বাঘা প্রতিনিধি:
রাজশাহীর বাঘায় উপজেলার দলিল লেখকদের কাছে জিম্মি হয়ে পড়েছেন সাব রেজিষ্ট্রারসহ সাধারণ নাগরিকেরা। সাব-রেজিষ্ট্রারের সাথে দলিল লেখকদের দ্বন্দ্বে কলম বিরতি পালন করে দলিল লেখক সমিতির সদস্যরা। এতে বিড়ম্বনায় পড়েন জমি কেনা-বেচা করতে আসা নাগরিকরা।
সোমবার (১২-১১-১৮) সরেজমিনে দেখা গেছে, সাব-রেজিস্ট্রি কার্যালয়ের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ। দলিল করতে আসা নাগরিকেরা দলিল করতে না পেরে বসে আছেন। আড়ানী সোনাদহ গ্রামের জমি রেজিষ্ট্রি করতে আসা সাহাবাজ আলী জানান, সকালে কাগজপত্র নিয়ে অফিসে গেলে দলিল লেখকেরা দলিল করে দিতে রাজি হননি। পরে জানতে পারেন, দলিল লেখকেরা সাব-রেজিস্ট্রারের বিরুদ্ধে কলম বিরতি পালন করছেন। তিনি বলেন, দলিল লেখকদের কাছে সাধারণ মানুষ জিম্মি। তাঁরা যেভাবে বলবেন, সেভাবেই দলিল করতে হয়। এর বাইরে কিছু করার নেই। তাঁদের ধার্য করা অর্থ না দিলে দলিল রেজিস্ট্রি হয় না। এখানে সাব-রেজিস্ট্রারের ভূমিকা খুবই কম।
অভিযোগ উঠেছে,সপ্তাহের দুইদিন অফিস করার সুযোগে দলিল লেখকেরা প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না দিয়ে বিক্রয় দলিল করতেন। ঝামেলা এড়িয়ে সঠিক কাগজ দিয়ে সপ্তাহের ৫দিন অফিস করতে চান সাব রেজিষ্ট্রার। এতে সাব-রেজিস্ট্রারের ওপর ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেন দলিল লেখক সমতির সদস্যরা। এক পর্যায়ে অনিয়মের অভিযোগ তুলে সাব-রেজিস্ট্রারের বদলির জন্য আবেদন করেন দলিল লেখকরা। বিষয়টি জানার পর সপ্তাহের ৫দিন অফিস করাসহ ক্রেতা-কিক্রেতা ছাড়া দলিল লেখকদের অফিসে যেতে নিষেধ দিয়ে নোটিশ টাঙ্গিয়ে দেন সাব রেজিষ্ট্রার। সোমবার (১২-১১-১৮) এই নোটিশ দেওয়ার পর সকাল ১০ টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কলম বিরতি পালন করে দলিল লেখকরা। নির্বাহি অফিসারের কার্যালয়ে সাব রেজিষ্ট্রার ও দলিল লেখক সমিতির নেতাদের ঘন্টা ব্যাপি রুদ্ধতার বৈঠকের পর স্বাভাবিক কার্যক্রম শুরু হয়।
দলিল লেখকদের দাবি, দলিল করতে আসা ব্যক্তিরা অনেক সময় যথাযথ কাগজপত্র নিয়ে আসেন না। তাই তাঁরা তাঁদের সহযোগিতা করতে পারেন না। তা ছাড়া সাব-রেজিস্ট্রার তিথি রানি মন্ডল তহশিল অফিসের পরচা (হাতে লেখা কাগজ) দিয়ে জমি রেজিস্ট্রি করতে রাজি না হওয়ায় সমস্যা দেখা দেয়।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মমিনুল ইসলাম বলেন, বর্তমান সাব-রেজিস্ট্রার যেসব কাগজপত্র চান, তা তুলতে অনেক সময়ের প্রয়োজন। তাই সপ্তাহের দুইদিন অফিস করার দাবি করেছেন। আগের সাব-রেজিস্ট্রাররা দলিল লেখক সমিতির সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করতেন। তিথি রানি মন্ডল তা করছেন না।
উপজেলা দলিল লেখক সমিতির সভাপতি স্বপন সরকার বলেন, দলিল লেখকের তুলনায় সে পরিমান দলিল হয় না। ব্যক্তি বিশেষে ছাড় দিতে হয়। সমিতির আওতায় সদস্যরা সাব-রেজিষ্ট্রারের সাথে অন্যায় দাবি নিয়ে কোন ঝামেলা করি না।
সাব-রেজিষ্ট্রার তিথি রানী মন্ডল বলেন, দুইদিনের কাজের চাপে দলিল লেখকেরা প্রয়োজনীয় কাগজ ব্যতিরেখে বিক্রয় দলিল করতেন। সরকারি চাকরির নিয়ম অনুযায়ী ছুটির দিন ব্যতিত প্রতিদিন জমি রেজিষ্ট্র করতে চান তিনি। আমি আইনের বাইরে কিছু করতে না চাওয়ায় তাদের সাথে শুরু হয় দ্বন্দ্ব।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা শাহিন রেজা বলেন, অভিযোগের প্রেক্ষিতে উভয়কে তার কার্যালয়ে ডেকে সমঝোতা করা হয়েছে। সপ্তাহের দুইদিন সকাল ১০ টা থেকে বিকেল সাড়ে ৩টা পর্যন্ত অফিস করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।