জনগণের টাকায় ভোট করে কোটিপতি নাইটগার্ড কুলি সাইদুর 

রাজশাহী

সারোয়ার হোসেন, তানোর: তানোর মুন্ডুমালা পৌর নির্বাচনে জনগণের কাছে থেকে টাকা তুলে আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থীকে ৬৭ ভোটে ফেল করে বিজয়ী দাবি করা মেয়র সাইদুর ওরুফে কুলি সাইদুর এখন কোটিপতি বুনে গেছেন। এতে করে কুলি থেকে নাইটগার্ড হওয়া সাইদুর ওরুফে কুলি সাইদুরের হঠাৎ করে কোটিপতি বুনে যাওয়া নিয়ে এলাকাজুড়ে দেখা দিয়েছে সন্ধিহান। যেখানে ভোটের মাঠে নেমে কুলি সাইদুর প্রচার করলেন টিভিতে সাক্ষাতকার দিলেন, তিনি জনগণের কাছে থেকে সাহায্য সহযোগিতা তুলে ভোট করছেন। অথচ কুলি সাইদুর মেয়র ভোট করার আগে তার স্ত্রী হলেন রাজশাহী জেলার সর্বচ্চ করদাতা। আর কুলি সাইদুর করোনাকালে হলেন মানবতার ফেরিওয়ালা। মুন্ডুমালা বাজারে খুলেছিলেন মানবতার দেয়াল। আর সেই মানবতার ফেরিওয়ালা,সর্বচ্চ করদাতা কুলি সাইদুর আওয়ামী লীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ভোট করতে মাঠে নেমে প্রচার করলেন, তাকে মুন্ডুমালা পৌরসভার জনগণ চাঁদা তুলে ভোট করাচ্ছেন। ফলে এমন মিথ্যা অপপ্রচার পৌরবাসীর কাছে ধরাশায়ী হয়ে পড়েছে কুলি সাইদুরের। যার জন্য বর্তমানে পৌর এলাকাজুড়ে মুখে মুখে বইছে কুলি সাইদুরের অপকর্মের মুখরোচক গুঞ্জন। আর কুলি সাইদুরের এইসবের পিছনের মূল পরিকল্পনার অন্যতম গডফাদার ছিলেন, সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র গোলাম রাব্বানী।

তথ্য অনুসন্ধানে জানা গেছে, বর্তমান মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান ছিলেন এক সময় কুলি। মাথায় মালামাল বহন করাই ছিল তার কাজ। কুলিগিরি করে যে আয় হতো তা দিয়ে কোনো রকমে সংসার চলতো তার। এখনো এলাকায় সাইদুর রহমানকে ‘কুলি সাইদুর’ নামেই চেনেন সবাই। তবে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে বদলে গেছে কুলি সাইদুরের কপাল। রাতারাতি বুনে গেলেন কুলি সাইদুর থেকে কোটিপতি সাইদুর। স্ত্রীকে করলেন রাজশাহী জেলার শেষ্ঠ করদাতা নিজে হলেন পৌরসভার মেয়র। শুধু তাই নয়, তিনি মুন্ডমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদকও। দলের কার্যালয় করার নাম করে সরকারি জমি লিজ নিয়ে তাতে নিজের নামেই নির্মাণ করছেন বহুতল মার্কেট ভবন। বসবাস করেন ৪ তলা ফ্ল্যাট বাড়িতে। চলাফেরা করেন জীপগাড়িতে। ছেলেকে কিনে দিয়েছেন সুজুকি জিগজার হোন্ডা।

স্থানীয়রা জানান, সাইদুর রহমানের বাবা সাইনাল হকের জন্ম ভারতের মুর্শিদাবাদে। পাকিস্তান আমলে মুন্ডুমালা এসে শ্যালক নোমান মাস্টারের বাড়িতে আশ্রয় নেন তিনি। সাইনাল ছিলেন মুন্ডুমালা বাজারে পানের দোকানদার। সাইদুর প্রথমে মুন্ডুমালায় কুলির কাজ শুরু করেন। এক পর্যায়ে কুলির সর্দার হন। এরপর পেশা পরিবর্তন করে হন ভুটভুটির চেইন মাস্টার। ২০০১ সালে বিএনপির একনিষ্ঠ কর্মী হিসেবে মুন্ডমালা মহিলা কলেজে নাইটগার্ডের চাকরি পান। ওই সময় তানোর উপজেলা বিএনপির সভাপতি শীশ মোহাম্মদের ছত্রছায়ায় সাইদুর রাজনীতিতে সক্রিয় হয়ে ওঠেন। তবে প্রভাবশালী নেতা শীশের মৃত্যুর পর খানিকটা দমে যান তিনি। এরপর ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এলে খোল পাল্টে ফেলেন কুলি সাইদুর। তানোর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সভাপতি গোলাম রাব্বানীর হাত ধরে যুবলীগের রাজনীতি শুরু করেন। ২০১২ সালে মুন্ডুমালা পৌর যুবলীগের সভাপতির দায়িত্ব পান। সাইদুর ২০১৫ সাল থেকে মুন্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক পদে আছেন। মুন্ডুমালা পৌরসভার সাবেক মেয়র ও সাবেক উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম রাব্বানীর খুবই আস্থাভাজন কুলি সাইদুর।

এর অন্যতম কারণ হিসেবে এলাকাবাসী জানান, সাইদুরের আশ্রয়েই পাঁচন্দর ইউনিয়নের বাসিন্দা থেকে গোলাম রাব্বানী মুন্ডুমালা পৌরসভার ভোটার হয়েছিলেন। এরপর দলের সমর্থন পেয়ে মেয়র নির্বাচিত হয়েছিলেন। রাব্বানী মেয়র হওয়ার পর পরই কপাল খুলে যায় কুলি সাইদুরের। গোলাম রাব্বানী মেয়র হওয়ার পর থেকে পৌরসভার যাবতীয় সব কাজই নিয়ন্ত্রণ করতেন কুলি সাইদুর। বেনামেই করতে কনস্ট্রাকশনের কাজ। বর্তমানে মেয়র হওয়ার পরেও ঠিকাদার হয়ে ও তার ছেলেকে দিয়ে মুন্ডুমালা পৌরসভার সব কাজ করছেন কুলি সাইদুর। স¤প্রতি,মুন্ডুমালা বাজারে প্রায় কোটি টাকার বঙ্গবন্ধুর মোড়াল নির্মাণের কাজও গোপনে টেন্ডার বিজ্ঞপ্তি দিয়ে কাজ করছেন সাইদুর। তারা আরো জানান, পৌরসভায় ঠিকাদারির নামে অবৈধ কর্মকান্ডই তার আয়ের মূল উৎস।

মুন্ডুমালা পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আমির হোসেন আমিন বলেন, সাইদুরের বাপ পাকিস্তান আমলে মুন্ডুমালায় যে বাড়িতে থাকতো, সেই পরিবারের দুই ভাই রাজাকার ছিলো। সেই রাজাকারদের ভাগ্নেই হলো কুলি সাইদুর। সে এখন শূন্য থেকে কোটিপতি। কুলি সাইদুর রাব্বানীর ডান হাত হিসেবে এলাকায় সুপরিচিত। এছাড়াও কুলি সাইদুরের বিরুদ্ধে অভিযোগ রয়েছে, দলের কার্যালয় নির্মাণের কথা বলে জেলা পরিষদের কাছ থেকে দেড় শতক জমি নিজের নামে লিজ নেন কুলি সাইদুর। পরে ওই জমি সংলগ্ন সরকারি রাস্তা ও মাদ্রাসার জমি দখলে নেন কুলি সাইদুর। এরপর সেখানেই নির্মাণ করছেন বহুতল মার্কেট ভবন। এরই মধ্যে তিন তলার নির্মাণ কাজ শেষ হয়েছে। দুইতলা ও নিচতলায় দোকান ভাড়া খাচ্ছেন কুলি সাইদুর।এসব অভিযোগের বিষয়ে আওয়ামী লীগ নেতা ও বর্তমান মুন্ডুমালা পৌরসভার মেয়র সাইদুর রহমান বলেন, জেলা পরিষদের কাছ থেকে দেড় শতক জমি লিজ নিয়ে দোকান করি। এখন বিল্ডিং করেছি। লিজ নেয়া সরকারি জমিতে পাকা ভবন নির্মাণের নিয়ম নেই বলেও স্বীকার করেন তিনি। তবে মাদ্রাসার জমি দখলের অভিযোগ অস্বীকার করেন সাইদুর ওরুফে কুলি সাইদুর।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *