স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহী নগরের কাটাখালি থানার খিদিরপুর মিডিলচর (মধ্যচর) এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযানের সময় গোয়েন্দা পুলিশের উপর হামলা ঘটনায় ছয়জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সোমবার রাতে পুলিশ ওই এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্য্য খিদিরপুর মধ্যচরের নরুল মাঝি (৩৭) ও গিয়াস উদ্দিনের (৩৮) নাম জানা গেছে। নগর গোয়েন্দা পুলিশ অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করে বলে জানিয়েছেন কাটাখালি থানার ওসি নিবারন চন্দ্র বর্মন।
তিনি বলেন, পুলিশের উপর হামলার ঘটনায় দুপুর পর্যন্ত থানায় কোন মামলা হয়নি। গোয়েন্দা পুলিশের পক্ষ থেকে মামলাটি দায়ের করা হবে। মামলা হওয়ার পর কাটাখালি থানা পুলিশ ঘটনাটি তদন্ত করবে বলে জানিয়েছেন ওসি মেহেদি হাসান।
এদিকে, পুলিশ আতঙ্কে পুরুষ শূন্য হয়ে পড়েছে প্রায় চার হাজার জনপদের খিদিরপুর মধ্যচর। ঘটনার পর রাতেই গ্রামটি পুরুষ শূন্য হয়ে পড়ে। সোমবার সকাল থেকে নারীদেরকেও গ্রাম ছাড়তে দেখা গিয়েছে। তারা নদী পার হয়ে আত্মীয় সজনদের বাড়িতে আশ্রয় নিচ্ছেন। তবে ঘটনার পর পুলিশ গিয়ে চিরনী অভিযান ও বাড়ি বাড়ি তল্লাশীর নামে লুটপাট করেছে বলে অভিযোগ করেছেন স্থানীয়রা।
নুরেখা বেওয়া বলেন, দুইটি মহিষ বিক্রির দুই লাখ ৩০ হাজার টাকা তার ঘরের ট্রাংকে রাখা ছিল। ঘর তল্লাশীর সময় পুলিশ ট্রাংকের তালা ভেঙ্গে তছনছ করে। পুলিশ যাওয়ার পর সে টাকা পাওয়া যায়নি। এ ছাড়াও তার দোকানের মালামাল ও বাড়ির ১০টি মুরগি পুলিশ নিয়ে গেছে বলে অভিযোগ করেন নুরেখা।
হাতেমের স্ত্রী হানিফা খাতুন বলেন, তার বাড়ি থেকে ২০ হাজার টাকা, একটি সোনার আংটি, পিতলের বাসনপত্র নিয়ে গিয়েছে। এমনকি তারা তার বাড়ি থেকে মুরগির ডিমগুলোও নিয়ে গেছে বলে জানান হানিফা খাতুন।
তবে লুটপাটের অভিযোগ অস্বীকার করে মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারি কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, সাধারণ মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হন সে জন্য অভিযানে থাকা কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিয়েছেন মহানগর পুলিশ কমিশনার। পুলিশকে বিতর্কিত করতে স্থানীয়রা এ সব অভিযোগ তুলতে পারে। তবে এ নিয়ে লিখিত অভিযোগ পাওয়া গেলে সেটি তদন্ত করা হবে বলে জানান পুলিশের এই কর্মকর্তা।
সোমবার রাত ৮টার দিকে রাজশাহী নগরের কাটাখালি থানার খিদিরপুর মধ্যচর এলাকায় মাদক বিরোধী অভিযানের সময় গোয়েন্দা পুলিশের উপর হামলা হয়। এতে এক এএসআইসহ দুই পুলিশ আহত হন। আহত এএসআই মাহাবুব হোসেন ও কনস্টেবল সুজনকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে বলে জানায় পুলিশ।
মহানগর পুলিশের মুখপাত্র ও সিনিয়র সহকারি কমিশনার ইফতে খায়ের আলম বলেন, নগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল মাদক উদ্ধারে অভিযান চালায়। এ সময় ১০০ বোতল ফেনসিডিলসহ আক্কাস আলী নামের এক মাদক ব্যবসায়ীকে পুলিশ ধরে ফেলে। পরে তার সহযোগিরা এসে পুলিশের উপর হামলা করে আক্কাসকে ছিনিয়ে নিয়ে যায়। এ সময় তারা দুই পুলিশকে পিটিয়ে জখম করে। পরে খবর পেয়ে কাটাখালি থানা থেকে অতিরিক্ত পুলিশ গিয়ে তাদের উদ্ধার করে হাসপাতালে পাঠায়। এএসআই মাহাবুবকে ৩১ নং ওয়ার্ডে ও কনেস্টেবল সুজন ৮ নং ওয়ার্ড চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
কাটাখালি ইউনিয়ন পরিষদের ৮ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোস্তফা হোসেন জানান, খিদিরপুর মধ্যচর (মিডিলচর) পূর্বপাড়ায় ৭ থেকে ৮ জন মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের একটি দল সাদা পোষাকে মাদক বিরোধী অভিযান চালায়। এ সময় তারা সামনে ছেলে মেয়ে যাকে পেয়েছে তাকে লাঠিপেটা করে। এক পর্যায়ে গ্রামের লোকজন ক্ষুদ্ধ হয়ে তাদের উপর হামলা চালায়। এ সময় অন্য পুলিশ সদস্যরা পালিয়ে গেলেও দুইজনকে ধরে পিটিয়ে জখম করে বলে দাবি করেন স্থানীয় এই জনপ্রতিনিধি।