তানোরে আমনের বাম্পার ফলনে কৃষকের মুখে হাসি! তবে আছে শংকা

কৃষি

তানোর প্রতিনিধি: নানা প্রতিকুলতার মাঝেও কৃষকের অক্লান্ত পরিশ্রম রক্ত ঘামের রোপা আমনের বাম্পার ফলন হচ্ছে রাজশাহীর তানোরে। অনেক শংকায় ছিল উপজেলার কৃষকরা। কারন রোপনের সময় ছিল না বৃষ্টির পানি, সবকিছুর বাড়তি দাম। কিন্তু মহান আল্লাহর অশেষ রহমতে রক্তঘামের সেই সোনালী ধান বাড়ির আঙ্গিনায়। বিঘায় ২২ থেকে ২৪ মন করে ফলন হচ্ছে, ধানের রংও সোনালী, কোন খাত নেই, বাজার দাম ভালো। ফলে শংকার মাঝেও কিছুটা হলেও হাসির ঝিলিক বিরাজ করছে কৃষকের মুখে। এদিকে শীতের আমজে ধান কাটা প্রায় শেষ, মাড়ায়, বোরো বীজ তলাসহ আলুর জমি তৈরিতে প্রচুর ব্যস্ত সময় পার করছেন প্রান্তিক কৃষকরা। আর ধান কাটার জন্য মুল ভরসা বহিরাগত শ্রমিক। মুলত এজন্যই দ্রæত কাটা শেষ হয়েছে। দিনরাত সমান তালে চলছে কৃৃষি কাজ। ধম ফেলার সময় নেই উপজেলার কৃষক শ্রমিক ও কৃষানীদের। অবশ্য ধান মাড়ায়ের জন্য বাড়ির খৈলানে বড় বড় পালা শোভা পাচ্ছে। তবে আলু ও বোরো চাষের জন্য সার পাওয়া নিয়ে শংকিত চাষীরা। চারদিকে সবকিছুর হাহাকার থাকলে সুষ্ঠ ভাবে মাঠের ধান আঙ্গিনায় আসায় তুষ্ট কৃষানীরা।

কৃষি শ্রমিক মুস্তফা জানান, আলু রোপনের জন্য নিমেষেই মাঠ থেকে ধান কাটা শেষ হয়ে গেছে। এখন চলছে মাড়ায়ের কাজ। রাতে মাড়ায় দিনে আলুর জমি তৈরি, বোরো বীজতলা তৈরিতে প্রচুর ব্যস্ত সময় পার হচ্ছে। ধানের যেমন ফলন, কালার, তেমনি দামও পাচ্ছেন কৃষকরা।

উপজেলার কামারগাঁ মাদারিপুর এলাকার কৃষক, আব্দুল, লুৎফর, আইয়ুবসহ অনেকে জানান, ধানের বাম্পার ফলন হচ্ছে। এবার খরচও দ্বিগুন হয়েছিল। এখন আলু বোরো রোপনের জন্য কৃষকরা সার পাচ্ছে না। বাড়তি দামেও মিলছে না সার। বিশেষ করে আলু রোপনের সময় পটাশ ও ডিএপি সার প্রচুর লাগে। কিন্তু দিনরাত ঘুরেও পটাশ সার মিলছে না। গত রোববার সোমবারে বলা হল বৃহস্পতিবারে পটাশ সার আসবে, কিন্তু এখন বলা হচ্ছে ২৭ নভেম্বরের আগে কোনভাবেই পটাশ সার পাওয়া যাবে না। আবার রাতের আধারে পটাশ ও ডিএপি সার পাচার হচ্ছে। যারা ১০০. ৫০০ কিংবা ১০০০ বিঘা আলুর প্রজেক্ট করবে তাদের সারের কোন সমস্যাদি নেই। শুধু সমস্য আমাদের মত প্রান্তিক কৃষকদের।

পাচন্দর ইউপির কৃষক মুন্জুর জানান, আমনের ফলন ভালো হয়েছে, দাম ভালো পেয়ে কৃষকদের মাঝে আনন্দ বিরাজ করছে। দীর্ঘ দিন ধরে আলুর চাষাবাদ করে আসছি। কিন্ত ব্যতিক্রম এবারে। ২৫ বিঘা জমিতে আলু চাষ করব। কিন্তু এখনও সার মিলছে না। কয়েক ডিলারের কাছে ধরনা দিয়েও মিলছে না। অথচ অনেকের বাড়িতে দোকানে সার মজুদ করে রেখেছে। সারের অভাবে আলু চাষ নিয়ে শংকিত।

তালন্দ এলাকার এক প্রান্তিক কৃষক জানান, ন্যায্য দামে সার কিনতে সপ্তাহ ধরে ঘুরেও মিলেনি। এজন্য আসা ছেড়ে দিয়েছি। অথচ রাত ১১ টা ১২ টা আবার ভোর ৪ টা ৫ টার দিকে সার পাচার করছে প্রতিনিয়ত। আর আমরা গেলে বলা হচ্ছে এখন না তখন এভাবে দিনের পর দিন প্রতারনা করছে।

পৌর সদর এলাকার এক আলু চাষী জানান, তানোর পাড়া গ্রামের সার ব্যবসায়ী গণির কাছে অফিস থেকেই ১০০ বস্তা পটাশ সার রাখা আছে। কৃষি অফিস থেকে অর্ডার হলে দিচ্ছে তাছাড়া দেওয়া হচ্ছে না। এসব নাকি ভিআইপি মৌসুমী আলু চাষীদের জন্য। রোপা আমন পার হয়েছে তো আলুর সার নিয়ে সিন্ডিকেটের শেষ নেই। ধানের ফলন ভালো পাওয়ায় অনেকে আলু চাষ করবেন, কিন্তু সারের অভাবে অনেকেই সেই সিদ্ধান্ত থেকে রেরিয়ে এসেছে।
বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, প্রতিটি ধানের মাঠ থেকে ধান কাটা উত্তোলন শেষ। আলুর জন্য জমি তৈরির কাজ চলছে দিনরাত। এক প্রকার প্রতিযোগিতা চলছে কে আগে চাষ করতে পারে, বা কার জমি আগে রোপন হবে।
কৃষক মফিজ, জাইদুর, মতিসহ অনেকে জানান, এত ফলন হবে কল্পনা করা যায়নি। কারন সময়মত বৃষ্টির পানি, সার না পাওয়ার কারনে ফলন নিয়ে হতাশায় ছিল। কিন্ত বাম্পার ফলন। প্রতি বিঘায় উর্ধ্বে ২৫ মন নিম্মে ২২ মন করে ফলন হচ্ছে। ধানের বাজার যেমন আশানুরূপ, তেমনি খড়ের দামও ভালো। কিন্তু সব ভালো হলেও সার নিয়ে দূর্ভিক্ষ চলছে। বিগত সময়ে এক বিঘা জমিতে যদি ৭/৮ হাজার টাকা খরচ হলেও এবারে দ্বিগুন খরচ করেও লাভ হচ্ছে।

গুবিরপাড়া গ্রামের কৃষক আব্দুল জানান, ধান কাটা মাড়া শেষ, দুবিঘা জমিতে আলু চাষ করব। এজন্য তালন্দ বাজারে লাবনী ট্রেডার্স মালিক গণেশের কাছে তিন বস্তা পটাশ নিতে চাইলে ৪ হাজার টাকা দাম নিবে। দু একশো টাকা বেশি হলে মানা যায়, কিন্তু এতো বেশি দামে কিনে আবাদ করার সামর্থ্য নেই।

মোহনপুর উপজেলার ঘাষিগ্রাম এলাকার কৃষক আক্তার জানান, আলুর জমি চাষ হয়ে গেছে। বিগত প্রায় ১৫ দিন ধরে পটাশ ও ডিএপি সার পাচ্ছিনা। যে ডিলারের কাছে যাচ্ছি সে দাম চাচ্ছে দিগুন। নিলে নাও না নিলে বিদায় হও। মনে হচ্ছে তারাই সারের নিয়ন্ত্রক। আবার অনেকে বলছি সরকারি ভাবে বরাদ্দ নেই। কিন্তু প্রতিদিন কেশরহাট থেকে তানোরে বাড়তি দামে পটাশ ডিএপি সার পাচার হচ্ছে। আমনের ভালো ফলন হলেও যে আবাদে বেশি লাভ, সেই আলু সারের জন্য চাষ করতে না পারলে কঠিন সমস্যায় পড়তে হবে। যদি সার শংকট হত তাহলে বাড়তি দামে কিভাবে পাওয়া যাচ্ছে। এসব রাঘব বোয়াল ডিলারদের চরম সিন্ডিকেট। তারা কৃষকদের ভুলভাল বুঝিয়ে খেপিয়ে দিচ্ছেন সরকারের বিরুদ্ধে। যার প্রভাব প্রতিটি ঘরে ঘরে। সরকারের সব অর্জন ¤øান করে দিয়েছে সিন্ডিকেট চক্র।
উপজেলা কৃষি অফিসার সাইফুল্লাহ আহম্মেদ জানান, এবারে উপজেলায় ২২ হাজার ৬৩৫ হেক্টর জমিতে রোপা আমন ধানের চাষ হয়েছে। হেক্টর প্রতি ৫ দশমিক ৫০ মে:টন ফলন ধরা হয়েছিল। কিন্তু এর বেশি ফলন হবে। প্রায় দেড় লক্ষ মে: টন মত ফলন হবে বলে আসা করছি। উপজেলার জনসাধারনের চাহিদা প্রায় ৫২ হাজার মে:টনের মত, উদ্বৃত্ত দ্বিগুন বেশি ফলন আসবে। যেহেতু ধান কাটা শেষ হলেও মাড়ায় চলছে। মাড়ায় শেষ হলে সঠিক হিসেব পাওয়া যাবে। ফলন ভালো হওয়ার আরেকটি কারন, সেটা হচ্ছে একাধিক মাঠ দিবস, সার্বক্ষনিক তদারকি, যেখানেই সমস্য সেখানে গিয়ে সঠিক পরামর্শ দেওয়ার কারনে রোগ বালা তেমন ছিল না। আর আবহাওয়া অনুকুলে ছিল। এটাও ফলন ভালো হওয়ার আরেকটি নিয়ামত বলেও ধারনা এই কর্মকর্তার।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *