তানোরে আনন্দ উল্লাস বেদনায় মা দূর্গাকে বিসর্জন

রাজশাহী

সারোয়ার হোসেন, তানোর: রাজশাহীর তানোরে হিন্দু সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দূর্গা পুজার শেষ দিনে আনন্দ উৎসব ও বেদনার মাধ্যমে মা দুর্গাকে বিদায় দেওয়া হয়েছে। বুধবার বিকেল থেকেই উপজেলার ৬৯ টি পুজা মন্ডপের মধ্যে ৫৭ টির বিসর্জন কাজ সম্পন্ন হয়েছে বলে নিশ্চিত করেন থানার এসআই হাফিজুর রহমান। যে দুটি মন্দিরে বিসর্জন হয়নি সে দুটি মুন্ডুমালা পৌর এলাকার আয়ড়া ও তানোর পৌর এলাকার রায়তান বড়শো মন্দির। অবশ্য আয়ড়া মন্দির সার্বজনীন ও বড়শো মন্দিরে বৃহস্পতিবার বিসর্জন হবে।

জানা গেছে, গত শনিবার থেকে দেশব্যাপী শুরু হয় হিন্দু সনাতন ধর্মালম্বীদের বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গা পুজা। তবে প্রতি বছর যে আনন্দ উৎসব দেখা গিয়েছিল এবারে সে আনন্দে ভাটা পড়েছে। কারন নিত্যপন্যের বাজার প্রচুর চড়া। যার কারনে অনেকেই আনন্দ বন্চিত। পুজার সময় যারা ব্যবসা করত না তাদেরকেও এবার ব্যবসা করতে দেখা গেছে। গত মঙ্গলবার নবমী পুজার দিনে মন্দির পরিদর্শনে আসেন সংসদ ফারুক চৌধুরী। তানোর পৌর সদর গোল্লাপাড়া মন্দিরে মতবিনিময় সভায় হিন্দু সপ্রদয়ের লোকজন বৃষ্টিতে রাস্তার বেহাল অবস্থার বিষয়ে এমপি কে জানান পৌরসভার নাগরিক হওয়াটাই আমাদের অপরাধ। তানাহলে রাস্তার কেন এমন অবস্থা হবে। অনেক আসা নিয়ে নৌকার মেয়রকে ভোট দিয়ে জয়লাভ করানো হলো, আর তিনি শুরু করলেন এমপির বিরুদ্ধে রাজনীতি। তিনি পৌরসভার সকল মন্দিরে সিসি ক্যামেরা দিয়েছেন। সেটা না দিয়ে মন্দিরের রাস্তাগুলো সংস্কার করে দিলে এত দূর্ভোগ হত না। পুজা শুরুর পর থেকে প্রতিদিন বৃষ্টি হয়েছে। আর বৃষ্টির জন্য রাস্তা কাদা পানিতে রুপান্তর হয়ে পড়ে।

বিশেষ করে সদরের হিন্দুপাড়া পালপাড়ায় শীবতলা মন্দিরকে কেন্দ্রীয় মন্দির হিসেবে পরিচিত। কিন্ত মন্দির থেকে পুজা জুয়েলার্স পর্যন্ত রাস্তায় হাটু কাদা পানি ও পিচ্ছিল পথ। গাড়ী তো দূরে থাক পায়ে হেটে যাওয়া বিপদজনক। তবে দশমীর দিন বুধবার সকাল থেকেই মন্দিরে মন্দিরে সিদুর খেলা নাচ গানসহ উৎসবের কোন ঘাটতি ছিল না। কারন এদিন সকল থেকে রৌদ্রজ্জল আবহাওয়া বিরাজ করছিল। যার কারনে সকাল থেকে উৎসবে মেতে উঠে সকল বয়সের মানুষরা।

হিন্দুপাড়াগ্রামের সুজন জানান, ধর্মীয় উৎসব পালন করতে হবে। এটাই আমাদের বড় উৎসব। কিন্তু এবারে কিছুটা হলেও অতীতের তুলনায় কম
। আবার প্রতিদিন কোন না কোন সময় ভারি মাঝারি বৃষ্টির পানি ও রাস্তা খারাপের জন্য অনেকেই সময়মত আসতে পারেনি। কারন নবমীর দিনে দুপুর থেকেই বৃষ্টি। মাকে বিদায় দিতে মন কেদে উঠছে। কিন্তু কিছুই করার নাই ধর্মীয়রীতি মানতেই হবে।

পৌর সদর শিবতলা কেন্দ্রীয় মন্দিরের সাবেক সভাপতি প্রদীপ কুমার দাস জানান, এবারে মা দূর্গা হাতিতে চড়ে এসেছিল এবং নৌকায় গেছে। সুষ্ঠ পরিবেশে সবকিছুই শেষ হয়েছে।

বিসর্জনের আগে পৌর সদর পালপাড়া মোড়ে কথা হয় এসআই হাফিজুর রহমান ও এসআই মোতালেবের সাথে তারা জানান, সবকিছুই শান্তিপূর্ণ ভাবে শেষ হতে যাচ্ছে। শুরু থেকই বিসর্জন পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখতে ওসি স্যারের নির্দেশনা অনুযায়ী পুলিশ সব সময় টহল থেকে শুরু নানা ভাবে কাজ করেছে।

পৌর সদর হিন্দুপাড়া গ্রামের হিন্দু সপ্রদয়ের নেতা সুনিল জানান, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে ধর্মীয় উৎসব পালন করেছে। এবারে বৃষ্টি ও নিত্যপণ্যের বাজার চড়াও এবং আগামীতে আরো কত কি অপেক্ষা করছে বলা খুবই কষ্টকর। মায়ের কাছে প্রার্থনা করা হয়েছে সকল বিপদ আপদ মুছে দিয়ে সবাই যেন সৌহার্দ স¤প্রীতি নিয়ে চলা যায়। আবার এক বছরের জন্য অপেক্ষা করতে হবে কারো ভাগ্যে জুটবে আবার কারো ভাগ্যে জুটবে না। মন্দা অর্থনীতির মধ্যে সরকারী ভাবে চাল, এমপির পক্ষে অনুদান এবং পৌরসভার মন্দিরে মন্দিরে আবুল বাসার সুজন ৩০ টি করে বস্ত্র বিতরন করেছেন। সার্বিকভাবে সুষ্ঠ সুন্দর পরিবেশে শেষ হয়েছে।

থানার ওসি কামরুজ্জাম মিয়া বলেন, কয়েক স্তরের নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা ছিল মন্দিরগুলো। পর্যাপ্ত আইন শৃংখলা বাহিনীর নিয়োমিত টহল, সাদা পোশাকেও ছিলেন অনেকে। যার কারনে শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিসর্জন কাজ সম্পন্ন হওয়ায় সবাইকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন এই কর্মকর্তা।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *