এমপি আসার পর আদিবাসীদের রাস্তায় বাশের বেড়া দূর্ভোগ

বিনোদন

স্বদেশ বাণী ডেস্ক রাজশাহীর তানোর উপজেলার মুন্ডুমালা পৌর এলাকার চুনিয়াপাড়া গ্রামের পুর্বপাড়ায় আদিবাসী সমপ্রদয়ের চলাচলের একমাত্র রাস্তা কাউন্সিলর বাবলু ও মেয়র সাইদুরের নির্দেশে সন্ত্রাসী কায়দায় বাশের বেড়া দিয়ে ঘিরে চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এঘটনায় আদিবাসি পল্লীর পক্ষে গত ২৭ সেপ্টেম্বরে তারিখে স্বপন তির্কী উপজেলা নির্বাহীর নিকট সাইদুর ও তার ভাই ময়েনকে বিবাদী করে লিখিত অভিযোগ দেন। এমন ভাবেই বেড়া দেওয়া হয়েছে ভ্যান গাড়ী তো দুরে থাক একজন মানুষের চলাচলও চরম কষ্টকর। অথচ সমপ্রতি ওই আদিবাসী পল্লীতে কারাম উৎসবে স্থানীয় সংসদ যান। ওই সময় তারা মাটির রাস্তাটি পাকা করার দাবি তুলেন। এর প্রেক্ষিতে এমপি প্রতিশ্রুতি দেন এবং রাস্তার মাপজোগও করা হয়।

কিন্তু মেয়র সাইদুর ও ওই ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্যানেল মেয়র বাবলুর নির্দেশে পুরো রাস্তা বাশের বেড়া দিয়ে ঘিরে ফেলেন হত্যা মামলার আসামী এলাকার ত্রাস ময়েন ও তার ভাই সাইদুর বাহিনীরা। তারা মেয়র ও কাউন্সিলরের অত্যান্ত নিকটের বলেও দাবি আদিবাসী পল্লীর জনসাধারনের। ফলে পনের দিন ঘর বন্ধি জীবন যাপন করছেন পল্লীর লোকজন। শুধু মানুষই না তাদের ভয়ে গরু ছাগলও বাহিরে নিতে পারছেন। অথচ মেয়র ও প্যানেল মেয়র সবকিছু জেনেও অজানা।

জানা গেছে, গত মাসে উপজেলার চুনিয়াপাড়া গ্রামের পুর্বপাড়ায় আদিবাসি পল্লীতে কারাম উৎসবে আসেন সংসদ ফারুক চৌধুরী। পল্লীতে যেতে গাড়ী নিয়ে যাওয়া যাবে না। রাস্তার এমন করুন অবস্থা দেখে এবং আদিবাসী পল্লীর জনসাধারনের চলাচলের মাটির রাস্তাটি পাকা করে দেওয়ার নির্দেশ দেন এমপি। সে মোতাবেক রাস্তাটি মাপজোগ করা হয়। তারপরেই চুনিয়াপাড়া গ্রামের ময়েন ও তার ভাই আতাউর বাহিনী সন্ত্রাসী কায়দায় পুরো রাস্তা বাশের বেড়া দিয়ে ঘিরে দেন। যেখানে এমপির নির্দেশে রাস্তার মাপজোক হলো তারপর রাস্তা ঘিরে দেওয়া হয়। এতদিন রাস্তা ঘিরা হল না, আর এমপির ঘোষনার পর রাস্তা ঘিরে দেওয়া হল কেন, এমন হাজারো প্রশ্ন আদিবাসি লোকজনদের।

রোববার বিকেলে সরেজমিনে দেখা যায়, মুন্ডুমালা পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ড চুনিয়াপাড়া গ্রামের পুর্বপাড়া সরকারী কবরস্থান পার হলেই আদিবাসি পল্লী। সেখানে যুগযুগ ধরে বসবাস করছেন প্রায় অর্ধশতাধিক পরিবার। তাদের পাড়ায় যেতে হত আইল দিয়ে। কিন্তু মুন্ডুমালা পৌরসভার প্রথম মেয়র প্রয়াত শীশ মোহাম্মাদ কবরস্থান সংলগ্ন জমির মাটি কেটে যাতায়াতার রাস্তা করে দেন। এরপর আর কোন কাজ হয়নি। অথচ ওই গ্রামের আরসিসি ঢালায় রাস্তাও আছে। অবাক করার বিষয় কবরস্থান পর্যন্ত পাকা রাস্তা থাকলেও আদিবাসী পাড়ার রাস্তার কোন উন্নয়ন হয়নি।

সেখানে যাওয়া মাত্রই ছুটে আসেন আদিবাসী পল্লীর বয়োজ্যেষ্ঠ মহিলা পুরুষসহ অনেকে । এসেই বলা শুরু করেন দীর্ঘ ১৫ দিন ধরে চরম কষ্টে দিন পার করছি। রাস্তাটি কি কারনে বাশের বেড়া দিয়েছে, জানতে চাইলে তারা জানান গত মাসে কারাম উৎসবে এমপি এসে রাস্তা করার নির্দেশ দেন। সে অনুযায়ী মাপজোক করার পরেই চুনিয়াপাড়া গ্রামের মৃত গোবরার পুত্র এলাকার ত্রাস ময়েন ও তার ভাই সাইদুর বাহিনী বাশের খুটি কাবারি দিয়ে এমন ভাবে মজবুত করে ঘিরেছে কোনভাবেই চলাচল করা যাবে না এবং বেড়া ভাঙ্গা হলে আমাদের মেরে ফেলার হুমকি দেয়। এর আগে তারা কয়েকবার আমাদের মেরেছে। এজন্য আমরা ভয়ে কিছু করতে পারছিনা। গত বুধবারে এই রাস্তাসহ আরো কিছু জমিজমা নিয়ে মারামারি হয়। ময়েন উদ্দিন ও সাইদুর বাহিনী তাদের চাচাতো ভাই বয়োজ্যেষ্ঠ লোকমান আলীকে এলোপাথাড়ি বুকে কিলঘুষি মারে এবং মারাও যান। পরদিন বৃহস্পতিবার বিকেলে লোকমানের জানাযার নামাজ ও দাফন সম্পন্ন হয়। ওইদিন মেয়র সাইদুর জানাযার নামাজে আসেন। যেখানে কবর দেওয়া হয়েছে সেখান থেকেই রাস্তাটি ঘিরে দেয়। শুধু মেয়র না প্যানেল মেয়রকেও বলে কোন কিছু হয়নি। অথচ ঘটনাস্থল থেকে মেয়র সাইদুরকে ফোন দেওয়া হলে তিনি জানান, আমি এঘটনা জানিনা, রাস্তায় বেড়া দেওয়ার কোন অধিকার নেই, আমি দ্রুত ব্যবস্থা নিচ্ছি।

পল্লীর নেতারা আরো জানান, আমরা বিগত মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে নৌকার পক্ষে ছিলাম, ওই সময় থেকেই আমাদের উপর চলছে নানা ভাবে নির্যাতন। না হলে এমপি রাস্তা করার নির্দেশনা দিলেন, আর তারপরেই রাস্তায় বাশের বেড়া দেওয়া হল। আমাদের এখানে দিঘরী রাজা পরিষদ আছে, সেখানে আমরা নিয়োমিত বসি।কিন্তু বেড়া দেওয়ার পর থেকে যেতে পারছিনা।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথের সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আমি ছুটিতে বাড়িতে এসেছি, তারপরও বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখা হবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *