মান্দায় সেলুন লাইব্রেরি

শিক্ষা

মান্দা (নওগাঁ) প্রতিনিধি: জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে যাচ্ছেন মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ। তার সেলুন লাইব্রেরি প্রত্যন্ত গ্রামে মানুষের মধ্যে গড়ে তুলছে পাঠাভ্যাস। নওগাঁ সরকারি কলেজের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগ থেকে অনার্স- মাষ্টার্স পাশ করা ছাত্র মামদুদ ব্যতিক্রমী উদ্যোগ গ্রহণ করে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকায়। কলেজছাত্র মামদুদ উপজেলার চককেশব (বালুবাজার) খোদাবক্সের মোড় নামক ১টি গ্রাম্য বাজারে ১ টি সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করছেন।

গত কয়েকবছর ধরে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিতে এ কাজ করছেন মামদুদ । মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ জেলার মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের চককেশব (বালুবাজার) মোজাম্মেল হকের ছেলে। তিনি ওই সেলুন লাইব্রেরিতে এ সপ্তাহে নানা বিষয়ের ১০টি বই সরবরাহ করেছেন বলে জানিয়েছেন।

ব্যক্তিগত আগ্রহ থেকেই বিনামূল্যে এ সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করছেন মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ। বইয়ের পরিমাণ বাড়ানোরও পরিকল্পনা রয়েছে তার। তবে আর্থিক সঙ্কটের কারণে এ মুহূর্তে তা করতে পারছেন না তিনি।

নওগাঁর মান্দা উপজেলার পরানপুর ইউনিয়নের প্রত্যন্ত গ্রাম চককেশব (বালুবাজার)। ওই গ্রামে মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ গড়ে তোলেন তমিজ উদ্দিন মাস্টার নামক গণ গ্রন্থাগার। তার গড়ে তোলা সেই গ্রন্থাগারের প্রসারিত রুপ এই সেলুন লাইব্রেরী। তিনি এ সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করেন। এর মাধ্যমে তিনি গ্রামে জ্ঞানের আলো ছড়িয়ে দিচ্ছেন। তার প্রতিষ্ঠিত এই লাইব্রেরি শিক্ষক এবং শিক্ষার্থীদের বন্ধন কেন্দ্র হয়ে গড়ে উঠেছে। এই পাঠাগারে সাধারণ মানুষও বই পড়তে আসে।

পরানপুর ইউনিয়নের বালুবাজার খোদাবক্সের মোড়ের সুমন হেয়ার ড্রেসারের মালিক সুমন চন্দ্র জানান, ‘মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ আমার সেলুনটি লাইব্রেরিতে পরিণত করেছেন। এখানে নিয়মিত মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ এর দেওয়া বই রাখা হয়। সেলুনে লাইব্রেরি করায় আমি বেশ উপকৃত হচ্ছি।’

তিনি আরও জানান, ‘আগে আমার দোকানের গ্রাহকরা ধূমপান করতেন। তবে এখন তারা ধূমপান করেন না। তারা বই পড়ে সময় ব্যয় করেন। আমি নিজেও কাজের অবসরে বই পড়ে সময় কাটাই। সেলুন লাইব্রেরিতে আরও বইয়ের চাহিদা আছে।’

সুমনের আরেক ভাই মোহন জানান, ‘সেলুন লাইব্রেরি আমার এবং গ্রাহকদের জন্য একটি ভালো উদ্যোগ। এখন আমার অবসর সময়কে সঠিক কাজে লাগাচ্ছি। সেলুনে যারা আসেন তারাও এখানে রাখা বই পড়েন।’ গত সপ্তাহে নানা বিষয়ের ১০টি বই সরবরাহ করেন ‘মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ।

নিয়ামতপুর সরকারি কলেজের শিক্ষার্থী আরিফ বিল্লাহ জানান, ‘সেলুন লাইব্রেরিতে অনেক ধরনের বই পাওয়া যায়। এতে সবাই উপকৃত হচ্ছি। সাধারণত সেলুনে গিয়ে একটু অপেক্ষা করতে হয়। অনেক সময় বিরক্তও হতে হয়। কিন্তু এখন এই অপেক্ষার সময়টুকু বই পড়ে কাজে লাগানো সম্ভব হয়।’

মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ জানান, ‘ পরানপুর ইউনিয়নের বেশকিছু এলাকায় সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করার পরিকল্পনা আছে আমার। পর্যায়ক্রমে এটি বাস্তবায়ন করব। আমি যা উপার্জন করি সেই টাকা ও কিছু বন্ধুর সহায়তায় সেলুন লাইব্রেরি পরিচালনা করি।’

তিনি জানান, ‘আমি দেখেছি মানুষ সেলুনে এসে অহেতুক সময় নষ্ট করে। আমিও একদিন সিরিয়ালের জন্য সেলুনে এক-দেড় ঘন্টা সময় অহেতুক নষ্ট করেছি। তাই ভাবলাম, সেলুনে যদি বই রাখি কেমন হয়, আবার যারা চুল কাটাতে সেলুনে এসে সিরিয়াল দিয়ে বসে থাকে;তারা যাতে অলস সময়টুকু বইপড়ে কাটাতে পারে সে চিন্তা থেকে আমি সেলুন লাইব্রেরি গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ করি। আমি মনে করি, এতে মানুষ জ্ঞানচর্চার সুযোগ পাবে।’

মামদুদুর রহমান ওরফে মামদুদ ২০১৩ সালে তমিজ উদ্দিন মাস্টার নামক গণ গ্রন্থাগারটি প্রতিষ্ঠা করেন। শুরু করেছিলেন মাত্র ৫০টি বই দিয়ে। তবে এখন সেখানে বেশকিছু বই রয়েছে। একসময় বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন ধরনের দৈনিক পত্রিকা এবং চাকরি সংক্রান্ত পত্রিকাও নিয়মিত রাখা হতো বলেও জানান তিনি। কিন্তু অর্থনৈতিক দৈন্যতার কারণে সেটি স্থগিত করা হয়েছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *