ফজলুর রহমান,নাটোর, বাগাতিপাড়া: অবশেষে সোমালিয়ান জলদস্যুদের হাতে ৩৩ দিন জিম্মির পর জাহাজ এমভি আব্দুল্লার নাবিক(ওএস) জয় মাহমুদ তার নিজ গ্রামের বাড়ি নাটোরের বাগাতিপাড়ায় ফিরেছেন। এতে করে আজ তার ও পরিবার আত্মীয়-স্বজনের মাঝে আজকেই যেন ঈদের আনন্দের মতো আনন্দে মেতে উঠেছেন পরিবার, প্রতিবেশী ও বন্ধুরা। তবে তাকে দেখেই আবারো কান্নায় ভেঙে পড়েন মা ও দাদি। বাবা মার কোলে ফিরে এসে নাবিক জয় বলেন, এ যেন দ্বিতীয় জীবন ফিরে ফেলাম।
বুধবার (১৫ মে) সকালে নাবিক জয় মাহমুদ নাটোর জেলার বাগাতিপাড়া উপজেলার ১ নম্বর পাঁকা ইউনিয়নের সালাইনগর দক্ষিণপাড়া নিজ গ্রামে ফিরেন,তিনি জিয়াউর রহমানের ও রোজিনা বেগম দম্পতির ছেলে।
এর আগে মঙ্গলবার (১৪ মে) বিকেল পৌনে ৪টার দিকে চট্টগ্রাম বন্দরের নিউমুরিং কনটেইনার টার্মিনাল-১ (এনসিটি) নম্বরে এসে পৌঁছান ২৩ নাবিক।
জয়ের মা রোজিনা বেগম বলেন,গতকাল টিভিতে দেখেছিলাম তারা দেশে ফিরেছে,ছেলের সাথে কথা হয়েছি সে বললো আগামি ১৭ তারিখে বাসায় ফিরবে তবে আজকে সকালে বাসায় এসে চমকে দিয়েছে,
ছেলে ফিরে আসায় যেন প্রাণ ফিরে এসেছে। ঈদের দিন আমাদের খুব কষ্টে কেটেছে, রান্না বান্না হলেও ছেলের শোকে মুখেভাত দিতে পারিনি,তবে আজ যেন ঈদের দিন,ছেলে আমার ফিরে এসেছে,সে গরু-খাশির মাংশের চেয়ে মুরগী বেশী পছন্দ করে তাই তো সে আসা মাত্রই মুরগী জবাই দিলাম।এছাড়াও তিনি আরো বলেন,প্রতিটি দিন ছেলের চিন্তায় কেটেছে তার। তবুও আশায় ছিলেন তিনি। ছেলে ফিরে আশায় আনন্দে মেতেছে পুরো পরিবার। ছেলে ফিরে আশায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও জাহাজ কর্তৃপক্ষকে ধন্যবাদ জানিয়েছেন।
জয়ের বাবা জিয়াউর রহমান জানান, ছেলের জিম্মির খবর শুনে মনে হয়েছিল আর ফিরবে না আমার ছেলে। তবুও অনেক আশায় ছিলাম। আল্লাহ কাছে কত দোয়া করেছি। আল্লাহপাক আমার ছেলেকে ফিরিয়ে দিয়েছেন, আমি আল্লাহর নিকট লক্ষ লক্ষ শুকরিয়া আদায় করি,সরকার,জাহাজের মালিকপক্ষ ও সকল সংবাদকর্মীদের জন্য দোয়া করি,তাদের সহযোগিতা আমার ছেলেকে ফিরিয়ে পেয়েছি।
নাবিক জয় মাহমুদ বলেন, আটকের পর কি করবো,কি হবে,কোথায় যাবো,কিছুই ভাবতে পারছিলাম না,আবার ফোন কেড়ে নিলো,আলাদা পেছনে পড়লাম,ওরা যখন যা বলতেন তখন সেটাই ক্যাপ্টেন স্যারের মাধমে আমাদের করতে হতো।
আমরা সোমালিয়াতে ৩৩ দিন আটক ছিলেন, গত কালকেই সাইন আপ করছেন। আটক হওয়ার পর আর বাড়ি ফিরতে পারবেন কিনা সেই আতঙ্কে ও কষ্টে ছিলেন। দস্যুরা সবসময় তাদের দিকে বন্দুক তাক করে রাখত। জিম্মি অবস্থায়ও সেখানে রোজা পালন করেছি ও নামাজ পড়েছি,আমাদের নামাজ রোজা দেখে তারা আমাদের উপর একটু সহনশীলতার পরিচয় দেন,ঈদের দিনও অনেক খারাপ লাগছে মোবাইল নেই পরিবারের খোঁজ খবর নিতে পারি নাই, তবে ঈদের আনন্দ উপভোগ না করলেও ঈদের নামাজ আদায় করেছি।
সবার দোয়ায় ৩৩ দিন পর তাদের ছেড়ে দেয় দস্যুরা।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে বাংলাদেশি পণ্যবাহী একটি জাহাজ এমভি আবদুল্লাহ এবং ২৩ নাবিক ও ক্রুকে আটক সোমালিয়ান জলদস্যুরা।
৩৩দিন জিম্মি থাকার পর গত ১৪ এপ্রিল ভোরে জলদস্যুদের কবল থেকে এমভি আবদুল্লাহসহ ২৩ নাবিক মুক্ত হন। এরপর জাহাজটি পৌঁছে দুবাইয়ের আল হামরিয়া বন্দরে। সেখান থেকে মিনা সাকার নামের আরেকটি বন্দরে চুনাপাথর ভর্তি করার পর চট্টগ্রাম বন্দরের উদ্দেশে রওনা দেয়। সব মিলিয়ে ৬৩ দিন পর মুক্ত নাবিকরা চট্টগ্রামে ফিরেছে।