প্রতিমণ ধানে ২শ টাকা লোকসান হচ্ছে নওগাঁর কৃষকদের

কৃষি রাজশাহী লীড

নওগাঁ প্রতিনিধি : চলতি আমন মৌসুমের শুরুতে নওগাঁর বিভিন্ন হাট-বাজারে ধানের দাম ছিল বেশ ভালো। কিন্তু বাজারে ধানের সরবরাহ বাড়তে থাকায় পাল্টে যায় বাজারের চিত্র। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে নওগাঁর বিভিন্ন হাট-বাজারে নতুন ধানের দাম প্রতিমণে কমেছে ১০০-১৫০ টাকা পর্যন্ত। চালের দাম অপরিবর্তিত অথচ ধানের দাম কম হওয়ায় চরম হতাশ হয়ে পড়েছে নওগাঁর কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সূত্রে জানা যায়, চলতি মৌসুমে জেলায় ১ লাখ ৬৫ হাজার হেক্টর জমিতে আমনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছিল। তবে চাষ হয়েছে ১ লাখ ৯০ হাজার হেক্টর জমিতে। এ বছর ধান উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ১২ লাখ ৬৭৪ মেট্রিক টন।

নওগাঁ জেলার অন্যতম বৃহৎ ধানের বাজার মহাদেবপুর উপজেলার মাতাজিহাটের আড়তদার ও বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, বাজারটিতে প্রতিমণ মোটা জাতের গুটি স্বর্ণা, স্বর্ণা-৫ ও স্বর্ণা-৫১ (হাইব্রিড স্বর্ণা) ধান মানভেদে বিক্রি হচ্ছে ৬শ থেকে ৬১০ টাকায়। মাঝারি জাতের জিরাশাইল বিক্রি হচ্ছে ৬২০ থেকে ৬৩০ টাকায় এবং সরু জাতের শম্পা কাটারি ধান বিক্রি হচ্ছে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায়।

মান্দা উপজেলার গনেশপুর গ্রামের কৃষক কাজী আবুল কাসেম (৬০) সতীহাট বাজারে এসেছিলেন ধান বিক্রি করতে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে জবাবে তিনি বলেন, সে কথা আর বলেন না। ছয় মণ গুটি স্বর্ণার ধান বেঁচলাম ৬শ টাকা দরে। সেই টাকাও আবার বাকি। এখন সদায় বাজার-সদায় করব কী দিয়ে। এই রকম দাম হলে ধান করা কী করব?

পত্নীতলা উপজেলার জামগ্রামের কৃষক নুরুজ্জামান (৫৫) বলেন, আমাদের ১ হাজার টাকা মণের নিচে ধান বেঁচলে মণে ১৫০ থেকে ২০০ টাকা লোকসান হবে। গেল বছরও ধানের দাম কম ছিল ভেবেছিলাম এবার হয়তো ভালো দাম পাব। কিন্তু দিন যতই যাচ্ছে ধানের দাম ততই কমছে। আমাদের দুঃখের কথা কাকে বলব আর কে শুনবে।

মহাদেবপুর উপজেলার চকগৌরীহাটের মেসার্স রাসেল চাউল কলের স্বত্ত্বাধীকারী মোজাহার হোসেন বলেন, বর্তমানে বাজারে ধানের দাম পড়তি। গত দুই সপ্তাহের ব্যবধানে প্রতি মণ ধানের দাম ১শ থেকে ১২০ টাকা পর্যন্ত কমেছে। নতুন ধান ওঠার শুরুতে স্বর্ণা ধান ৭শ টাকা পর্যন্ত বিক্রি হয়েছে। কিন্তু এখন সেই ধান ৬শ থেকে ৬১০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। সরু জাতের কিছু ধানের দাম ১ হাজার ৫০ টাকা পর্যন্ত ওঠেছিল। কিন্তু সেই ধানও দাম কমতে কমতে ৯৫০ থেকে ৯৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।

জেলা চালকল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ফরহাদ হোসেন চকদার বলেন, ‘চাল কল মালিকরা চাল বিক্রি করে টাকা পেলে সেই টাকা দিয়েই আবার ধান ক্রয় করে থাকেন। কিন্তু এই মুহূর্তে মোকামে চাল বিক্রির পরিমাণ কমে গেছে। উৎপাদিত চাল বিক্রি করতে না পারায় চালকল মালিকেরা ধান কিনতে পারছেন না। এজন্য বাজারে ধানের দাম কমে গেছে। তবে সরকার কৃষকদের স্বার্থে ৬ লাখ মেট্রিক টন ধান কেনার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সেই সংগ্রহ অভিযান শুরু হলে বাজারে কিছুটা প্রভাব পড়বে এবং ধানের দাম বাড়বে।

জানা গেছে, প্রতি কেজি ২৬ টাকা দরে জেলায় ১৯ হাজার ৫৮০ মেট্রিক টন ধান কেনার কার্যক্রম এখনো শুরু হয়নি। জেলার মান্দা, নিয়ামতপুর, বদলগাছী, রানীনগর ও ধামইরহাট উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নে লটারির মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করা হলেও এখনও ধান সংগ্রহ শুরু হয়নি। এছাড়া অধিকাংশ ইউনিয়নে কৃষকদের কাছ থেকে তালিকা না পাওয়ায় লটারি করা সম্ভব হয়নি।

জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক গোলাম ফারুক পাটোয়ারি বলেন, নওগাঁ সদর উপজেলায় কৃষকের অ্যাপসের মাধ্যমে এবং অন্য ১০টি উপজেলায় লটারিরর মাধ্যমে কৃষক নির্বাচন করে ধান সংগ্রহ করা হবে। প্রশাসনের কাছ থেকে তালিকা না পাওয়ায় ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করতে কিছুটা দেরি হচ্ছে। তবে আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে জেলার সকল ইউনিয়নে ধান সংগ্রহ অভিযান শুরু করা যাবে। সূত্র: সাহেব বজার।

স্ব.বা/শা

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *