আন্তর্জাতিক ডেস্ক: সকল নাটকীয়তার অবসান ঘটিয়ে মালয়েশিয়ার প্রধানমন্ত্রী হচ্ছেন প্রভাবশালী নেতা মুহিউদ্দীন ইয়াসিন। শনিবার সকালে বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে মালয়েশিয়ার রাজা নতুন প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মুহিউদ্দীনকে বেছে নেন।
পরে রাজকীয় দফতর থেকে মুহিউদ্দীনের নাম ঘোষণা করা হয়। খবর বার্তা সংস্থা রয়টার্স ও মালয়েশিয়ার দ্য স্টার অনলাইনের।
কে হচ্ছেন মালয়েশিয়ার নতুন প্রধানমন্ত্রী এ নিয়ে গত এক সপ্তাহজুড়ে জল্পনা চলছিল।
দেশটির প্রবীণ রাজনীতিবিদ আনোয়ার ইব্রাহীম ও অন্তবর্তীকালীন প্রধানমন্ত্রী মাহাথির মোহাম্মদের মধ্যে এ নিয়ে তুমুল লড়াই চলছিল।
যদিও দুজনেই দাবি করছিলেন, দলের সমর্থন তাদের পক্ষেই রয়েছে। এক সময় প্রধানমন্ত্রীত্ব পদ থেকে মাহাথির পদত্যাগ করলে আনোয়ার ইব্রাহীমের সঙ্গে তার জোট ভেঙে যায়।
এছাড়া আনোয়ার ইব্রাহিমের স্ত্রী ও উপ প্রধানমন্ত্রী ড. ওয়ান আজিজা ওয়ান ইসমাইল দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হতে চলেছেন বলে গুঞ্জন উঠে।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত প্রধানমন্ত্রী হিসেবে পার্লামেন্ট সদস্যের রায় গেছে মুহিউদ্দীন ইয়াসিনের পক্ষে।
শনিবার বিশ্বকে অবাক করে দিয়ে মুহিউদ্দীন ইয়াসিনের নাম ঘোষণা করেন রাজা সুলতান আবদুল্লাহ আহমাদ শাহ।
কে এই মুহিউদ্দীন?
মুহিউদ্দীনের পুরো নাম – মুহিউদ্দীন বিন হাজি ইয়াসিন তান শ্রী দাতো। তিনি মালয়েশিয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ও উপ-প্রধানমন্ত্রী। তার বর্তমান বয়স ৭২ বছর।
মালয়েশিয়ার রাজনীতিতে বেশ প্রভাব বিস্তার করছেন এই রাজনীতিবিদ।
প্রায় ৯ বছর মালয়েশিয়ার দক্ষিণাঞ্চলীয় রাজ্য জোহরের পাগোহ থেকে মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন মুহিউদ্দীন। জোহর রাজ্যের একজন জনপ্রিয় ও প্রভাবশালী ধর্মীয় শিক্ষকের ছেলে তিনি।
যে কারণে ছোট বেলা থেকেই স্থানীয়ভাবে সবার দৃষ্টিতে ছিলেন মুহিউদ্দিন। রাজনীতিতে জনপ্রিয় হয়ে উঠতে বাবার প্রভাবও সাহায্য করেছে এ ক্ষেত্রে।
মালয়েশিয়ায় বেশ পরিচিত মুখ মুহিউদ্দীন। দেশটির ইউনাইটেড ইন্ডিজেনাস পার্টির প্রধান ও ক্ষমতাসীন জোট পাকাতান হারাপানের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট তিনি।
১৯৭৮ সালে পাগোহ থেকে প্রথম পার্লামেন্টের সদস্য নির্বাচিত হন মুহিউদ্দীন। এরপর থেকে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত মালয়েশিয়ার উপ-প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। ২০১৮ সালে দেওয়ান রাকায়েতের সদস্য হন।
নাজিব রাজ্জাকের দল ইউনাইটেড মালয়স ন্যাশনাল অরগানাইজেশনের ডেপুটি প্রেসিডেন্ট ছিলেন মুহিউদ্দীন। মাহাথির-রাজ্জাক জোট ন্যাশনাল বরিসনের ডেপুটি চেয়ারম্যান ছিলেন তিনি।
মুহিউদ্দীন ইয়াসিন একজন অর্থনীতি বিশেষজ্ঞও। ইউনিভার্সিটি অব মালায়া থেকে ১৯৭০ সালে অর্থনীতিতে সম্পন্ন করেন মুহিউদ্দীন।
এছাড়া মালায় ভাষা নিয়ে স্নাতক রয়েছে তার।
মাহাথির মুহাম্মদকে ফের প্রধানমন্ত্রী না করা হলেও তার উত্তরসূরিকেই এ পদ দেয়া হয়েছে বলে মন্তব্য করেছেন বিশ্লেষকরা।
কারণ মাহাথিরের প্রতিষ্ঠিত রাজনৈতিক দলেরই সভাপতি এই মুহিউদ্দিন ইয়াসিন।
২০১৬ সালে মালয়েশিয়ার জাতীয়তাবাদী রাজনৈতিক দল প্রিবুমি বেরসাতু প্রতিষ্ঠা করেন মাহাথির মুহাম্মদ। আর সে দলেরই সভাপতি মুহিউদ্দীন।
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী হিসেবে মুহিউদ্দিনের নাম এর আগেই ঘোষণা করেছিল মাহাথিরের দল মালয়েশিয়ার ইউনাইটেড আদিবাসী পার্টি (বারসাতু)।
প্রধানমন্ত্রীর পদ পেতে উমনো এবং পিএসএ নামের দুই দলের সমর্থন পেতে হয়েছে মুহিউদ্দিনকে।
জানা গেছে, মুহিউদ্দিনের জন্য উমনোর সমর্থনের সমালোচনা করেছেন খোদ মাহাথির মুহাম্মদ। রোববার শপথ নিলে মালয়েশিয়ার সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী মুহিউদ্দীন হবেন দেশের অষ্টম প্রধানমন্ত্রী।
ইউনিভার্সিটি অব নটিংহামের মালয়েশিয়ান বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ব্রিগেড ওয়েলশ এএফপিকে দেয়া এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, ৭২ বছর বয়সী মুহিউদ্দিন ইয়াসিন প্রাশাসনিকভাবে যোগ্য, কিন্তু জনগণের কোনো ম্যান্ডেট তার পক্ষে নেই। সূত্র: যুগান্তর।
স্ব.বা/শা