স্বদেশ বাণী ডেস্ক: দীর্ঘ প্রচেষ্টার পর শেয়ারবাজারে সরকারি সিকিউরিটিজ বা ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়েছে। বেশ ঢাক-ঢোল পিটিয়ে ২৫০টি ট্রেজারি বন্ড শেয়ারবাজারে আনা হলেও তা লেনদেনে কোনো প্রভাবই রাখতে পারছে না। দিনের পর দিন ট্রেজারি বন্ডের কোনো লেনদেনেই হচ্ছে না।
চলতি মাসের ১০ তারিখ থেকে শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু হয়। তবে প্রথম দিন একটি বন্ডও লেনদেন হয়নি। অবশ্য দ্বিতীয় দিনে এসে লেনদেনের খরা কাটে। ১১ অক্টোবর প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) দুটি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন হয়। সেই লেনদেনের পরিমাণ খুব একটা বেশি না। একটি বন্ডের এক হাজার ও অন্য একটি বন্ডের ১০ হাজার ইউনিট লেনদেন হয়।
ডিএসইর সংশ্লিষ্ট সূত্র জানিয়েছে, ১১ অক্টোবরের পর শেয়ারবাজারে আরও তিনদিন লেনদেন হয়েছে। তবে এই তিনদিনে একটি বন্ডও লেনদেন হয়নি। অর্থাৎ শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরুর পর এক এক করে পাঁচ কার্যদিবস গেলেও মাত্র এক কার্যদিবসে দুটি ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন হয়েছে।
এর মধ্যে ৭৯ টাকা ৯২ পয়সা করে একটি ট্রেজারি বন্ডের ১০ হাজার ইউনিট লেনদেন হয়েছে। টাকার অঙ্কে ট্রেজারি বন্ডটি লেনদেন হয়েছে ৭ লাখ ৯৯ হাজার ২০০ টাকা। ১৫ বছর মেয়াদি এই ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ শেষ হবে ২০৩৬ সালের ২৮ জুলাই।
লেনদেন হওয়া আর একটি ট্রেজারি বন্ডের মেয়াদ ৫ বছর। বন্ডটির মেয়াদ শেষ হবে ২০২৫ সালের ১৫ জানুয়ারি। ১০৫ টাকা ১৯ পয়সা করে এই বন্ডটির এক হাজার ইউনিট লেনদেন হয়েছে। অর্থাৎ টাকার অঙ্কে বন্ডটির লেনদেন হয়েছে এক লাখ ৫ হাজার ১৯০ টাকা।
লেনদেনে ভূমিকা রাখতে না পারলেও বাজার মূলধন বাড়াতে এই ট্রেজারি বন্ডগুলো বড় ধরনের ভূমিকা রেখেছে। শেয়ারবাজারে বন্ডগুলো আসার সঙ্গে সঙ্গে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের বাজার মূলধন আড়াই লাখ কোটি টাকার ওপরে বেড়ে গেছে। ফলে ৫ লাখ টাকার ঘর থেকে এক লাফে ডিএসইর বাজার মূলধন সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার ওপরে চলে গেছে।
শেয়ারবাজারের লেনদেন ট্রেজারি বন্ড খুব একটা ভূমিকা রাখতে না পারলেও লেনদেন শুরুর আগে ধারণা করা হচ্ছিল ট্রেজারি বন্ডের কারণে শেয়ারবাজারের লেনদেন বহুগুণ বেড়ে যাবে। এমনকি পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) দায়িত্বশীল ব্যক্তিরাও ট্রেজারি বন্ডের প্রভাবে শেয়ারবাজারে লেনদেন বাড়ার ইঙ্গিত দিয়েছিলেন।
শেয়ারবাজারে আসার পর কেন ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন হচ্ছে না, এমন প্রশ্নের জবাবে বিএসইসির বিএসইসি নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম জাগো নিউজকে বলেন, এখানে সচেতনতার একটু অভাব আছে। ট্রেজারি বন্ডগুলো বিপি আইডি থেকে বিও আইডিতে আনতে হবে। সচেতনতা সৃষ্টির জন্য সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আমরা শিগগির একটি ওয়ার্কশপ করবো। সেখানে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষকে আমন্ত্রণ জানানো হবে।
তিনি বলেন, এখন ট্রেজারি বন্ডের যে লেনদেন হচ্ছে তা পরীক্ষামূলক। কী কী সমস্যা হচ্ছে তা চিহ্নিত করে আমরা মূল লেনদেন উদ্বোধন করবো। সমস্যা চিহ্নিত ও সমাধানের জন্য কাজ চলছে। ট্রেজারি বন্ডের ডিমান্ড সাইড বাড়াতে হবে। এ লক্ষ্যে কাজ চলছে। আমরা আশা করি, সব সমস্যার সমাধান হবে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জর চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান জাগো নিউজকে বলেন, শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ডের ক্রেতা আছে। কিন্তু বিক্রির ক্ষেত্রে বিক্রেতাদের বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ক্লিয়ারেন্স নিতে হয়ে। আমি যতটুকু বুঝি ট্রেজারি বন্ড লেনদেন না হওয়ার জন্য এটি অন্যতম কারণ। আমি মনে করি, পলিসিগত কোনো সমস্যা থাকলে বিএসইসির উচিত বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে বসে সমস্যার সমাধান করা।
ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ব্যাপক উৎসাহ-উদ্দীপনা নিয়ে শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন শুরু করা হয়েছে। কিন্তু বিনিয়োগকারীদের মধ্যে এই ট্রেজারি বন্ডের বিষয়ে যে ধরনের সচেতনতা সৃষ্টি করার দরকার ছিল তা করা হয়নি। যে কারণে শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন হচ্ছে না। অন্যভাবে বলা যায় শেয়ারবাজারে ট্রেজারি বন্ড ফ্লপ হয়েছে।
তিনি বলেন, ট্রেজারি বন্ডে বিনিয়োগ কম ঝুঁকিপূর্ণ। শেয়ারবাজারে যেসব ট্রেজারি বন্ড নিয়ে আসা হয়েছে তার অভিহিত মূল্য ১০০ টাকা। এই মূল্যের ওপর ভিত্তি করেই বিনিয়োগকারীদের মুনাফা দেওয়া হবে। সে ক্ষেত্রে দেখা যাবে সঞ্চয়পত্রের থেকে ট্রেজারি বন্ড বেশি মুনাফা দিচ্ছে। কিন্তু এসব বিষয় সম্পর্কে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কোনো ধারণা নেই। ট্রেজারি বন্ড লেনদেন না হওয়ার এটি একটি অন্যতম করণ।
পুঁজিবাজারে পণ্য বৈচিত্র্য বাড়ানো ও বন্ড বাজারের উন্নয়নের লক্ষ্যে স্টক এক্সচেঞ্জে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করা হয়েছে। আগে এসব ট্রেজারি বন্ড কিনতে ব্যাংকে যেতে হতো। কিন্তু শেয়ারবাজারে আসার কারণে এখন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ঘরে বসে এসব বন্ডে বিনিয়োগ করতে পারবেন।
স্ব.বা/রু