স্বদেশবাণী ডেস্ক: পাবনার ঈশ্বরদী পৌরশহরের মশুরিয়াপাড়া এলাকার চাঞ্চল্যকর গৃহবধূ মুক্তি খাতুন রিতা (২৭) হত্যার রহস্য উদঘাটন হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে ঘটনার ৪৮ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতার তিন আসামি আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছে।
জবানবন্দি গ্রহণ শেষে আদালতের নির্দেশে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
শনিবার রাতে পাবনার পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
গ্রেফতাররা হলেন- নাটোরের বড়ইগ্রাম উপজেলার চরগোবিন্দপুর গ্রামের মাহাবুল সরকারের ছেলে শরীফ সরকার (২১), একই গ্রামের সাব্বির আহমেদ (২৭) ও এক কিশোর (১৭)।
গত ২৯ এপ্রিল দুপুরে চাকরির অর্থ লেনদেনের ঘটনায় বাড়িতে ঢুকে গৃহবধূ মুক্তি খাতুন রিতাকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। তার স্বামীর নাম বায়োজিদ সারোয়ারের। বায়োজিদ রূপপুর পারমাণবিক প্রকল্পের পাওয়ার প্ল্যান্টে চাকরি করেন।
পুলিশ সুপার মহিবুল ইসলাম খান জানান, নিহতের শাশুড়ির দেয়া অস্পষ্ট তথ্য এবং প্রযুক্তির সহায়তায় অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (অপরাধ) মাসুদ আলমের নেতৃত্বে ওইদিন রাতেই নাটোরের বড়াইগ্রাম থানার চরগোবিন্দপুর গ্রামের শরীফ ও হেলালকে গ্রেফতার করে পুলিশ।
তাদের জিজ্ঞাসাবাদ ও প্রাথমিক তদন্তে হত্যাকাণ্ডে চারজনের সম্পৃক্ততার বিষয়টি পুলিশ নিশ্চিত হয়। এদের মধ্যে শরীফ ও এক কিশোর (১৭) শুক্রবার সন্ধ্যায় আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেয়।
শনিবার আসামি সাব্বির স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। আরেক আসামিকে গ্রেফতারে পুলিশের তৎপরতা চলছে। পাশাপাশি এই হত্যাকাণ্ডে অন্য কারও ইন্ধন বা প্ররোচনা আছে কিনা এসব বিষয়েও তদন্ত চলছে।
তিনি আরও জানান, রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পে চাকরি দেওয়ার জন্য টাকা লেনদেনের ঘটনাকে কেন্দ্র করেই এ হত্যাকাণ্ড হয়েছে বলে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে প্রাথমিকভাবে জানা গেছে।
সাব্বিরের দেখানো মতে হত্যাকাণ্ডে ব্যবহৃত ছুরি উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সময় পরিহিত আসামিদের কাপড়ও জব্দ করা হয়েছে।
পুলিশ সুপার জানান, নিহত গৃহবধূ রিতার স্বামী বায়োজিদ সারোয়ার রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ প্রকল্পের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বাংলা পাওয়ার কোম্পানিতে চাকরি করেন। তিনি অর্থের বিনিময়ে মানুষকে চাকরি দিতেন। গৃহবধূ রিতার মাধ্যমে চাকরিপ্রার্থী যোগাড় ও টাকা লেনদেন হতো।
বায়োজিদের নানাবাড়ি এলাকার সাব্বিরকে ৪০-৪৫ হাজার টাকা বেতনে চাকরি দেওয়ার জন্য বেশ কিছু টাকা নেওয়া হয়।
এছাড়াও ওই এলাকার আরও কয়েকজন চাকরির জন্য টাকা দেন। কিন্তু সাব্বিরকে উল্লেখিত বেতনের চাকরি না দিয়ে ১২-১৫ হাজার টাকা বেতনের চাকরি দেওয়া হয়।
এতে সাব্বির ক্ষুব্ধ হয়ে টাকা ফেরত চান। এ নিয়ে বেশ কয়েকদিন ধরে তাদের মধ্যে ঝামেলা চলছিল। এই অবস্থায় গত ২৯ এপ্রিল সাব্বির আরও কয়েকজন চাকরিপ্রার্থী নিয়ে বায়োজিদের বাড়িতে হাজির হয়ে গৃহবধূ রিতাকে গলা কেটে হত্যা করেন।
এ সময় রিতার শাশুড়িকেও শ্বাসরোধ করে হত্যার চেষ্টা করা হয়।