট কাপড়, সোনালি আঁশ পাট আছে, আরও আছে দেশীয় কাঁচামাল ও চামড়া সম্পদ। তাই শুরুতেই ডেনিম কাপড় ও চামড়ার কম্বিনেশনে ব্যাগ তৈরি শুরু করেন। স্বল্পমূল্যে টেকসই ব্যাগ হওয়ায় ক্রেতাদের কাছ থেকে সাড়া পান খুব। সবচেয়ে বেশি ভালোলাগা কাজ করে যখন চলার পথে দেখেন তার ডিজাইনের ব্যাগ মেয়েরা স্বাচ্ছন্দে নিয়ে ঘুরছে, একজন সন্তুষ্ট ক্রেতা আবার তার বন্ধুদের মাঝে দি হকার্সের কথা বলছেন, নিজেতো কিনছেনই; সাথে অন্যকে গিফট করছেন। এই যে সবার এতো এতো ভালোবাসা উদ্যোক্তার ব্র্যান্ডের প্রতি, তা তাকে আরও এগিয়ে যাবার শক্তি যোগায়।

২০১৮ সালে অনলাইনে একটা পেজ থেকে যাত্রাটা শুরু, ২০২০ সালে নিজস্ব ফ্যাক্টরিতে দুজন কর্মী নিয়ে কোভিডকালীন স্থবির সময় পার করে আজ সগর্বে টিকে আছেন এই উদ্যোক্তা। প্রাপ্তির ঝুলিতে যোগ হয়েছে নিজেদের শোরুম, ইয়ুথ এক্সিলেন্স এওয়ার্ড-২০১৯। বারোজন কর্মীর সহযোগিতায় এখন মাসে হাজারো ব্যাগ তৈরি করছেন। নিজেদের ব্র্যান্ড ছাড়াও অন্য আরও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের সাথেও কাজ করছেন ইরা। ব্যাগ তৈরির পাশাপাশি নিজস্ব ডিজাইনের জুতার ট্রায়াল রান শেষ করেছেন।

ইতোমধ্যে দি হকার্সের পণ্য দেশ ছাড়িয়ে জর্মানি ও অস্ট্রেলিয়াতে পাওয়া যাচ্ছে। ক্রেতারা আরও বেশি ও নতুন ডিজাইনের ব্যাগ তৈরির জন্য প্রতিনিয়ত অনুপ্রেরণা দিয়ে যাচ্ছেন। ক্রেতাদের এমন বিশ্বাস ও ভালোবাসাই দি হকার্স এর সবচেয়ে বড় অর্জন বলে তিনি মনে করেন।

ভবিষ্যতে আরো ভালো মানের দেশীয় পণ্য নিয়ে লাইফস্টাইল ব্রান্ড হিসেবে দেশ ছাড়িয়ে বিশ্ববাজারে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন তাসনিয়া ইরা এবং তার দি হকার্স বাংলাদেশ।

সূত্র : উদ্যোক্তা বার্তা

স্ব.বা/ম

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *