কুতুবের জামিনে আপিল বিভাগের পর্যবেক্ষণ

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: শুধুমাত্র বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় দন্ডতি অপরাধীকে জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এক্ষেত্রে অপরাধের গভীরতা বিবেচনা করতে হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।

আদালত বলেছেন, শ্বশুরসহ কয়েকজন আত্মীয়ের নামে ১০ কাঠার একটি প্লট বরাদ্দ করে আত্মসাতের ঘটনায় ভূমি মন্ত্রণালয়ের সাবেক প্রশাসনিক কর্মকর্তা কুতুব উদ্দিন আহমেদকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আদেশ ন্যায়সঙ্গত হয়নি। এ জামিনের সিদ্ধান্ত ছিল অবিবেচনাপ্রসূত ও ন্যায়ভ্রষ্ট।

ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে শ্বশুর ও আত্মীয়-স্বজনদের নামে প্লট বরাদ্দের মামলায় পাঁচ বছরের কারাদন্ডপ্রাপ্ত কুতুব উদ্দিনকে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল করে গত ৩১ আগস্ট আদেশ দিয়েছিলেন আপিল বিভাগ। আপিল বিভাগের জ্যেষ্ঠ বিচারপতি মো. নূরুজ্জামানের নেতৃত্বাধীন তিন সদস্যের আপিল বেঞ্চ এ আদেশ দেন। বেঞ্চের অপর দুই সদস্য হলেন বিচারপতি বোরহান উদ্দিন ও বিচারপতি কৃষ্ণা দেবনাথ।

গত ৩০ আগস্ট শুনানি শেষে রায়ের জন্য ৩১ আগস্ট দিন ঠিক করেছিলেন আপিল বিভাগ। ওইদিন আদালতে কুতুব উদ্দিনের পক্ষে শুনানি করেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী অ্যাডভোকেট মুনসুরুল হক চৌধুরী। দুদকের পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান।

সোমবার (২৬ সেপ্টেম্বর) এ সংক্রান্ত রায় প্রকাশের বিষয়টি দুদকের সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট মো. খুরশীদ আলম খান জাগো নিউজকে নিশ্চিত করেন।

রায়ে আদালত বলেছেন, জামিন দেওয়ার বিষয়টি আদালতের স্বেচ্ছাধীন ক্ষমতা। অপরাধ জামিনযোগ্য হলে বিচারাধীন আসামির জামিন নিশ্চিত করতে হবে। অপরাধ অজামিনযোগ্য হলে অসুস্থ ও জরাগ্রস্ত বন্দি, নারী ও শিশুর জামিন বিবেচনার সুযোগ আদালতের রয়েছে। এক্ষেত্রে বিচারাধীন বা দন্ডতিআসামির জামিন মঞ্জুরের বিষয়টি পুরোপুরি ভিন্ন। একসঙ্গে মেলানোর সুযোগ নেই।

খুরশীদ আলম খান জানান, রোববার (২৫ সেপ্টেম্বর) প্রকাশিত রায়ের পর্যবেক্ষণে আপিল বিভাগ বলেছেন, যখন হাইকোর্ট ডিভিশন দেখবে একটি মামলা শুনানির জন্য প্রস্তুত তখন ওই মামলার আসামিকে জামিন না দিয়ে আপিল শুনানি করা উচিত। শুধু বয়স ও শারীরিক অসুস্থতা বিবেচনায় নিয়ে দন্ডতি অপরাধীকে জামিন দেওয়ার সুযোগ নেই।

এর আগে গত ১৪ জুলাই বিচারপতি মো. আক্তারুজ্জামানের একক হাইকোর্ট বেঞ্চ পাঁচ বছরের কারাদন্ড প্রাপ্ত কুতুব উদ্দিন আহমেদকে ছয় মাসের জামিন দেন। ১৭ জুলাই হাইকোর্টের দেওয়া জামিন স্থগিত চেয়ে আবেদন করে দুদক।

সেই আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে হাইকোর্টের দেওয়া জামিন আট সপ্তাহের জন্য স্থগিত করে আদেশ দেন চেম্বার বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের আদালত। একই সঙ্গে এ বিষয়ে আপিল বিভাগের নিয়মিত বেঞ্চে শুনানির জন্য ৮ আগস্ট দিন ঠিক করা হয়। গত ৩১ আগস্ট আসামির হাইকোর্টের দেওয়া জামিন বাতিল করেন আপিল বিভাগ।

চলতি বছরের ১৪ ফেব্রুয়ারি কুতুব উদ্দিন আহমেদকে পাঁচ বছরের কারাদন্ড দেন ঢাকার বিশেষ জজ আদালত। এরপর গত ১৫ মার্চ নি¤œ আদালতে সাজার বিরুদ্ধে কুতুবের আপিল শুনানির জন্য গ্রহণ করেন হাইকোর্ট।

কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে অভিযোগ, তিনি সরকারি কর্মকর্তা হওয়া সত্তে¡ও ভুয়া আমমোক্তারনামার মাধ্যমে গুলশানে ১০ কাঠার একটি প্লট তার শ্বশুরসহ কয়েকজনের নামে বরাদ্দ নেন। শ্বশুর ও স্বজনদের নামে গুলশানের অভিজাত এলাকায় সরকারি ১০ কাঠা জমি ক্রয় দেখিয়ে নিজেই সেখানে বসবাস করেন।

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল রাজধানীর গুলশান থানায় কুতুব উদ্দিনের বিরুদ্ধে মামলা করেন দুদকের উপ-পরিচালক মির্জা জাহিদুল আলম। ওইদিনই রাজধানীর সেগুনবাগিচা এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়। ওই মামলায় কুতুবের সঙ্গে নাজমুল ইসলাম সাঈদকেও আসামি করা হয়। একই বছরের ১২ এপ্রিল কুতুবকে বরখাস্ত করে আদেশ জারি করে ভূমি মন্ত্রণালয়।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *