দুর্গাপুর (রাজশাহী) প্রতিনিধি: হত্যা চেষ্টার অভিযোগে আদালতে মামলা দায়ের করে নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন রাজশাহীর দুর্গাপুর পৌর এলাকার কয়েকটি পরিবার। এমন অভিযোগ এনে সংবাদ সম্মেলন করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।
রোববার দুপুরে উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমপ্লেক্সে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও চরমপন্থী সদস্য এমদাদুল হক ওরফে এন্দা, তার ভাই রেজাউল করিম ওরফে রেজা ও রেজার ছেলে সোহাগ আলীর অত্যাচার, নিপীড়ন ও নির্যাতদের বিরুদ্ধে সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী আব্দুল লতিবের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান সাক্ষী আলমগীর হোসেন।
সংবাদ সম্মেলনে মামলার বাদী আব্দুল লতিব ছাড়াও প্রায় ১৫ থেকে ২০ জন গ্রামবাসী উপস্থিত ছিলেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, রাজশাহীর দুর্গাপুর উপজেলার চককৃষ্ণপুর গ্রামের মৃত এব্রাহিম আলীর ছেলে চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভুয়া আজিস্ট্রেট ও চরমপন্থী সমস্যা এমদাদুল হক ওরফে এন্দা আব্দুল লতিবের কাছে দীর্ঘ দিন থেকে ৫ লক্ষ টাকা চাঁদা দাবি করে আসছিলো। চাঁদার টাকা নিতে অস্বীকার করলে এবং আইনগত ব্যবস্থা নিতে চাইলে গত ২২ জুন সন্ধ্যা অনুমান সাড়ে ৭টার দিকে এমদাদুল হক ওরফে এন্দা একদল সন্ত্রাসী আব্দুল লতিবের বাড়ির সামনে রাস্তার উপরে পথরোধ করে। এমদাদুল হক ঘিরে ফেলে। এ সময় এন্দা তার হাতে থাকা চাইনিজ কুড়াল দিয়ে আব্দুল লতিবকে হত্যার উদ্দেশ্যে মাথায় কোপ দিলে বাম হাতের ৫টি আঙ্গুল কেটে যায় ও কনিষ্ঠ আঙ্গুল কেটে মাটিতে পড়ে যায়। ফলে ২০টি সেলাই দিতে হয়েছে। জিআই পাইপ ও লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে শরীরের অন্যান্য স্থানেও রক্তাক্ত জখম করা হয়। এরপর আব্দুল লতিবের পকেট থেকে এক লাখ ২০ হাজার টাকা ছিনতাই করে নেয় এন্দা ও তার বাহিনীর সদস্যরা। ঘটনার পর এলাকার লোকজন এগিয়ে আসলে সন্ত্রাসী এন্দা ও তার বাহিনীর সদস্যরা পালিয়ে যায়।
এ ঘটনায় গত ২৭ জুন রাজশাহীর বিজ্ঞ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আমলী আদালতে লিখিত অভিযোগ দাখিল করলে বিজ্ঞ আদালাত অভিযোগ আমলে নিয়ে দুর্গাপুর থানার ওসিকে এজাহার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করে আসামীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহনের আদেশ দেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে এখন পর্যন্ত আসামীদের বিরুদ্ধে পুলিশ কোনো ব্যবস্থা গ্রহন করেননি। উল্টো ঘটনার মূল আসামী এমদাদুল হক ওরফে এন্দা মামলা তুল নিতে প্রতিনিয়ত হুমকী-ধামকী দিয়ে আসছে। এমনকি মামলা তুলে না নিলে যে কোনো সময় আব্দুল লতিবকে গুম করা সহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি দিচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও অভিযোগ করা হয়, ঘটনার মুল আসামী এমদাদুল হক ওরফে এন্দা একজন চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভুয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও চরমপন্থী সদস্য। তার বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনে বিভিন্ন থানায় প্রায় দেড় ডজন মামলা রয়েছে। তার বড় ভাই রেজাউল করিম ওরফে রেজাও চিহ্নিত চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ ও চরমপন্থী সদস্য।
এদিকে এন্দার বিরুদ্ধে তাহলিমুল আমীন রাহী নামের একজন বাদী হয়ে গত বছরের ২৮ মে ভূয়া পুলিশ পরিচয় দিয়ে দস্যুতা করার অভিযোগ এনে বাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় মামলা দায়ের করেন। গত বছরের ২২ ফেব্রুয়ারি জুলেখা খাতুন নামের আরও একজন নারী এই এন্দার বিরুদ্ধে নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে একই থানায় মামলা দায়ের করেন। একই বছরের ২১ ফেব্রুয়ারি তাসমিয়া তাবাসসুম নামের অপর এক নারী নগরীর চন্দ্রিমা খানায় নারী ও শিশু নির্যাতন দমন আইনে মামলা দায়ের করেন। ২০২১ সালের ২৯ আগস্ট জীবন আলী সবুজ নামের একজন নগরীর রাজপাড়া থানায় হুমকী, মারধোর ও ছিনতাইয়ের অভিযোগ করেন এন্দার বিরুদ্ধে। এসব ছাড়ার এন্দার বিরুদ্ধে ডাকাতির মামলা রয়েছে। সাধারণ মানুষকে জিম্মি করে মোটা অঙ্কের চাঁদা নেয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।
লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করা হয়, এন্দা ও তার বড় ভাই রেজাউল এক সময় পাবনায় থাকতেন। সেখানে তারা চরমপন্থী (এমএলএম লাল পতাকা) দলের সাথে দলবদ্ধ হয়ে কাজ করতেন। ওয়ান ইলেভেনের পর তারা এলাকায় এসে একই কার্যক্রম চালাতে থাকেন। এসব কারনে স্থানীয় মানুষজন তাদের উপরে অতিষ্ঠ।
সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতারক, চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, ভূয়া ম্যাজিস্ট্রেট ও চরমপন্থী সদস্য এমদাদুল হক এন্দা ও তার ভাই সন্ত্রাসী রেজাউল করিম রেজা ও রেজার ছেলে চাঁদাবাজ সোহাগ আলীর বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের প্রতি বিনীত অনুরোধ জানিয়েছেন ভুক্তভোগী পরিবারের লোকজন।
সংবাদ সম্মেলন শেষে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুর্গাপুর থানার উপ-পরিদর্শক (এসআই) ইব্রাহিম খলিলের সাথে কথা বলা হলে তিনি জানান, আদালতের আদেশ পেয়ে ইতিমধ্যে ঘটনাস্থল পরিদর্শন করা হয়েছে। আসামীদের গ্রেপ্তারে অভিযান চালানো হচ্ছে। কিন্তু আসামীরা এলাকা ছেড়ে পালিয়ে থাকায় এখনো গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।