অনেকেই কোরবানি দিতে পারছেন না, পশু বিক্রিতে ভাটা

রাজশাহী লীড

আব্দুল হামিদ মিঞা,বাঘা (রাজশাহী): ষোল মাস আগে ১লাখ ৪৭ হাজার টাকা দিয়ে ফিজিয়াম জাতের একটি গরু কিনে লালন পালন করছিলেন উপজেলার আড়াপাড়া গ্রামের আলিম উদ্দীন। প্রতিমাসে গরুর পেছনে তার খরচ হয়েছে ১০থেকে ১২ হাজার টাকা। এতদিন লালন পালন করা গরুটির মাংস ধরা হয়েছে প্রায় ১৩ মণ। সেই গরুটি কোরবানির ঈদে বিক্রি করে লাভবান হবেন বলে এমনটিই আশা ছিল তার। কিন্তু কোরবানির ঈদের শেষ সময়ে এসেও গরুর ক্রেতা না পেয়ে হতাশ তিনি।

শনিবার(১৫-০৬-২০২৪) কথা হলে তিনি জানান, তার চাওয়া দাম সাড়ে ৪লাখ টাকা। তবে দাম কম বেশি যাই হোক,বড় গরুর ক্রেতাই পাচ্ছেন না। শহরের হাটে নিয়ে বিক্রি হবে এমন ভরসাও করতে পারছেন না। তার মতো অনেকেই কোরবানির ঈদের শেষ সময়ে এসেও ক্রেতার অভাবে কোরবানির পশু বিক্রি করতে পারছেননা।
জানা যায়, প্রতি বছর কোরবানির ঈদ সামনে রেখে আশায় বুক বাঁধেন খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা। কিন্তু এবার বাঘা উপজেলার পশুর হাটগুলো জমেনি। বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের আনাগোনাও এবার কম। পাশাপাশি দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির চাপে বেসামাল সাধারণ মানুষের সাধ থাকলেও কোরবানির পশু কেনার সামর্থ্য নেই। এ অবস্থায় পশুর হাট জমজমাট হতে পারেনি।
উপজেলা প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তরের তথ্যমতে, কোরবানির জন্য বাঘা উপজেলায় এ বছর ৩হাজার গবাদি পশুসহ কোরবানিযোগ্য ৪৫(পয়তাল্লিশ) হাজারের বেশি পশু প্রস্তুত করেছেন খামারি ও গৃহস্থরা। কোরবানির পশুর চাহিদা রয়েছে প্রায় ৪০(চল্লিশ) হাজার।

বাঘার পশুর হাটগুলোতে কেনাবেচা নেই বললেই চলে। বিশেষ করে কোরবানির গরু বিক্রিতে ভাটা পড়েছে। খামারি ও গৃহস্থরা গত বছরের চেয়ে এবার গরুর দাম বেশি হওয়ার আশা করছেন। অপরদিকে ক্রেতারা মনে করছেন হাটে গরু বেশি ওঠায় দাম কিছুটা কমতে পারে।
জানা যায়, উপজেলায় পশুর হাটের সংখ্যা দুটি। এর মধ্যে বাঘা পৌর এলাকায় ১টি,আড়ানি পৌর এলাকায় ১টি। এসব হাটে স্বাভাবিকের চেয়ে পশু আমদানি কিছুটা বেশি লক্ষ্য করা গেছে। খামারিরা আর্থিক ও পশুর খাদ্য সংকটে দ্রুত পশুগুলো বিক্রি করতে হাটে তুলছেন। ওইসব হাটে কোরবানির ঈদ ঘিরে গরুর আমদানি বেড়েছে। তবে বিগত বছরগুলোতে কোরবানির ঈদের মাসখানেক আগেই উপজেলার হাটগুলোতে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে ব্যবসায়ীরা আসতেন। কিন্তু এবারে তা চোখে পড়েনি।

কারণ হিসেবে জানা গেছে, কৃষি নির্ভর বাঘা উপজেলায় এবার আমের উৎপাদন নেই বললেই চলে। পাট সহ অন্য ফসলেরও সময় না। যা বিক্রি করে কোরবানির পশু কিনবেন। এছাড়াও আগেভাগে যারা কিছু কম দামে কোরবানির পশু কিনতে চান,তারাও এবার পশু খাদ্যের দাম বেশি হওয়ার কারণে আগে থেকে পশু কিনে সংকটে পড়তে চাননি ক্রেতারা। সবমিলে ক্রেতা না থাকায় দাম ও বিক্রি নিয়ে হতাশ খামারি ও পশু ব্যবসায়ীরা। বাজুবাঘা গ্রামের কৃষক মহসিন আলী জানান,আম বিক্রি করে সংসারের প্রায় খরচ চালান। এবার কোরবানি পশু কেনার ইচ্চাও করেছিলেন। কিন্তু তার বাগানের একটি গাছেও আম ধরেনি। নিত্যপণ্যের বাজারে আগুন। এখন সংসার চালানোই কঠিন হচ্ছে। একই সমস্যায় তার মতো অনেকেই এবার কোরবানি দিতে পারছেননা।

গত শুক্রবার দুটি গরু বিক্রি করতে চন্ডিপুর পশুর হাটে নিয়ে যান কৃষক আলী হুসেন। তিনি জানান, সংসারের খরচ জোগাতে গরু বিক্রি না করে উপায় নেই। ক্রেতার অভাবে দাম ও বিক্রি নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন।
কথা হয় সাজেদুল হক, হোসেন আলীসহ কয়েকজন ক্ষুদ্র খামারির সঙ্গে। তাঁরা জানান, আগের দিন আর নেই। গোখাদ্য কেনা ও পশুর রোগ প্রতিরোধে প্রচুর টাকা ব্যয় করতে হচ্ছে। তা ছাড়া বাইরে থেকে গরু ব্যবসায়ীদেরও আনাগোনা নেই। ঈদের আগ পর্যন্ত গরুর দাম কেমন যাবে, তা নিয়ে শঙ্কায় রয়েছেন তাঁরা।

হাট ইজারাদার মামুন হোসেন জানান, অন্যান্য বছর ১০ দিন আগে থেকেই ব্যবসায়ীদের আনাগোনায় পশুর হাট জমজমাট হয়ে ওঠতো। গত বছর এই সময় হাটে ৩০০/৪০০ গরু বিক্রি হয়েছিল। এবার ১০০ গরুও বিক্রি হয়নি।

এ ব্যাপারে বাঘা উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা ডা. আমিনুল ইসরাম জানান, এবার কোরবানির পশুর সংকট নেই। চাহিদার চেয়ে উদ্বৃত্ত পশু রয়েছে। এই অঞ্চলের চাহিদা মিটিয়ে দেশের অন্যান্য স্থানেও পাঠানো যাবে।

Spread the love

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *