প্রধানমন্ত্রীর কাছে নারী এমপির বিরুদ্ধে ননদের নালিশ

জাতীয় লীড

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: পারিবারিক সম্পত্তি দখল, টাকা আত্মসাত, নানাভাবে নির্যাতনের অভিযোগ এনে সংরক্ষিত আসনের সংসদ সদস্য (এমপি) উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম (শিউলী আজাদ) এর বিরুদ্ধে প্রধানমন্ত্রীর কাছে নালিশ দিয়েছেন তারই ননদ রুবি ইয়াছমিন।

অষ্ট্রেলিয়া প্রবাসী রুবি ইয়াছমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়ার জেলা প্রশাসকের মাধ্যমে এ অভিযোগ পাঠিয়েছেন।

মঙ্গলবার ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে সংবাদ সম্মেলন করে রুবি ইয়াছমিন এসব অভিযোগের বিষয় ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সাংবাদিকদের সামনে তুলে ধরেন। এসময় তার এক বোন পাশে ছিলেন।

তবে সাংসদ শিউলী আজাদ এসব অভিযোগ পুরোপুরি অস্বীকার করেছেন। তিনি উল্টো অভিযোগ করেছেন, ‘আমার শুশ্বর ও স্বামীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়েছে। এরই অংশ হিসেবে আমাকে মেরে ফেলার ষড়যন্ত্র হিসেবেই রাজনৈতিকভাবে প্রভাবিত হয়ে এসব মিথ্যাচার করা হচ্ছে।’

এর আগে বেলা সোয়া একটার দিকে রুবি ইয়াছমিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া প্রেসক্লাবে উপস্থিত সাংবাদিকদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে যুক্ত হন। শুরুতে তিনি একটি লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের করা বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দেন। এসময় প্রধানমন্ত্রীর কাছে শিউলী আজাদের বিরুদ্ধে দেয়া নালিশ ও লিখিত বক্তব্যের কপি সাংবাদিকদের মাঝে সরবরাহ করা হয়।

শিউলির ননদ রুবি ইয়াছমিন সরাইল উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি প্রয়াত এ কে এম ইকবাল আজাদের ছোট বোন ও এমপি শিউলি আজাদের ননদ। ২০১২ সালের ২১ অক্টোবর ইকবাল আজাদ ও ১৯৭৪ সালের ১৬ ডিসেম্বর তার বাবা আওয়ামী লীগ নেতা আব্দুল খালেক রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ডের শিকার হন। একাদশ জাতীয় সংসদের সংরক্ষিত আসনের (৩১২ নং) সংসদ সদস্য হলেন শিউলী আজাদ।

সংবাদ সম্মেলনে রুবি ইয়াছমিন অভিযোগ করেন, সংসদ সদস্য হওয়ার পর শিউলি আজাদ আমাদের সহায়-সম্পদ গ্রাসে বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরের সন্ধানী ক্লিনিকের ২১টি শেয়ারের মধ্যে ইকবাল আজাদের প্রয়াত ভাই জাহাঙ্গীর আজাদের নামে তিনটি ও শিউলি আজাদের নামে তিনটি শেয়ার আছে। শিউলি আজাদ তার নামের শেয়ারসহ জাহাঙ্গীর আজাদের তিনটি শেয়ারের টাকা জোর করে প্রতি মাসে ক্লিনিকে এসে নিয়ে যাচ্ছেন।

এছাড়া ওই ক্লিনিক ও ক্লিনিক ভবনের দোকানের ভাড়াও প্রতিনিয়ত জোর করে নিয়ে যাচ্ছেন। এমনকি সন্ধানী ক্লিনিকে এসে পৈতৃক সম্পত্তির ওয়ারিশদের সকল দলিলপত্র ও ব্যবসায়ীক কাগজপত্রসহ প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে যান। জাহাঙ্গীর আজাদের শেয়ারের টাকা ও ক্লিনিক ভবনের দোকান ভাড়ার টাকা নিয়ে শিউল আজাদ ওয়ারিশদেরকে বঞ্চিত করছেন।

প্রধানমন্ত্রীর কাছে দেয়া ওই অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, জাহাঙ্গীর আজাদ জীবিত থাকাকালে সরাইলে মূল বাড়ি বন্ধক রেখে ব্যাংক থেকে ৬০ লাখ টাকা ঋণ নেন। কিন্তু শিউলি আজাদ কৌশল করে এই টাকাও তার অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফার করে নেন। এখন ওই ঋণের দায়ভার পুরো পরিবারের ওপর বর্তেছে। সরাইলের মূল বাড়িসহ সকল জমি-জমা ও ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের আয়-দায় এখন শিউলী আজাদের হাতে।

সংবাদ সম্মেলনে আরও বলা হয়, সংসদ সদস্য হওয়ার পর শিউলি আজাদ তাদের পরিবারের জন্যে আতঙ্ক হয়ে দাঁড়িয়েছেন এবং তাদের সম্পত্তি গ্রাস করতে তিনি এই ক্ষমতা কাজে লাগাচ্ছেন। সংসদ সদস্য হিসেবে শিউলি আজাদের দায়িত্বকালীন এই কয়েক মাসের কর্মকাণ্ড সাংবাদিকদের অনুসন্ধান করে দেখার অনুরোধও জানান তিনি।

তিনি আরও জানান,, আমাদের সহায়-সম্পত্তি বা পরিবারের ওপরই তিনি চড়াও হননি। গোটা এলাকার মানুষ তার কর্মকাণ্ডে ইতিমধ্যে ক্ষুব্দ হয়ে উঠেছেন। মাদক কারবারি, সেবীদের সঙ্গে তার চলাফেরার বিষয়টি ওপেন সিক্রেট। এক স্কুলছাত্রীকে বাল্যবিয়ে দেয়ার বিষয়েও তার হাত রয়েছে।

সেই সঙ্গে পারিবারিক ঐতিহ্য নষ্ট করার অভিযোগ এনে বলা হয়, ইকবাল আজাদের মা জোবেদা খাতুনের ইচ্ছে অনুযায়ী বাড়ির একটি কক্ষের সংস্কার করা হয়। এমপি হওয়ার পর শিউলী আজাদ ওই কক্ষে বিভাজন (পার্টিশন) ভেঙে ফেলেন ও তার শ্বশুর আবদুল খালেকের সংরক্ষিত সকল স্মৃতি নষ্ট করে ফেলেন। পাশাপাশি তিনি বাড়িটি নিজের বলেও দাবি করেন শিউলী আজাদ।

জীবিত তিন বোন ও এক ভাই অপমানিত হওয়ার ভয়েও বাড়িতে আসেন না বলেও রুবি ইয়াছমিনের দাবি। পাশাপাশি কেউ উচিত কথা বললে জেলে ঢুকিয়ে দেয়া হবে বলে হুমকি দেয়ার অভিযোগ আনা হয় তার বিরুদ্ধে।

এক প্রশ্নের জবাবে রুবি ইয়াছমিন সাংবাদিকদেরকে জানান, প্রয়োজনে প্রতিনিধির মাধ্যমে এসব বিষয় নিয়ে আইনিভাবে মোকাবেলা করা হবে। তবে শিউলী আজাদের প্রভাবের কারণে এখন তারা দেশে আসতে চাইছেন না।

এসব অভিযোগ প্রসঙ্গে সংসদ সদস্য শিউলি আজাদ বলেন, ‘আমার সন্তানেরা ওয়ারিশান হিসেবে সম্পদ প্রাপ্য। সে অনুযায়ী পারিবারিক বণ্টননামা হওয়া সম্পত্তিগুলোই ভোগ করছি। আমার বিরুদ্ধে যখন এসব অপ্রপচার করা তখন আমিও এ নিয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলবো। আমার বিরুদ্ধে অভিযোগে সত্যতা পেলে আপনারা রিপোর্ট করবেন এতে আমার আপত্তি নেই।’

‘আমার স্বামীকে হত্যা, আমার এমপি হওয়াসহ সব সময় আমি সাংবাদিকদেরকে পাশে পেয়েছি। আশা করছি এখনও পাবো’ বলেও জানান তিনি।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘কারো ব্যাঙ্কের টাকা অন্য কেউ কিভাবে নিয়ে যায়?’ সূত্র: বাংলাদেশ জার্নাল।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *