সৌদি থেকে এসে স্ত্রীকে হত্যার পর আত্মহত্যা, কারণ খুঁজছে পুলিশ

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: সৌদি আরব প্রবাসী নোমান ১৬ দিন আগে দেশে এসেছেন। এসে তিনি তার স্ত্রী শামীমাকে নিয়ে ঢাকায় এক বন্ধুর বাসায় ওঠেন ১১ সেপ্টেম্বর। চার মাস আগে তিনি ছুটি শেষে সৌদি আরব গিয়েছিলেন। স্ত্রীকে ঢাকা ঘুরিয়ে দেখাবেন বলে তাকে নিয়ে বন্ধুর বাসায় ওঠেন। কিন্তু কী এমন হয়েছিল যে দেশে এসে স্ত্রীকে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করলেন? তাদের দুজনের মৃত্যুর কারণ খুঁজছে পুলিশ।

গতকাল রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) রাত সাড়ে ১০টার দিকে ৯৯৯ খবর পেয়ে মোহাম্মদপুরের বাবর রোডের একটি বাসার তৃতীয় তলা থেকে নোমানের ঝুলন্ত মরদেহ ও স্ত্রী শামীমাকে বিছানায় মৃত অবস্থায় পায় মোহাম্মদপুর থানা পুলিশ। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায় পুলিশ।

নিহত নোমানের ফুফা কামাল হোসেন বলেন, নোমান সৌদি আরব থাকতেন। তার বাবা অসুস্থ হয়ে পড়লে নোমানকে তার বাবা দেশে এসে বিয়ে করার জন্য বলেন। পরে নোমান দেশে এসে পারিবারিকভাবে শামিমাকে গত বছরের নভেম্বরে বিয়ে করেন। বিয়ের পর নোমান আবার সৌদি চলে যান। এর মাঝে নোমানের সঙ্গে তার বাবার কোনো যোগাযোগ ছিল না। চার মাস আগে নোমান আবার সৌদি আরবে চলে যায়। গত ৯ সেপ্টেম্বর সৌদি আরব থেকে দেশে আসেন। এসে সরাসরি তার শ্বশুরবাড়ি থেকে শামীমাকে ঢাকায় নিয়ে আসেন। এসে তার একটি বন্ধু বাসায় ওঠেন। পরে গতকাল রাতে খবর পেয়ে এসে দেখি নোমান ও শামীমা মারা গেছেন। পুলিশ জানায়, শামীমাকে হত্যা করার পর নোমান ফ্যানের সঙ্গে গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন।

নিহত শামীমার ভাই শামীম হোসেন বলেন, আমার বোনের সঙ্গে প্রায় এক বছর আগে বিয়ে হয়। আমার বোন আগামী বছর এইচএসসি পরীক্ষা দিবে। পড়ালেখার কারণে তাকে তুলে নেওয়া হয়নি। সে আমাদের বাড়িতেই থাকত। বোনজামাই দেশে এসে আমার বোনকে ঢাকা ঘুরিয়ে দেখানোর কথা বলে হত্যা করে নিজেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছেন। বোনজামাই বিদেশ থাকাকালীন বোনের সঙ্গে কোনো ধরনের মনোমালিন্য হয়নি। কী কারণে এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন সে বিষয়ে কিছু বুঝতে পারছি না। আমাদের আত্মীয়দের মাধ্যমেই দুজনের বিয়ে হয়েছিল। কাউকে না জানিয়ে কি কারণে তিনি দেশে এসে আমার বোনকে ঢাকায় নিয়ে গেলেন বুঝতে পারলাম না। যদি জানতাম তার সঙ্গে কোনো মনোমালিন্য বা ঝগড়া হয়েছে তাহলে কিছু আঁচ করতে পারতাম।

তিনি আরও বলেন, বিদেশ থেকে এমন কোনো চিন্তা-ভাবনা করে এসেছিলেন কিনা সে বিষয়েও কিছু বুঝতে পারছি না। এইচএসসি পরীক্ষার পর তাকে তুলে নেওয়ার কথা ছিল। দুজনের একজনও বেঁচে নেই। কী ঘটনা ঘটেছিল জানতে পারছি না। আমাদের কারো প্রতি কোনো অভিযোগ নেই। আমাদের বাড়ি ভোলার লালমোহন থানার চরবুতা গ্রামে।

নাম প্রকাশের অনিচ্ছুক একজন জানান, স্বামী বিদেশ স্ত্রী দেশে থাকলে বিভিন্ন রকমের সন্দেহের সৃষ্টি হয়। নোমান হয়তো এমন কোনো সন্দেহের বশে দেশে এসে তাকে ঢাকায় নিয়ে গিয়ে হত্যার পর নিজে আত্মহত্যা করেছে। যেহেতু তারা কেউই বেঁচে নেই তাই বিভিন্ন রকম সন্দেহ তৈরি হতে পারে।

তেজগাঁও বিভাগের মোহাম্মদপুর জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (এসি) মো. মুজিব পাটোয়ারী ঢাকা পোস্টকে বলেন, দিনের যেকোনো সময় প্রথমে স্ত্রীকে গলা টিপে বা বালিশ চাপা দিয়ে হত্যার পর নিজেই গলায় ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেছে বলে মনে হয়েছে। রাতে আলামত সংগ্রহের জন্য সিআইডির ফরেনসিক টিম গিয়েছিল। ঘটনাস্থলে গিয়ে দেখি, নোমান চাদর পেঁচিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ও শামীমাকে ফ্লোরে তোষকের ওপর মৃত অবস্থায় পাই। কী কারনে এ ঘটনা ঘটেছে তার কারণ এখনো খুঁজে পাওয়া যায়নি। তিনি আরও বলেন, এই ঘটনাটি দিনের বেলা যেকোনো সময় ঘটে থাকতে পারে। রুমের লাইটও বন্ধ ছিল।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মোহাম্মদপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবুল কালাম আজাদ বলেন, আমরা খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে যাই। পরে তাদের মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে মর্গে পাঠানো হয়েছে। কী কারণে এ ঘটনা ঘটেছে তার তদন্ত চলছে। ময়নাতদন্তের রিপোর্ট পেলে তাদের মৃত্যু সঠিক কারণ জানা যাবে। এ ঘটনায় মোহাম্মদপুর থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *