বন্ধুরা যখন পরীক্ষা দিচ্ছিল তখন বাইরে কাঁদছিল জিনারুল

রাজশাহী শিক্ষা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক :ঘড়ির কাঁটায় তখন বেলা ১১টা। পরীক্ষার্থীরা সবাই কেন্দ্রে ঢুকে গেছে। অথচ একজন পরীক্ষার্থী কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে কান্না করছে। বৃহস্পতিবার (১৫ সেপ্টেম্বর) রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার জোতকার্ত্তিক (কারিগরি) বিএন উচ্চ বিদ্যালয় কেন্দ্রে এমনই দৃশ্য দেখা গেলো।

ওই পরীক্ষার্থীর নাম জিনারুল ইসলাম। সে উপজেলার বালুদিয়াড় টেকনিক্যাল বিএম কলেজের এসএসসি পরীক্ষার্থী।

পরীক্ষা কেন্দ্রের সামনে জিনারুল ইসলামের সঙ্গে কথা হয়। সে জানায়, নির্ধারিত সময়ে সে তার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে তৎকালীন অধ্যক্ষ নুরুল আমীনের কাছে দুই হাজার টাকা দিয়ে এসএসসি পরীক্ষার ফরম পূরণ করেছিল। তবে তাকে প্রবেশপত্র দেওয়া হয়নি।

এরই মধ্যে ওই অধ্যক্ষ নানা অনিয়মের কারণে বহিষ্কৃত হন। নতুন ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষের কাছে গেলে তার প্রবেশপত্র কলেজে নেই বলে জানান। পরে বহিষ্কৃত অধ্যক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করলে পরীক্ষার আগের দিন প্রবেশপত্র দেওয়া হবে বলে জানান। কিন্তু পরীক্ষার দিন সকালেও সে প্রবেশপত্র হাতে পায়নি। এজন্য তার বন্ধুরা পরীক্ষার রুমে ঢুকে গেলেও সে কেন্দ্রের বাইরে দাঁড়িয়ে কান্না করছিল।

জিনারুল আরও জানায়, তার বাবা একজন ভ্যানচালক। সে একমাত্র ছেলে। পরিবারের কষ্ট ঘোচাতে সে নিজেও পড়াশোনার পাশাপাশি বিভিন্ন কাজ করে অর্থ উর্পাজন করে। তার ইচ্ছা ছিল পড়াশোনা করে একটি চাকরি করে সংসারের অভাব ঘোচাবে। কিন্তু বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ নুরুল আমীন তার ফরম পূরণের টাকা বোর্ডে জমা না করায় সে প্রবেশপত্র হাতে পায়নি।

বালুদিয়াড় টেকনিক্যাল বিএম কলেজের ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ আবু কাওসার শামসুজ্জামান জানান, জিনারুল ইসলাম একজন নিয়মিত শিক্ষার্থী ছিলেন। সে বহিষ্কৃত অধ্যক্ষের কাছে ফরম পূরণের টাকা দিয়েছিল। কিন্তু তিনি ওই টাকা আত্মসাৎ করেছেন। এজন্য জিনারুল পরীক্ষা দিতে পারছে না। নানা অনিয়মের কারণে গত ৩ জুলাই উপজেলা শিক্ষা বিভাগ ওই অধ্যক্ষকে সাময়িক বহিষ্কার করে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে বালুদিয়াড় টেকনিক্যাল বিএম কলেজের বহিষ্কৃত অধ্যক্ষ নুরুল আমীন বলেন, ‘বহিষ্কার হওয়ার পর থেকে আমি আর কলেজে যাইনি। ওই শিক্ষার্থীর প্রবেশপত্রের বিষয়ে আমার কিছু জানা নেই। তাকে আমি প্রবেশপত্র দেবো এরকম কখনো বলিনি। পরীক্ষার্থীর প্রবেশপত্র বুঝিয়ে দেওয়া নতুন অধ্যক্ষের দায়িত্ব, আমার না।’

জানতে চাইলে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা জয়নাল আবেদিন বলেন, ‘বিষয়টি আজ সকালে জানতে পেরেছি। তবে এখন আর তার পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করানোর সুযোগ নেই। ওই পরীক্ষার্থী চাইলে অভিযুক্ত শিক্ষকের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে পারে।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *