তানোরে বোরো চাষ নিয়ে শংকিত তানোর পৌর সদরের কৃষকরা

কৃষি
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোর পৌর সদর শেখ রাসেল মিনি স্টাডিয়াম সংলগ্ন শীতলীপাড়ার ভিতরে অবস্থিত গভীর নলকূপের তালা ভেঙ্গে দখলের দুদিনেও কোন ব্যবস্থা গ্রহন না করায় বোরো চাষ নিয়ে শংকিত হয়ে পড়েছেন কৃষকরা বলে অভিযোগ উঠেছে। গত ২৪ ডিসেম্বর বিলের জমিতে বোরো চাষের পানি সেচের একমাত্র ভরসা গভীর নলকুপটির তালা ভেঙ্গে দখল করে বকুল নামের এক বখাটে। সে কিছু সদর এলাকার কিশোরদের নিয়ে তালা ভেঙ্গে নতুন তালা লাগিয়ে জবর দখল করে। এতে করে হিন্দুপাড়া, পালপাড়া, সিন্দুকাই, গুবিরপাড়া ও কুঠিপাড়াগ্রামের কৃষকদের জীবিকা নির্বাহের বোরো চাষ নিয়ে হতাশায় পড়েছেন। কারন বিগত তিন বছর আগে বকুলকে অপারেটর নিয়োগ দিলে ফসলহানির ঘটনার জন্ম দিয়ে কৃষকদের তোপের মুখে সেচের দায়িত্ব ছেড়ে দেয়। ফলে কৃষকদের চাষাবাদ রক্ষার্থে বিগত দুবছর ধরে যে ভাবে চলছিল সে মোতাবেক পরিচালনা করার জন্য সংশ্লিষ্ট দপ্তরের জরুরী ভিত্তিতে হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। নচেৎ নানা কর্মসূচি র ঘোষনা করবেন বলেও হুশিয়ারি দেন কৃষকরা।
তবে গত ২৫ ডিসেম্বর ছুটির কারনে বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী মাহফুজুর রহমান সোমবারে তালা ভাঙ্গার বিষয়ে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বললেও রহস্যজনক কারনে আইনি পদক্ষেপ গ্রহন করবেন না বলে সাব জানিয়ে দেন। তিনি আরো জানান, সোমবার দুপুরের দিকে পরিদর্শন করেছি। গভীর নলকুপ চলছে। তালা ভাঙ্গা দেখতে পায়নি। আপনি ছুটিতে ছিলেন তালা ভাঙ্গার পরপরই আপনাকে অবহিত করা হয়েছিল জানতে চাইলে তিনি জানান, তালা ভাঙ্গার কোন প্রমান পায়নি, সন্ত্রাসী কায়দায় গভীর নলকুপের তালা ভেঙ্গেছে আপনি কি কোন ব্যবস্থা নিবেন কিনা প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, আমার ব্যবস্থা নেওয়ার এখতিয়ার নেই, ইউএনও স্যার কিভাবে সমিতি করে পরিচালন করেছে সুতরাং তিনিই ব্যবস্থা নিতে পারবেন, আমার কিছুই করনীয় নাই।
কৃষকরা জানান, গভীর নলকুপের তালা ভাঙ্গা দিবালোকের মত পরিস্কার। গভীর নলকুপ সরকারি প্রতিষ্ঠান, সেখানে জোরপূর্বক তালা ভাঙ্গা আইনত অপরাধ। কিন্তু কেন বিএমডিএ ব্যবস্থা নিবে না এটা অযৌক্তিক। বিগত দুবছর ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে চাষাবাদ করে আসছি, এটাই কি বিএমডিএর গলার কাটা না কি। তানাহলে কেন বখাটে বকুলের ব্যবস্থা নিবে না। সঠিক ভাবে সেচ না দেওয়ার কারনে অনেকের ফসলহানি ঘটেছিল।এসব নিয়ে কৃষকরা ইউএনওর কাছে অভিযোগ ও অপারেটর বকুলকে রেখে সমিতির মাধ্যমে সেচ পরিচালনা করার জন্য কৃষকদের নির্দেশ দেন। সেই মোতাবেক ১১০০ টাকা হারে বিগত দু বছর ধরে শান্তিপূর্ণ ভাবে সঠিক নিয়মে সেচ কার্যক্রম চলে আসছে। অথচ বকুল অপারেটর নিয়োগ পেয়ে ১৬০০-১৮০০ টাকা হার নিলেও সেচ সঠিক ভাবে দিত না। তার জন্য ফসল হানির কারনে সে অপারেটর থাকলেও সেচ দিতে পারবে না। অপারেটরের বেতন সে পেত। দু বছর সঠিক ভাবে চাষাবাদ হচ্ছে এটাই সহ্য হচ্ছে না। আমরা বকুল কে সেচ কাজে চায় না, সমিতির মাধ্যমে সল্প খরচে চাষাবাদ করতে চায়।
সমিতির সভাপতি কৃষক সারোয়ার জানান, কৃষকদের সুবিধার জন্য সমিতির মাধ্যমে অল্প খরচে চাষাবাদ হচ্ছে। কোন কৃষকের সেচ নিয়ে তীল পরিমান অভিযোগ নেই। অথচ বকুল অফিসকে না জানিয়ে তালা ভাঙ্গে। আমি ইউএনও বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলীকে অবহিত করি। কিন্তু বিএমডির সহকারী প্রকৌশলী সোমবার দুপুরের দিকে গভীর নলকূপ পরিদর্শন করলেও তালা ভাঙ্গার কোন ব্যবস্থা নেয় নি। কৃষকের জন্য গভীর নলকূপ, কৃষকের স্বার্থ না বুঝে, যদি ব্যক্তি স্বার্থ দেখে তাহলে তো কিছুই বলার নেই। এঘটনার সুষ্ঠ বিচার না হলে আমি সভাপতির পদে থাকব না।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পংকজ চন্দ্র দেবনাথ জানান, ডিসি অফিসে মিটিংয়ে আছি, আগামীকাল মঙ্গলবার বসা হবে বলে জানান তিনি।
বিএমডিএর নির্বাহী প্রকৌশলী আব্দুর রশিদ জানান, গভীর নলকুপের তালা ভাঙ্গা হলে অবশ্যই বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলীকে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাকে তো সরকার এমনি এমনি বেতন দিচ্ছে না। ইউএনও সাহেব যে সমিতি করে দিয়েছে তারাই সেচ পরিচালনা করবেন। বকুলের সেচ দেওয়ার কোন এখতিয়ার নেই। কৃষকদের চাষাবাদ বিগ্ন হবে এমন কাজ করা যাবে না। আমি বিষয়টি গুরুত্ব সহকারে দেখা হচ্ছে।
বিকেল সাড়ে ৩ টার দিকে বিএমডিএর সহকারী প্রকৌশলী সমিতির সভাপতি ক্যাশিয়ারসহ কৃষকদের দপ্তরে ডেকে তালা ভাঙ্গা ও মালামাল লুটের ঘটনায় লিখিত অভিযোগ দিতে বলেন।
কুঠিপাড়াগ্রামের কৃষক আমজাদ, সুলু, ইয়াদালি ও ফজলু জানান, সোমবার মুন্ডুমালা হাটে মাছ কেনা বেচা করে ২-৩ হাজার টাকা লাভ হত। শুধু গভীর নলকুপের তালা ভাঙ্গার বিষয়ে লিখিত অভিযোগ দেন থানাকে দিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বিকেল ৪ টার দিকে উত্তেজিত কৃষকরা উপজেলা চেয়ারম্যানের গাড়ী উপজেলা পরিষদের তৈয়বের চায়ের দোকানে থামিয়ে বিষয়টি সম্পর্কে অবহিত করলে আগামী কাল মঙ্গলবার ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *