তানোরে ইউনিয়ন পরিষদের সাবমার্সেবুল পাম্প আ”লীগ নেতাদের কব্জায়

রাজশাহী
তানোর প্রতিনিধি: রাজশাহীর তানোরে বিভিন্ন ইউনিয়ন পরিষদের নাম করে আ”লীগ নেতাদের কব্জায় সাবমার্সেবুল পাম্প বরাদ্দ দেয়া হয়েছে  বলে একাধিক সুত্র নিশ্চিত করেন। সাবেক এমপি ফারুক চৌধুরী ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়না উপজেলা আ”লীগের নামে কোন ধরনের দরপত্র ছাড়াই সাবমার্সেবুল পাম্প দেয়া হয় বলে নিশ্চিত করেন উপজেলা জনস্বাস্থ্য দপ্তরের উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন। অথচ এসব পাম্প অসহায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর জন্য বরাদ্দ দেয়ার নিয়ম। কিন্তু সাবেক এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে অতি গোপনে এসব বরাদ্দ দেয়। ফলে সরেজমিনে তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে সাবমার্সেবুল পাম্পের ভয়াবহ অনিয়ম দূর্নীতি।
জানা গেছে, এডিবি প্রকল্প থেকে উপজেলার সাত ইউনিয়নে ২৬ টি করে সাবমার্সেবুল পাম্প বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু ইউনিয়ন পরিষদের নামে বরাদ্দ হলেও ক্ষমতার দাপটে সাবেক এমপি ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান নেতাদের নামে সব বরাদ্দ দিয়েছেন।
গত ৫ আগস্ট স্বৈরাচার শেখ হাসিনা ভারতে পালিয়ে যাওয়ার আগে উপজেলা জনস্বাস্থ্য উপসহকারী প্রকৌশলী জাকির হোসেন বলেছিলেন এমপি ও উপজেলা চেয়ারম্যান স্যার সাবমার্সেবুল পাম্প বরাদ্দ দিয়েছেন। তালিকা বা কোন তথ্য দেয়া যাবেনা। নিতে হলে তাদের কাছ থেকে নিয়ে নেন বলে দাম্ভিকতা দেখান তিনি।  গত সোমবার জনস্বাস্থ্য দপ্তরে গিয়ে তালিকা চাওয়া হলে তিনি জানান মঙ্গলবারে তালিকা দেয়া হবে। দলীয় নেতাদের নামে কিভাবে বরাদ্দ হয় জানতে চাইলে সুর পাল্টিয়ে এই কর্মকর্তা বলেন, সাতটি ইউনিয়ন পরিষদে বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। প্রতি ইউনিয়নে ২৬ টি করে সাবমার্সেবুল পাম্প বরাদ্দ দেয়া হয়। একটি সাবমার্সেবুল পাম্পের বিপরীতে প্রায় এক লাখ টাকা করে বরাদ্দ। মঙ্গলবার সকালের দিকে জনস্বাস্থ্য দপ্তরে গিয়ে তার অফিস কক্ষে তালা মারা ছিল। মোবাইল করা হলে তিনি ধরেননি। দুপুরের পরে পুনরায় গেলে তালা মারা। আবারো মোবাইল করা হলে তিনি রিসিভ করেননি। একটি ইউনিয়ন পরিষদে ২৬ টি করে সাবমার্সেবুল পাম্প বরাদ্দ হলে সাত ইউনিয়ন পরিষদে ১৮২ টি পাম্প মটারের বিপরীতে প্রায় এক কোটি ৮২ লাখ টাকা হয়। এসব পাম্প নিয়ে রমারমা বানিজ্য করেছেন নেতারা বলেও অহরহ অভিযোগ।
তালন্দ ইউনিয়ন পরিষদ ইউপির সচিব ওয়াকিল জানান, একটি পাম্প মটার বরাদ্দ পায়নি। যা বরাদ্দ হয়েছে সব উপজেলা চেয়ারম্যানের দপ্তর থেকে।
তালন্দ  ইউনিয়ন পরিষদ ইউপির চেয়ারম্যান নাজিমুদ্দিন বাবু জানান, ৫-৬ সাবমার্সেবুল পাম্প বরাদ্দ পেয়েছিলাম। তিনিও তার পছন্দ মত নেতাদের কে দিয়েছেন।
উপজেলা পরিষদের সাবেক মহিলা ভাইস চেয়ারম্যান সোনিয়া সরদারের স্বামী সরকার পতনের আগে জনস্বাস্থ্য দপ্তর থেকে মটার, পাইপ ও টেংকি নিয়ে যাচ্ছিল। সোনিয়া সরদারের সাথে মোবাইলে কথা বলা হলে তিনি জানান, এমপি আমাকে একটা পাম্প মটার দিয়েছে। আমি অন্যজনকে দিয়েছি। শুধু আমি না উপজেলা আ”লীগের সভাপতি মাইনুল ইসলাম স্বপন  সম্পাদক আবুল কালাম আজাদ প্রদীপ সরকার , দপ্তর সম্পাদক মুনসেফ, কৃষকলীগ সভাপতি প্রধান শিক্ষক  রাম কমলসহ প্রায় নেতাদের নামে বরাদ্দ দিয়েছেন।
কামারগাঁ ইউনিয়ন পরিষদ ইউপির কয়েকজন মেম্বার জানান, শুনেছি বরাদ্দ হয়েছে, কিন্তু চোখে দেখিনি। সবকিছুই বিনা ভোটের শপথ না পাওয়া চেয়ারম্যান মিন্টুর মাধ্যমে নেতাদের কে দেয়া হয়েছে। যে সব নেতাদের বাড়িতে পাম্প মটার আছে তারা টাকার বিনিময়ে তাদের পছন্দ মত ব্যক্তিকে দিয়েছেন।
সরনজাই ইউনিয়ন পরিষদ ইউপির দায়িত্ব প্রাপ্ত চেয়ারম্যান সইবুর রহমান বলেন, একটি মটারও বরাদ্দ পায়নি। কিন্তু ইউপি আ”লীগের সভাপতি সরনজাই স্কুলের প্রধান শিক্ষক  আব্দুল হান্নান সম্পাদক আতাউর ও কেরামত নামের আরেক নেতা বরাদ্দ পেয়েছে। এতিনজনের বিষয়ে জানা। বাকি নেতাদের হয় তো এভাবেই দিয়েছে।
সরকার পতনের আগে উপজেলা চেয়ারম্যান লুৎফর হায়দার রশিদ ময়নার সাথে মোবাইলে যোগাযোগ করে এবিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, নেতাদের পাম্প মটার বরাদ্দ দেয়া হয়েছে। কিন্তু তাদের বলা হয়েছে আপনারা কোন দলীয় দরিদ্র ব্যক্তিদেরকে দিবেন। তবে সরকার পতনের পর থেকে তিনি আত্মগোপনে আছেন।
উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, এসব সাবমার্সেবুল পাম্প বরাদ্দের বিষয়ে কিছুই জানা নেই। তবে এরকম ভাবে বরাদ্দ দেয়া হলে তদন্ত সাপেক্ষে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *