রাব্বানীর শো-ডাউন নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া

রাজশাহী

তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহী তানোর উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সভাপতি সাবেক মেয়র গোলাম রাব্বানী এমপির টিকিটের স্বপ্নে ঈদ পরবর্তী মটরসাইকেল শোডাউন দিয়েছেন। গত বছর পদপদবি হারিয়ে গোলাম রাব্বানী এক প্রকার রাজনৈতিক আত্মগোপনে ছিলেন। এমনকি তানোরের মাটি ছেড়ে শহরে বসবাস করা শুরু করেন তিনি। সভাপতির পদ হারিয়ে রাজনীতি করবেন না বলেও ঘোষনা দিয়েছিলেন রাব্বানী। সে স্থানীয় নির্বাচনে নৌকার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অবস্থান নেওয়ার কারনেই পদ হারাতে হয়। কিন্তু হঠাৎ রাব্বানীর এমন বাইক শো ডাউনে নানা প্রশ্ন দেখা দিয়েছে তৃনমুল আওয়ামীলীগের মধ্যে। কারন দলীয় কোন সভা ও জাতীয় কোন দিবস পালনে তানোরে আসেন না। আবার অর্থাভাবে শহর থেকে কোথাও যেতেন না, তাহলে কেন শোডাউন, কিসের কারনে, নাকি, দলে নতুন রুপে দ্ব›দ্ব ছড়াতে এমন শোডাউন নাকি এমন নানা প্রশ্ন বিরাজ মান।

দলীয় সুত্র মতে, বিগত ২০১৯ সালের উপজেলা নির্বাচনে রাব্বানী তার আপন ভাই শরিফুলকে নৌকার বিপক্ষে হাতুড়ি প্রতীকে নির্বাচনে দাড় করিয়ে পরাজিত হন। এরপর ২০২১ সালে মুন্ডুমালা পৌরসভা ভোটে নৌকার বিপক্ষে তার একান্ত সহচর নৈশ প্রহরী সাইদুরকে দাড় করিয়ে দেন। নৌকার পরাজয় ঘটে। এরপর সাতটি ইউপি নির্বাচনে নৌকার বিপক্ষে আপন ভাইসহ সাতজন বিদ্রোহী প্রার্থী দেন। সবাই পরাজিত হন। রাজনীতি থেকে একেবারে ছিটকে পড়েন তৎকালীন সভাপতি রাব্বানী ও সম্পাদক মামুন। গত বছরের জুলাই মাসে উপজেলা আওয়ামীলীগের সম্মেলনে নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেওয়ার দায়ে সভাপতি পদ হারান রাব্বানী ও সম্পাদকের পদ হারান মামুন। জুলাই মাস থেকে তানোরে দলীয় কোন কর্মসুচিতে দেখা যায়নি মামুন রাব্বানীকে। তবে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাজশাহীর জনসভাকে কেন্দ্র করে ২৫ জানুয়ারী রাব্বানী মামুনের নেতৃত্বে প্রচার মিছিল ও থানা মোড়ে পথসভা করেন। সভায় সাবেক জেলা সম্পাদক আসাদ সাংসদকে রাজাকারপুত্র বলার কারনে তৃনমুলের তোপের মুখে তানোর পৌর ভবন থেকে দ্রæত সটকে পড়েন তারা। এরপর থেকে রাব্বানীকে মাঝেমধ্যে ফেসবুকে আবেগী পোষ্ট দেওয়া শুরু করেন।

সিনিয়র নেতারা জানান, নিজের সভাপতির পদ ধরে রাখতে পারেনা। দলের কোন কর্মসুচিতে দেখা যায় না। পাওনাদারের ভয়ে শহরে থাকেন। আর গত বুধবার শোডাউন দিয়ে এমপি টিকিটের স্বপ্ন দেখছেন, এটা পাগলের প্রলোপ ছাড়া কিছুই না। পাওনাদারের টাকা দিতে পারছেন না আর বাইক শোডাউন দিয়ে কি বুঝাতে চাচ্ছেন। দলের চেইন অব কমান্ড না মানলে রাজনীতির হিমঘরে চলে যেতে হয় যার প্রমান রাব্বানী। এমপি হওয়ার স্বপ্নে মুন্ডুমালা পৌরসভায় ভোট করলেন না। তিনি কিভাবে এস্বপ্ন দেখেন, যেখানে নিজের পদ ধরে রাখতে পারেন না। আর তার শোডাউনে দলের সিনিয়র কোন নেতা ছিলেন না। শুধু মাত্র উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক পাপুল সরকার, তানোর পৌর যুবলীগের সভাপতি রাজিব সরকার হিরো, পাচন্দর ইউপি সম্পাদক বিজেন ও মেয়র সাইদুর ছিলেন এবং কামারগাঁ ইউপির সাবেক পরাজিত চেয়ারম্যান মসলেম উদ্দিন প্রামানিক।

ঈদের দুদিন আগে রাব্বানীর সাথে মোবাইলে কথা বলে কেমন আছেন জানতে চাইলে তিনি বলেন কেমন থাকব জমি বিক্রি করে চলছি। দু জনকে মেয়র করলাম তারা খোজও নিতে চায়না, ইমরুল তো ফোনও ধরে না, কি বলার আছে। বৃহস্পতিবার সকালের দিকে মোবাইলে যোগাযোগ করে শোডাউন বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, কেন্দ্র থেকে বলেছে, আর ঈদের শুভেচ্ছা বিনিময় করা হয়েছে। প্রায় ১২০০ বাইক নিয়ে শোডাউন দেওয়া হয়েছে, গোদাগাড়ী ইকো পার্কে দুই ট্রাক খাবার লেগেছে, তাহলে বুঝতে হবে রাব্বানীর জনপ্রিয়তা কি পরিমান। মনোনায়নের ব্যাপারে কতটা আশাবাদি জানতে চাইলে তিনি জানান, এবার মনোনায়ন পাব, তবে আমি না পেলেও এমপি পাবে না এটা নিশ্চিত।

উপজেলার শীর্ষ নেতারা জানান, নির্বাচনের আগে অনেক মৌসুমী নেতার আবির্ভাব ঘটে। তারই একটা অংশ রাব্বানী। সে তো ২০১৮ সালে এমপির টিকিট পেয়ে গেছে, এসব ফাকা আওয়াজ দিয়ে লাভ নাই। নেতাকর্মীরাও ভাওতাবাজি আওয়াজ শুনতে চায়না। এমপি ফারুক চৌধূরী রাজশাহী আওয়ামীলীগের কর্নধর, বটবৃক্ষ, যার ছায়াতলে হাজার হাজার নেতাকর্মী। ফারক চৌধূরী নিজের মনোনায়ন নিয়ে ভাবেন না, তার তদবিরে অনেকের মনোনায়ন হয়। তিনি আওয়ামীলীগ ব্র্যান্ড। হাটিহাটি পাপা করে তানোর গোদাগাড়ীর বিএনপি জামাতের আখড়া তছনছ করে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ প্রতিষ্ঠা করেছেন। তিনি কখনো নৌকার বিপক্ষে অবস্থান নেননি এটা কেন্দ্র ভালো ভাবেই জানেন। তারা বিএনপির বি টিম হয়ে কাজ করছে সেটাও নেতারা বুঝে গেছে।

স্ব.বা/বা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *