রাজশাহীর গোদাগাড়ী থেকে শত কোটি টাকা নিয়ে উধাও হওয়া সেই ‘ইব্রাহিম’ কক্সবাজারে গ্রেফতার

রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীর গোদাগাড়ীর এলাকার মানুষকে অতিরিক্ত মুনাফার লোভ দেখিয়ে প্রায় ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে উধাও হয়েছিলেন ইব্রাহিম আলী (৪২)।

ভুক্তভোগীরা তার বিরুদ্ধে ১০৯টি মামলা করেন। সবগুলো মামলাতেই তার বিরুদ্ধে গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি হয়।

ঢাকার লালবাগ থানায় দায়ের করা এ রকম একটি মামলার সূত্র ধরে মঙ্গলবার কক্সবাজার থেকে ইব্রাহিম আলীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

ইব্রাহিম আলীর বাড়ি গোদাগাড়ী পৌরসভার মহিষালবাড়ী মহল্লায়। তার বাবার নাম ওমর আলী। তিনি একজন পুলিশ কর্মকর্তা ছিলেন।

ইব্রাহিমকে গ্রেফতারের পর সিআইডির পক্ষ থেকে যে ছবি প্রকাশ করা হয়েছে তাতে দেখা যাচ্ছে, ইব্রাহিমের মুখে এখন দাড়ি রয়েছে। আত্মগোপনের আগে দাড়ি ছিল না। আগের চেয়ে স্বাস্থ্যও কমিয়েছেন এই প্রতারক, যাতে সহজেই কেউ তাকে চিনতে না পারেন।

গোদাগাড়ী থানার ওসি জাহাঙ্গীর আলম জানান, তার থানায় ইব্রাহিমের নামে ১০৯টি গ্রেফতারি পরোয়ানা রয়েছে। তিনি তাকে কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলেন না। এরই মধ্যে ঢাকার লালবাগ থানায় একটি মামলা হয়। ওই মামলার সূত্রে সিআইডির একজন পরিদর্শক গোদাগাড়ী থানায় এসেছিলেন।

তিনি বলেন, লালবাগ থানার মামলায় বৃহস্পতিবার তাকে ঢাকার আদালতে হাজির করা হবে। পরে গোদাগাড়ী থানার মামলার উদ্ধৃতি দিয়ে তাকে তারা রাজশাহীতে নিয়ে আসবেন।

ওসি বলেন, প্রথম প্রথম তিনি কিছু মানুষকে বিনিয়োগের ওপরে ডেকে ডেকে উচ্চাহারে মুনাফা দেন। এতে মানুষ তার কাছে বিনিয়োগের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়েন।

এদিকে সিআইডির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গত ২৮ মে ঢাকার লালবাগ থানায় ইব্রাহিমের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়।

এতে বলা হয়, ভুক্তভোগী শহীদুল ইসলাম ও অন্যানদের নিকট থেকে প্রতারক ইব্রাহিম ২০১৮ সালে ইটভাটায় বিনিয়োগের প্রলোভন দেখিয়ে ৭ কোটি ৭৯ লাখ ৪৬ হাজার ২০০ টাকা নিয়ে পালিয়ে যান।

এই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ২০১৪ সাল থেকে ইব্রাহিম গোদাগাড়ীতে ব্রিক ফিল্ডে ইট উৎপাদন শেষে লভ্যাংশ দেয়ার মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে এবং উচ্চ হারে সুদ দেয়ার প্রতিশ্রুতিতে গোদাগাড়ীসহ রাজশাহী বিভাগের বিভিন্ন এলাকার শত শত নিরীহ লোকজনকে অর্থ বিনিয়োগ করার লোভ দেখায় এবং বিনিয়োগকৃত আনুমানিক ১০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়ে আত্মগোপন করে।

অবশেষে সিআইডি ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বিশেষ পুলিশ সুপার মোহাম্মদ কামরুজ্জামানের তত্ত্বাবধানে একটি দল কক্সবাজার থেকে ইব্রাহিমকে গ্রেফতার করে।

এদিকে স্থানীয় লোকজনের দাবি, ইব্রাহিম এলাকা থেকে প্রায় ২০০ কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে।

তারা জানান, ইব্রাহিম আলী গোদাগাড়ীতে ‘সিদ্দীক স্টোর’ নামে একটি কোম্পানি খুলেন। কোম্পানির সরকারি কোনো অনুমোদন না থাকলেও সিদ্দিক স্টোরের নামে ইব্রাহিম আলী এলাকার লোকজনের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা আমানত সংগ্রহ করে। এক লাখ টাকায় প্রতি মাসে ১৩ হাজার টাকা লাভ দিবে সিদ্দিক স্টোর- এমন প্রচারণা চালায়।

প্রথম দিকে সিদ্দীক স্টোর কয়েকজন আমানতকারীকে চুক্তি মোতাবেক লাভের অংশের টাকা পরিশোধ করলে শত শত ব্যক্তি অধিক লাভের আশায় সিদ্দীক স্টোরের মালিক ইব্রাহিম আলীর কাছে টাকা জমা দেন।

প্রতারানার শিকার বারুইপাড়া আলীপুরের তোজাম্মেল হক জানান, জমি বিক্রি করে ২৭ লাখ টাকা আমানত হিসেবে সিদ্দীক স্টোরে জমা করেন। এর বিপরীতে ৩০০ টাকার নন-জুডিশিয়াল স্ট্যাম্পে লিখিত ও সোনালী ব্যাংক গোদাগাড়ী শাখার একটি চেক প্রদান করে সিদ্দিক স্টোর।

চুক্তি অনুয়ায়ী লাভের অংশের প্রতি মাসে ১৩ হাজার টাকা করে ১ লাখ টাকার বিপরীতে ৩৯ হাজার টাকা তিনমাস পর আমানতকারীকে দেয়ার কথা রয়েছে। লাভের অংশরসহ আমানতের টাকা ফেরত না দিয়ে গত বছর ১০ জুলাই স্ত্রী ও সন্তান নিয়ে এলাকা ছেড়ে পালিয়েছে ইব্রাহিম আলী।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *