রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের তিনটি স্থাপনা উদ্বোধন করলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

বিশেষ সংবাদ রাজশাহী লীড

স্টাফ রিপোর্টার: রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের তিনটি স্থাপনা এবং বরিশালে নির্মিত শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারের শুভ উদ্বোধন করলেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সোমবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস ২০২২-এর উদ্বোধনী ও পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী এই ঘোষণা দেন। অনুষ্ঠানে ভার্চুয়ালি রাজশাহীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের প্রধান স্থাপনা জয় সিলিকন টাওয়ার, বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম এবং সিনেপ্লেক্স এবং বরিশালে নির্মিত শেখ কামাল আইটি ট্রেনিং এন্ড ইনকিউবেশন সেন্টারেরও উদ্বোধন ঘোষণা করেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রী। ঢাকা প্রান্তে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ রাজধানীর বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে (বিআইসিসি) এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করে। অনুষ্ঠানে ‘অনলাইন কুইজ প্রতিযোগিতা ২০২২’ এবং ‘ডিজিটাল বাংলাদেশ পুরস্কার’ বিজয়ীদের মধ্যে পুরস্কার প্রদান করা হয়। শেখ কামাল ও ডিজিটাল বাংলাদেশ বিষয়ক দুটি বইয়ের ডিজিটাল ও প্রিন্ট সংস্করণের মোড়কও উন্মোচন করেন প্রধানমন্ত্রী।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেন, তাঁর সরকার ২০৪১ সালের মধ্যে দেশকে ডিজিটাল থেকে ‘স্মার্ট বাংলাদেশে’ রূপান্তরে কাজ করে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, “আমরা আগামী ৪১’ সালে বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তুলবো। আর সেই বাংলাদেশ হবে স্মার্ট বাংলাদেশ। ডিজিটাল বাংলাদেশ থেকে স্মার্ট বাংলাদেশে আমরা চলে যাবো।”

তিনি বলেন, সরকার ‘স্মার্ট বাংলাদেশ’ গড়ার চারটি ভিত্তি সফলভাবে বাস্তবায়নে কাজ করছে। এগুলো হচ্ছে, স্মার্ট সিটিজেন, স্মার্ট ইকোনমি, স্মার্ট গভর্নমেন্ট এবং স্মার্ট সোসাইটি। আমরা এখানেই থেমে থাকিনি, ২১০০ সালের ব-দ্বীপ কেমন হবে- সে পরিকল্পনাও নিয়েছি। স্মার্ট বাংলাদেশে প্রযুক্তির মাধ্যমে সবকিছু হবে। সরকার এবং সমাজকে স্মার্ট করে গড়ে তুলতে ইতোমধ্যেই বিশাল কর্মযজ্ঞ সম্পাদিত হয়েছে। ২০৪১ সালের সৈনিক হিসেবে তোমাদের (তরুণদের) স্মার্ট নাগরিক হিসেবে প্রস্তুত হতে হবে।

রাজশাহী প্রান্তে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্কের জয় সিলিকন টাওয়ারের সিনেপ্লেক্স কক্ষে আয়োজিত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সভাপতিমÐলীর সদস্য ও রাজশাহী সিটি কর্পোরেশনের মাননীয় মেয়র এ.এইচ.এম খায়রুজ্জামান লিটন।

অনুষ্ঠান শেষে মেয়র এএইচএম খায়রুজ্জামান লিটন সাংবাদিকদের বলেন, রাজশাহীতে অন্যান্য ক্ষেত্রে কর্মসংস্থানের সুযোগ কম থাকায় মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক নির্মিত হয়েছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম, জয় সিলিকন টাওয়ার এবং সিনেপ্লেক্স এর উদ্বোধন করলেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি।

রাসিক মেয়র আরো বলেন, যে আশা নিয়ে এটি করা হয়েছে, সেটি বাস্তবায়িত হবে। রাজশাহীতে ইতোমধ্যে ফ্রিল্যান্সার ও অনলাইনে অর্থ আয়ে দক্ষ জনশক্তি তৈরি হয়েছে, যারা এই স্থাপনা পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে পারবেন, নিজের আয় করতে পারবেন। এতে করে তারা, তাদের পরিবার, রাজশাহী সর্বাপরি দেশ আর্থিকভাবে লাভবান হবে।

রাসিক মেয়র আরো বলেন, বিশ্বের অনেক দেশের আয়ের একটা বড় খাত হচ্ছে আইটি শিল্প। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অনেক আগে শুরু করেছে। পাশ্ববর্তী ভারত, শ্রীলংকা, ফিলিপাইন ইত্যাদি দেশ ফ্রিল্যান্সিং, সফটওয়ার তৈরি, গ্রাফিক্স ডিজাইন সহ অনলাইনের মাধ্যম অনেক আয় করেন। মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আইটি খাতকে যেভাবে গুরুত্ব দিচ্ছেন, তাতে দ্রæতই আমরা ভালো জায়গায় চলে যাব। রাজশাহীতে প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে, রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় আছে, রাজশাহী কলেজের মতো প্রাচীন কলেজ রয়েছে। সেখান থেকে দক্ষ জনশক্তি আমরা পাই।

রাজশাহীর প্রথম সিনেপ্লেক্স প্রসঙ্গে রাসিক মেয়র খায়রুজ্জামান লিটন বলেন, রাজশাহীতে বর্তমানে কোন সিনেমা হল নেই। এই প্রথম সিনেপ্লেক্স চালু হলো। এই সিনেপ্লেক্সে সুস্থ্য বিনোদনের জন্য তরুণ প্রজন্ম আসবে। রাজশাহীতে সিনেপ্লেক্স হলো, এটিও আমাদের একটি অর্জন।

উল্লেখ্য, ঢাকা প্রান্তে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক এবং ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি একেএম রহমতুল্লাহ এমপি স্বাগত বক্তব্য রাখেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের সিনিয়র সচিব এনএম জিয়াউল আলম। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ১৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে ডিজিটাল বাংলাদেশ দিবস-২০২২-এর থিম সং, ডিজিটাল বাংলাদেশ নিয়ে একটি অডিও ভিজ্যুয়াল ডকুমেন্টারি অনুষ্ঠানে পরিবেশিত হয়।

রাজশাহীপ্রান্তে অনুষ্ঠানে রাজশাহী-২ আসনের সংসদ সদস্য ফজলে হোসেন বাদশা, আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য বেগম আখতার জাহান, রাজশাহী বিভাগীয় কমিশনার জিএসএম জাফরউল্লাহ, জেলা প্রশাসক আব্দুল জলিল, রাজশাহী রেঞ্জের ডিআইজি আব্দুল বাতেন, রাজশাহী মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার আবু কালাম সিদ্দিক, রাজশাহী মহানগর আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা মোহাম্মদ আলী কামাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব হাই-টেক পার্ক প্রকল্প পরিচালক এ.কে.এ.এম ফজলুল হক প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।

প্রকল্প পরিচালক এ.কে.এ.এম ফজলুল হক জানান, দশতলা সিলিকন টাওয়ারে হাই-টেক পার্কের প্রশাসনিক ফ্লোরসহ রয়েছে একটি স্টার্ট-আপ ফ্লোর, ০৬ টি উদ্যোক্তা ফ্লোর এবং ৪-তলা অডিটোরিয়াম ভবন। জয় সিলিকন টাওয়ারের ২য় তলায় স্থাপিত হয়েছে বঙ্গবন্ধু ডিজিটাল মিউজিয়াম। বঙ্গবন্ধুর রাজনৈতিক জীবনের পাশাপাশি এ মিউজিয়ামে থাকছে বঙ্গবন্ধুর জন্মলগ্ন থেকে শুরু করে তাঁর সংগ্রামী জীবনের অনেকগুলো তথ্য ও উপাত্ত। এছাড়া চারতলা অডিটোরিয়াম ভবনের ৩য় তলায় রয়েছে অত্যাধুনিক সিনেপ্লেক্স; ১৭২ আসন বিশিষ্ট এ সিনেপ্লেক্সে শিক্ষা, জ্ঞান ও আদর্শভিত্তিক চলচ্চিত্র ও ডকুমেন্টারি পরিবেশন করা হবে।’

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *