স্বদেশ বাণী ডেস্ক: জামালপুর জেলার মেলান্দহ উপজেলার শ্যামপুর উচ্চ বিদ্যালয়ের সপ্তম শ্রেণির ছাত্র ইয়াছিন ইসলাম আকাশ (১৪) নামে এক কিশোরকে জোরপূর্বক খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
কিশোর ইয়াছিন ইসলাম আকাশকে প্রথমে অর্থের প্রলোভন দেখায় জহিরুল ইসলাম জহির নামে এক বৃদ্ধ। এতে সে রাজি না হওয়ায় তার আত্মীয়-স্বজনকে হত্যার হুমকি দিয়ে জোরপূর্বক বাইবেল হাতে শপথ গ্রহণ করানোর মাধ্যমে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ করতে বাধ্য করে। তার বুকে ও হাতের কব্জিতে এঁকে দেয় ক্রুশ চিহ্ন।
এ ঘটনায় ধর্মান্তরতি ওই স্কুলছাত্রের মা আনজুয়ারাবেগম জহিরুল ইসলাম জহির নামে একজনকে আসামি করে মেলন্দাহ থানায় মামলা দায়ের করলে পুলিশ জহিরকে আটক করে।
জানা যায়, ইয়াছিন ইসলাম আকাশের বাবা সাইফুল ইসলাম তার মা আনজুয়ারা বেগমকে রেখে অন্য মেয়েকে বিয়ে করে ময়মনসিংহের বিদ্যাগঞ্জে বসবাস শুরু করলে তারা অভাব-অনটন ও পারিবারিক কলহের শিকার হয়।
ইয়াছিন ইসলাম আকাশ তার নানা দিনমজুর আমজাদ হোসনের কাছে থেকে পড়াশোনা করছে। আর মা আনজুয়ারা সংসার খরচ মেটাতে ঢাকায় গার্মেন্টসে চাকরি নেয়।
এদিকে কিছুদিন ধরে জহিরুল ইসলাম জহির নামে এক ব্যক্তি আকাশের খোঁজখবর নিতে থাকে। এক পর্যায়ে জহির আকাশকে স্কুল থেকে ডেকে ডেফলা ব্রিজের কাছে নিয়ে যায়। আকাশকে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণের প্রস্তাব দেয় জহির। বিনিময়ে তাকে অর্থ-বিত্ত দেয়ার প্রলোভন দেখায়।
আকাশ খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণ না করলে তার বাবা-মা ও নানাসহ আত্মীয়-স্বজনকে হত্যার হুমকি দেয় জহির। হুমকির মুখে খ্রিষ্টান ধর্ম গ্রহণে সম্মত হয়।
জহির তাৎক্ষণিকভাবে আকাশকে জামালপুরের এক অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। সেখানে আকাশকে বাইবেল হাতে দিয়ে শপথ বাক্য পাঠ করার মাধ্যমে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত করে। তার হাতে ও বুকে ক্রুশবিদ্ধ চিহ্ন এঁকে দেয়। অতঃপর স্বজনদের হত্যার হুমকি দিয়ে এ ঘটনা বাইরে প্রকাশ করতেও নিষেধ করে জহির।
পরে আকাশের হাতে ১ লাখ টাকা ও ‘কোন পথে’ নামক একটি বইসহ ক্রুশবিদ্ধ একটি লকেট গলায় পরিয়ে বাড়িতে পাঠিয়ে দেয়।
এ ঘটনার পর থেকেই আকাশ মানসিকভাবে ভেঙে পড়ে। কয়েকদিন পর আকাশ নিজের অনুভূতি থেকেই জহিরকে টাকা ও লকেট ফের দিয়ে খ্রিষ্টান ধর্ম পাললে অস্বীকৃতি জানায়। জহিরের হুমকিতে আকাশ বিমর্ষ হয়ে যায়।
বিষয়টি তার স্কুল শিক্ষকের নজরে আসে। শিক্ষক বিমর্ষ ও মানসিকভাবে ভেঙে পড়ার কারণ জিজ্ঞাসা করলে সে এ ঘটনা প্রকাশ করে। এরপর এলাকায় এ ঘটনা প্রকাশ পেলে স্থানীয় আলেম ও ধর্মপ্রাণ মুসলমান আকাশের বাড়িতে এসে ভিড় জমায়। পরে মেলান্দহ থানা পুলিশ আকাশকে থানা হেফাজতে নিয়ে যায়।
মূল ঘটনার সঙ্গে জড়িত জহিরুল ইসলাম জহির (৬৫) জামালপুরের ইসলামপুর উপজেলার কুলকান্দি গ্রামের বাবর আলির ছেলে। আকাশের মায়ের অভিযোগের প্রেক্ষিতে মেলান্দহ থানা পুলিশ জড়িত জহিরকে আটক করে।
জহির আটক হলে জানা যায়, সে আশির দশকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নিজে খ্রিষ্টান ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়। এ ঘটনায় এলাকায় তীব্র ক্ষোভ বিরাজ করছে।
আকাশের মায়ের করা মামলায় সমর্থন ও সহযোগিতা করায় বৃদ্ধ জহিরুল ইসলাম জহিরের মেয়ে জিনাত নাহার দিপ্তি জামালপুরের নেতৃস্থানীয় আলেম-ওলামাদের বিরুদ্ধে পাল্টা মামলা করায় উত্তপ্ত পরিস্থিতি বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় গত রোববার বায়তুননুর জামে মসজিদ গেট থেকে ইত্তেফাকুল উলামা মেলান্দহ’র উদ্যোগে এক বিশাল বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। মেলান্দহ বাজারের প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ শেষে টিটিডিসি ঈদগাহ মাঠে সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়।
মেলান্দহ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. রেজাউল করিম খান জানান, আকাশের মা আনজুয়ারা বেগম বাদি হয়ে মামলা দায়ের করেছেন। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে জহিরুল ইসলাম জহিরকে মঙ্গলবার গ্রেফতার করে এবং বুধবারে আদালতে সোপর্দ করে। সূত্র: জাগো নিউজ।
স্ব.বা/শা