১০ মাস ধরে ক্লাসে অনুপস্থিত মাদ্রাসাশিক্ষক  তরিকুল ইসলাম রতন, বরগুনা  

শিক্ষা

স্বদেশ বাণী ডেস্ক: বরগুনার তালতলী উপজেলার মাদ্রাসার এক সহকারী শিক্ষক দীর্ঘ ১০ মাস অনুপস্থিত থেকেও রীতিমতো বেতনভাতা তুলেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।

তালতলী উপজেলার দক্ষিণ ঝাড়াখালী সালেহিয়া দাখিল মাদ্রাসার শিক্ষক মানসুরুল আলমের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ। তিনি অসুস্থতাজনিত কারণসহ নানা অজুহাতে দীর্ঘ ১০ মাস ওই মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আ. জব্বারের যোগসাজশে অনুপস্থিত থেকেও নিয়মিত সরকারি বেতনভাতা তুলছেন।

মাদ্রাসা সূত্র জানা যায়, সহকারী মৌলভী মানসুরুল আলম চলতি বছরের জানুয়ারি মাস থেকে মাদ্রাসায় ক্লাস করেননি। ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আ. জব্বার শিক্ষক হাজিরা খাতা গোপনে বাড়িতে পাঠিয়ে তার স্বাক্ষর নেন। এভাবে তিনি বাড়িতে বসে মাসিক বেতনভাতার সরকারি অংশ তোলার স্বাক্ষর করে টাকা উত্তোলন করেছেন।

অভিযুক্ত এ শিক্ষকের মাসিক বেতন ২০ হাজার টাকা। ১০ মাসে তিনি প্রায় দুই লাখ টাকা উত্তোলন করেছেন।

সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, গত সেপ্টেম্বরের ২২ তারিখ বিগত দিনের সম্পূর্ণ হাজিরা খাতা খালি রয়েছে। সাংবাদিকদের উপস্থিতি টের পেয়ে তিনি তড়িঘড়ি করে একটি মোটরসাইকেলযোগে মাদ্রাসায় উপস্থিত হন। তার মাদ্রাসায় পৌঁছানোর আগেই সাংবাদিকরা হাজিরা খাতার ছবি তুলে নেন।

স্থানীয় এক জনপ্রতিনিধি জানান, ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আ. জব্বার ও শিক্ষক মানসুরুল আলমের কর্মকাণ্ডে তারা ক্ষুব্ধ ও বিস্মিত।

এ বিষয়ে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক বেশ কয়েকজন সহকারী শিক্ষক জানান, চলতি বছরের ১৫ জুন তালতলী উপজেলায় ইউপি চেয়ারম্যান নির্বাচনে ভোটগ্রহণ হয়। সেই নির্বাচনে তিনি কড়াইবাড়িয়া ইউনিয়নে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। নিবার্চন চলাকালে মাদ্রাসা থেকে ছুটি নেওয়ার কথা থাকলেও তিনি কোনো ধরনের ছুটি না নিয়েই নিবার্চন পরিচালনা করেন।

মে ও জুন মাসে প্রায় এক মাস নির্বাচনি প্রচারের কাজে তিনি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকেন। পরে নিবার্চন চলাকালীন মাসেও তিনি ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আ. জব্বারের সহযোগিতায় হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করে বেতনভাতা তুলেন। এর পর গত জুলাই মাসে তিনি মাদ্রাসায় না গিয়ে মেডিকেল সার্টিফিকেট দেখিয়ে বেতনভাতা তোলেন।

মেডিকেল সার্টিফিকেটের মেয়াদ শেষ হলে নিয়মানুযায়ী পরবর্তী তিন মাস মূল বেতনের অর্ধেক পাবেন। সে অনুযায়ী আগস্ট মাসে তিনি অর্ধেক বিল নেন। গত সেপ্টেম্বর পুরো মাস তিনি মাদ্রাসায় অনুপস্থিত থাকেন৷ যার প্রমাণ হাজিরা খাতায় তার স্বাক্ষর নেই।
তবে ওই মাসের শেষে বিল করানোর জন্য পার্শ্ববর্তী পটুয়াখালী জেলার কলাপাড়া উপজেলার বেসরকারি একটি ক্লিনিক থেকে হাতে লিখে একটি মেডিকেল সার্টিফিকেট এনে বিল করে বেতন তোলেন। চলতি মাসেও তিনি অনুপস্থিত রয়েছেন বলে জানা গেছে।

স্থানীয় এক অভিভাবক বলেন, সহকারী শিক্ষক মানসুরুল আলম চলতি বছরের কোনো মাসে তিনি মাদ্রাসায় আসেননি। তিনি মাদ্রাসায় না এসেও প্রতি মাসের বেতন তুলছেন। আমার মেয়ে ওই মাদ্রাসায় পড়ালেখা করে। আমি তাকে প্রায় এক বছর ধরে মাদ্রাসায় আসতে দেখিনি। আমার মনে হয়, মাদ্রাসার সুপারের সঙ্গে তার কোনো গোপন সখ্য আছে। সখ্য না থাকলে কীভাবে তিনি বেতন তোলেন।

এ বিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী শিক্ষক মানসুরুল আলমের কাছে জানতে চাইলে তিনি যুগান্তরকে জানান, আমার ১২-১৩টা স্বাক্ষর ছিল না। আপনারা আমাকে মানবিক দৃষ্টিতে দেখেন। আমাদের মাদ্রাসার দলাদলির কারণে এগুলো হচ্ছে। আপনারা সাংবাদিক, যাই করেন, আমার কোনো ক্ষতি কইরেন না। আমি অনেক অসুস্থ। এসব বলে তিনি ফোন কেটে দেন।

ঝাড়াখালী মাদ্রাসার ভারপ্রাপ্ত সুপার মাওলানা আব্দুর জব্বারের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, মাদ্রাসার ভাবমূর্তি নষ্ট করার জন্য একটি কুচক্রী মহল এসব করাচ্ছে। তা ছাড়া আমাদের এই মাদ্রাসায় অনেক দিন সুপার না থাকায় শিক্ষকদের মধ্যে অনেক দ্বন্দ্ব চলছে। এসব মিথ্যা ও অসত্য বলেই তিনি ফোন কেটে দেন।

তালতলী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার লুৎফুল কবির মো. কামরুজ্জামান যুগান্তরকে বলেন, এ বিষয়ে আমি জেনেছি, কিন্তু আমি ছুটিতে থাকায় ওই মাদ্রাসায় যেতে পারিনি। রোববার আমি অফিস করব। পরে তদন্ত করে অভিযুক্তের বিষয়ে পরবর্তী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

এ বিষয়ে তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এসএম সাদিক তানভীর যুগান্তরকে বলেন, আমি এখনো এ ব্যাপারে কোনো অভিযোগ পাইনি। তবে এক সাংবাদিকের মাধ্যমে শুনেছি, যদি কোনো শিক্ষক অনুপস্থিত থেকে বেতনভাতা উত্তোলন করেন তা হলে তার বিরুদ্ধে সঠিক তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

স্ব.বা/রু

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *